• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ রায়ের অপেক্ষায় নিজামী


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩, ২০১৬, ০৫:০২ পিএম
শেষ রায়ের অপেক্ষায় নিজামী

শেষ রায়ের অপেক্ষায় একাত্তুরের ঘাতক সর্দার আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী । যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদন্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) যে আবেদন জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী করেছেন, তার রায় জানা যাবে আগামী ৫ মে ২০১৬ ।

১৯৭১ থেকে ২০১৬ সাল, দীর্ঘ ৪৫ বছর নিজের কৃতকর্মের ফলাফল জানবেন একাত্তুরের নরঘাতক নিজামী। উচ্চ আদালতে মৃত্যুদন্ড বহালের রায়ের পর যুদ্ধাপরাধী নিজামীর শেষ আইনি সুযোগ এই রিভিউ আবেদন। এ আবেদনে রায়ের কোনো পরিবর্তন না হলে তার সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে। এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এরপর যুদ্ধাপরাধের দায়ে গতবছর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সেই ফাঁসির রায়ই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে, পরদিন তা পড়ে শোনানো হয় যুদ্ধাপরাধী নিজামীকে। এরপর ২৯ মার্চ আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করেন একাত্তরের বদর প্রধান নিজামী। জামায়াত আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে এ মামলার বিচারে উঠে আসে। বর্তমানে  ৭২ বছর বয়সী নিজামী হলেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা তৃতীয় ব্যক্তি, যার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে সামনে অপেক্ষা করছে ফাঁসির রশি। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের এই মন্ত্রী চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া আসামি।

এদিকে, একাত্তরে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের চার রাজাকার সদস্যকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত; একজনের হয়েছে আমৃত্যু কারাদন্ড। বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ২ মে  এই রায় ঘোষণা করে। পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ফাঁসির আসামি কিশোরগঞ্জের আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদই কেবল রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। শামসুদ্দিনের ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজউদ্দিন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। এদের মধ্যে আজহারুলকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছে আদালত; বাকিদের হয়েছে মৃত্যুদন্ড। একাত্তরে এই পাঁচ আসামি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!