• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনা যদি স্বদেশে ফিরে না আসতেন


আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া মে ১৭, ২০১৯, ০৫:১২ পিএম
শেখ হাসিনা যদি স্বদেশে ফিরে না আসতেন

ঢাকা : দুটি কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। এর একটি হলো, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দল বিশ্বে শুধু একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশই সৃষ্টি করেনি, সেই সঙ্গে জন্ম দেয় একটি পূর্ণাঙ্গ জাতির। আর দ্বিতীয়টি হলো, জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে  পেরেছিল। জাতির সৌভাগ্য, শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর থেকে ইতিহাসের চাকা আবার সচল হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নগুলো আবার প্রাণের স্পন্দনে উজ্জীবিত হতে থাকে।

জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের অনেক বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি দলিলে উল্লেখ করা হয়, ‘The assassination of Sheikh Mujib rendered the new nation completely leaderless.’ জাতির পিতার মৃত্যুতে আমরা অসহায় অর্থাৎ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছিলাম এটা সত্য; কিন্তু তাই বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নথি কিংবা কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই পড়ে শেখার কিছু নেই। কারণ জাতির পিতার জীবনটাই আমাদের জন্য একটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শেষ প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর এই মহান নেতার নির্দেশিত পথ ধরেই এ অঞ্চলের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেয়। একজন বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন, ‘একজন মুক্ত মুজিবের চেয়ে একজন বন্দি মুজিব এক লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী।’ কথাটি যে সর্বৈব সত্য তার প্রমাণ হলো স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু ১৫ আগস্ট করুণ ট্র্যাজেডির পর আমাদের মন্ত্রিপরিষদ, গভর্নর, রাজনৈতিক নেতা সবই তো ছিল। পার্লামেন্টও ছিল সচল। আমাদের রক্ষীবাহিনী নামে একটি অতিরিক্ত চৌকস বাহিনীও ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আগস্ট ট্র্যাজেডির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। যুদ্ধ শুরু না হতেই আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। বিনা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। তারপর দীর্ঘ দুই দশক ধরে জাতি সামরিক স্বৈরশাসন ও গণতান্ত্রিক অপশাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। আত্মপ্রতারণার গিলাব দিয়ে জাতির আপদমস্তক ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতির নগ্ন মহরা চলেছে। জাতির পিতাসহ সব জাতীয় নেতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে কতিপয় খলনায়ককে জাতির ইতিহাসে অভিষিক্ত করার পাঁয়তারা চলেছে। কিন্তু ইতিহাস তা গ্রহণ করেনি। ইতিহাসে মিথ্যার কোনো স্থান নেই। তাই সেইসব খলনায়ক জনগণের অজান্তেই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে আর বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতারা অমর হয়ে রয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। আজ দেশের প্রতিটি মানুষের হূদয়ে তারা বিরাজ করছেন অত্যুজ্জ্বল শহীদ মিনার হয়ে, স্মৃতিসৌধ হয়ে।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর শুধু রক্তের উত্তরসূরি নন, জাতির পিতার আদর্শেরও সার্থক প্রতিভূ। তার চোখের দিকে তাকালে আমাদের মানসচক্ষে ভেসে ওঠে জাতির পিতার প্রতিচ্ছবি— একজন বিশালদেহী সুপুরুষ বাঙালি। শেখ হাসিনার কোমল হাতের নম্র পাতার দিকে তাকালে আমাদের মনে হতো বঙ্গবন্ধুর কথা, যার অঙ্গুলি হেলনে এদেশের অযুত-নিযুত জনতা উদ্বেলিত হতো, উদ্দীপ্ত হতো, উৎফুল্ল হতো— কখনো রেসকোর্স ময়দানে, কখনো পল্টনে, কখনো আরমানিটোলার মাঠে, আবার কখনো বাহাদুর শাহ পার্কে।

শেখ হাসিনা আজ আর কেবল বাঙালি জাতির নেতা নন, তিনি আজ পৌঁছে গেছেন বিশ্বনেতৃত্বের প্রথম কাতারে। বিশ্বনন্দিত বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফরচুন’ বর্তমান বিশ্বের নেতৃত্বের সম্মানসূচক ক্রমানুসারে ৫০ জনের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ১০ম স্থান দিয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ওআইসির সদস্য দেশসমূহ তথা মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবেও চিহ্নিত করেছে, যিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা।

