• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু বিকাশে বাধা শ্রম আর নির্যাতন


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২০, ২০১৮, ০৮:০৪ পিএম
শিশু বিকাশে বাধা শ্রম আর নির্যাতন

ঢাকা : ১৬ কোটি ১৪ লাখ জনসংখ্যার বাংলাদেশে শূন্য থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুর সংখ্যা ৫ কোটি ২৩ লাখ। মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশই জাতির আগামী দিনের আশা ভরসার প্রতীক। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবে তাদের বড় একটা অংশই পিছিয়ে পড়ছে দিন দিন। যে সময়টাতে তাদের নিজেদের গঠন করা কথা সেই সময়টাতে তাদের কাঁধে চেপে বসছে শ্রম আর নির্যাতনের বোঝা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, দেশের প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু শ্রমে নিয়োজিত। নগর অঞ্চলের প্রায় ১৩ শতাংশ শিশুকে বেঁচে থাকার তাগিদে যুক্ত হতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে। বস্তি এলাকায় এই হার ২৩ শতাংশেরও বেশি। এই বাস্তবতার মধ্যেই আজ ২০ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি শিশুদের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্যাতন। ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সী প্রায় ৮২ শতাংশ শিশু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার। বস্তি এলাকায় এই হার ৮৫ শতাংশ।

জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের সহযোগিতায় চাইল্ড ওয়েলবিং সার্ভে ইন আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ শীর্ষক প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে বলা হয়, শহরের ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের ১৩ শতাংশ শ্রমে যুক্ত। শিশু শ্রমিকদের ৯৩ শতাংশের বসবাস শহরের বস্তিতে।

এ ছাড়া শিক্ষা, পুষ্টি, মাতৃদুগ্ধ, টিকাগ্রহণ, মাতৃত্বকালীন সেবা, প্রশিক্ষিত ধাত্রীর কাছে প্রসব, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, হাত ধোয়া, বাল্যবিয়ে, জন্মনিবন্ধনসহ বেশকিছু ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে বস্তির শিশুরা। জাতিসংঘের ঘোষণা করা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি)  আলোকে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করতে চায়  জাতিসংঘ। আর সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করার লক্ষ্য আছে ২০২৫ সালের মধ্যে।

অবশ্য ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু শ্রমে নিয়োজিত সাড়ে ৩৪ লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করতে না পারলে সেটি আরো বিলম্ব হবে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, ধুলা, ময়লা, ধোঁয়া এবং কাঁপুনিযুক্ত স্থানে কাজ করে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিশু শ্রমিক। আগুন, গ্যাস এবং স্ফুলিঙ্গময় স্থানে কাজ করে তিন দশমিক ১৬ শতাংশ শিশু শ্রমিক। অতি ঠান্ডা বা অতিমাত্রায় গরম পরিবেশে কাজ করে তিন দশমিক ৭২ শতাংশ শিশু শ্রমিক। বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে আট দশমিক ৫৮ শতাংশ শিশু শ্রমিক। খুবই নিচু বা উঁচু স্থানে কাজ করে এক দশমিক ৫৫ শতাংশ শিশু শ্রমিক। পানি বা পুকুর বা নদীতে কাজ করে এক দশমিক এক শতাংশ শিশু।

অন্ধকার বা সীমাবদ্ধ পরিবেশে কাজ করে এক দশমিক ৬৬ শতাংশ শিশু, রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্য আছে এমন পরিবেশে এক দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে থাকে শূন্য দশমিক  ৬৪ শতাংশ শিশু।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশাল এ লক্ষ্য পূরণে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেই। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের পুনর্বাসনে নেওয়া প্রকল্পের পরিধিও পর্যাপ্ত নয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ২ লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করতে চায়। এ লক্ষ্য পূরণ হলেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকবে আরো প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার শিশু। কিন্তু সরকারি হিসাব মতে, ২০১৩ সালের আগের এক দশকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার কমেছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এ বিষয়ে বলেন, ২০১৬ সালে লক্ষ্য পূরণ না হলেও আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সরকার কাজ করছে। কোন কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কতসংখ্যক শিশু শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে তা নিরূপণে জরিপ চালানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কাজ চলছে। সরকার ৩৮টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এর বাইরে গৃহশ্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলাদাভাবে গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। পরবর্তী সময়ে গৃহকর্মী সুরক্ষা বিষয়ে আইনও প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি জানান।

বিবিএস সূত্র জানায়, কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ধমক, অপমান, প্রহার বা শারীরিক আঘাত এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!