প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর হেড কোয়ার্টার্স প্যারিসে শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছিল ক্যালিক্স হুকে বিরগানি শান্তি পুরস্কার। সবচেয়ে উল্লিখিত বিষয় ছিল, বিশ্বনন্দিত এই পুরস্কারের জন্য যে জুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছিল তার চেয়ারম্যান ছিলেন একদা প্রবল বাংলাদেশবিরোধী ব্যক্তি তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার। যে ব্যক্তি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে নিন্দিত করতে চেয়েছিলেন, সেই কিসিঞ্জার ভদ্রলোকই পুরস্কারটি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ক্যালিক্স হুকে বিরগানি’, যার নামে এই বিশ্বনন্দিত পুরস্কার, তিনি ছিলেন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শান্তির প্রতি তার গভীর আকুতি আমি খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। আজ আমি সার্থক শেখ হাসিনার মতো নেত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পেরে। আমার এ আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে, ঠিক পাত্রেই এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি উপজাতিদের ব্যাপারে কল্যাণকর পন্থা অবলম্বন করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। আমরা জানি, উপজাতিদের সশস্ত্র সংগ্রামের কোনো মাঝপথ নেই। হয় জয়লাভ, না হয় নিশ্চিহ্ন। কিন্তু শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বই শান্তির পথ ধরে সেই অসম্ভব কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ড. কিসিঞ্জার আরো বলেন, ‘আপনি একটি জাতিগত সংঘাত নিরসনে বড় অবদান রেখেছেন, জাতির ঐক্যের সংহতি এনেছেন এবং সেখানকার মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছেন। তাই আপনাকে পুরস্কার দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’

কালের বর্তমান বিন্দুতে এসে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, শেখ হাসিনা তার রূপকল্প, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সাহসী নেতৃত্ব প্রদান, সব মিলিয়ে মেধাবী সরকারপ্রধান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আরো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড ১৯৯৯, জাতিসংঘ (এফএও)-এর সেরেস মেডেল, মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড ৯৯, এম কে গান্ধী অ্যাওয়ার্ড, পল হেন-এর ফেলো, ইন্দিরা গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড, এসেসিও ঘোষিত আইটি অ্যাওয়ার্ড ২০১০, জাতিসংঘ, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ও গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া প্যারিসের ইউনিভার্সিটি অব ড্যামফাইন শেখ হাসিনাকে প্রদান করে গোল্ড মেডেল ও ডিপ্লোমা। আর আন্তর্জাতিক লায়ন্স ফেডারেশন শেখ হাসিনার শিরে পরিয়ে দেয় মেডেল অব ডিসটিংশন এবং হেড অব স্টেট মেডেল ১৯৯৭ ও ১৯৯৯। এ বছরও শেখ হাসিনার মুকুটে আরো একটি স্বর্ণপালক সংযোজিত হয়েছে। তা হলো— মাদার অব হিউম্যানিটি। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা একটি ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও দশ লক্ষ ভাগ্যহত এবং স্বদেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বকে বিস্মিত করে দিয়েছেন। শুধু আশ্রয়ই দেননি, সাহস করে উচ্চারণ করেছেন- প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, তবুও মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে নির্যাতিত-নিগৃহীত আরাকানি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াব।

বঙ্গবন্ধুকন্যা জ্ঞান, মেধা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের স্বীকৃতিস্বরূপ এযাবৎ দেশের বাইরে অন্তত ১২টি বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। এর মধ্যে অন্যতম হলো— যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেডা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আপার্তে, বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব অস্ট্রেলিয়া, ক্যাথোলি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস, রাশিয়ার পিপলস ইউনিভার্সিটি ও স্ট্রেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ এবং ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব ড্যামফাইন ইত্যাদি। শেখ হাসিনাকে যখন জাতিসংঘের শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় তখন এর প্রধান উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেডেরিকো মেয়র একটি জাতিগত সংঘাত নিরসনে অসাধারণ অবদান রেখে জাতির ঐক্য সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, ‘পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুজন ব্যক্তিত্বকে শতাব্দীর এই শেষ শান্তি পুরস্কার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই পুরস্কারপ্রাপ্তরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ, সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য কাজ করেছেন।’

একই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে আইভরিকোস্টের প্রেসিডেন্ট হেনরি কোনাল বলেন, আপনি সমস্যাগুলোর গুরুত্ব সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও উপলব্ধি করেছিলেন এবং সেগুলোর ব্যাপারে যথেষ্ট প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। পার্বত্য চুক্তির মতো একটি সাহসী চুক্তির মাধ্যমে আপনি দুই দশকের বেশি সময়ের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন এবং শান্তি পুরস্কারের যোগ্যতা অর্জন করেছেন।

আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথা বাদ দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতির মেধাবী মুখ নন্দিত জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করব, তার উদাহরণ ও ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে দেওয়া যেতে পারে। আমার স্বচক্ষে দেখা একটি ঘটনার বর্ণনা দিতে চাই। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর রিপোর্টার হিসেবে আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস টিমে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সংযুক্ত। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন তার নিজ গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায়। মধুমতির তীরে ছোট একটি গাঁয়ে। বৃহত্তর ফরিদপুরের বিশাল গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে শেখ হাসিনা ‘রাজার মাইয়া’ নামেই পরিচিত এবং তা অনেক আগ থেকেই প্রধানমন্ত্রী জানতেন। এবার তাদের ‘রাজার মাইয়া’ যখন সত্যি সত্যিই রাজা হয়ে এলেন তখন অজস্র মানুষের ঢল নেমেছিল টুঙ্গিপাড়ায়, স্রেফ প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে। কোথায় প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল, কোথায় সিকিউরিটি ব্যারিকেড, কোথায় কি! নেতা-জনতা মিশে একাকার। এক অশীতিপর বৃদ্ধা এগিয়ে গেলেন শেখ হাসিনার দিকে। বোঝা যাচ্ছে দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই বৃদ্ধার একমাত্র অভিলাষ তার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে খুব কাছ থেকে দেখার। তার শরীর স্পর্শ করার। কোনো প্রকার প্রাপ্তির আশা নিয়ে নয়, তার হাতে কোনো আরজি কিংবা দরখাস্তও ছিল না। সেই বৃদ্ধা শেখ হাসিনার কাছে আসতেই দেখা গেল তার শীর্ণ চোখ দুটি যেন এক সমুদ্রের স্বপ্ন হয়ে ছলছল করছে। অতি স্নিগ্ধ দুটি হাতে শেখ হাসিনাকে কাছে টেনে নিয়ে বুকের গভীরে স্পর্শ করে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মৌনধ্যানে। এরপর প্রিয় নেত্রীকে পরম আদরের পরশ বুলিয়ে শেষে হঠাৎই তার মাথায় থুতু ছিটিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আহা! বাছা আমার রাজা হইছো, কখন জানি কোন ভূত-পেত্নির আছর লাগে!’ কুনিঃশ্বাস লাগার অজানা আশঙ্কায় (গ্রামীণ জনপদের সাধারণ বিশ্বাস) ভীতবিহ্বল ও শঙ্কিত জননীতুল্য এই বৃদ্ধা শেখ হাসিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবহমান বাংলার চিরাচরিত মাতৃস্নেহে অভিষিক্ত করলেন।

একজন নেত্রী যখন তার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন সাধারণ মানুষের হূদয়ের নির্মল উষ্ণতা আর ভালোবাসায় সিক্ত হন তখন সেই নেত্রীর আর নোবেল পুরস্কারের দরকার হয় না। শেখ হাসিনার কাছে একটি নোবেল পুরস্কারের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা।

যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম আওয়ামী লীগ এদেশের ইতিহাসে অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে শুধু শেখ হাসিনাকে দলের কাণ্ডারি হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য। ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন বীরের বেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের হূদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। আজ মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে অযুত-নিযুত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক পান্থপথে জনতার সমুদ্রে এসে হাজির হন। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি, বাতাস, ঝড়োচ্ছ্বাস। সবকিছু উপেক্ষা করে গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে জনতা তাকে হূদয়ে বরণ করে নেয় তাদের প্রিয় নেত্রী হিসেবে। আজ সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৯তম দিবস। এই দীর্ঘ পথ চলায় জননেত্রী অর্জন করেছেন মানুষের বিশ্বাস-ভালোবাসা। তিন তিনবার তিনি নির্বাচিত হয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিশ্বনেতৃত্বের মিছিলে তিনি আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন অনন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। দেশকে সফলতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নত জাতির মর্যাদার আসনে। আজ দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় ও বিশ্বাসের সঙ্গে এ কথা উচ্চারণ করা যায়, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন বলেই, জাতির কাণ্ডারি হতে পেরেছিলেন বলেই ২১ বছর পর হলেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিল। অন্যথায় ২১শ বছর হয়তো অপেক্ষা করতে হতো মুক্তিপাগল বাঙালিদের রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরে পেতে। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসের চাকা যেভাবে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হয়তো জাতি সেই চোরাবালিতেই হারিয়ে ফেলত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!