• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

শেষ সময়ে মামলা অর্থ ফেরত কবে


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯, ১১:১৫ এএম
শেষ সময়ে মামলা অর্থ ফেরত কবে

ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়। এই চুরির সঙ্গে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ (আরসিবিসি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত। এতে ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।

মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে ১৯-০০৯৮৩ নম্বরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও কোনর। এদিকে বাংলাদেশের মামলা দায়ের করার পর আরসিবিসি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েলকে মামলা লড়ার জন্য নিয়োগ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার পর তিন বছর লেগে গেছে মামলা দায়ের করতে। অর্থ ফেরত পেতে কত দিন লাগবে তা অনিশ্চিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, কঠিন হবে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি প্রমাণ করতে। তাছাড়া আরসিবিসি আইনি লড়াই শুরু করছে। ফলে অল্প সময়ে সুরাহার কোনো সুযোগ নেই। বিগত দিনে এমন মামলায় সর্বোচ্চ ১৪ বছর লাগার ইতিহাস রয়েছে। ন্যূনতম তিন বছর লেগেছে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব হতে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে চুরি হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ফিলিপাইন আদালতের আদেশের মাধ্যমে ফেরত আনা গেছে। এ ছাড়া ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশন-আরসিবিসি বাংলাদেশ ব্যাংককে দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন ডলার ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ফেরত দিয়েছে।

সোলাইরে নামক ক্যাসিনোতে যে ২৯ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয় তা ফিলিপাইনের আদালত কর্তৃক ফ্রিজ করা হয়েছে। বর্তমানে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এটি। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং এর দুজন কর্মচারীর হিসাবে যাওয়া ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ফিলিপাইনের আদালত তা লেনদেন বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশ আশা করছে, আদালতের মাধ্যমে এ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মানি রেমিট্যান্স কোম্পানি ফিলরেমের নিকট ১৭ মিলিয়ন ডলার রক্ষিত রয়েছে মর্মে বিভিন্ন পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়েছে। এই অর্থ ফিলরেম থেকে উদ্ধারে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ফিলিপাইনে। সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের অবশিষ্ট ৬৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশের মাধ্যমে ফেরত আসবে। বর্ণিত উৎসগুলো থেকে উদ্ধারের পর যে পরিমাণ অর্থ অনাদায়ী থাকবে তা আরসিবিসি থেকে উদ্ধার করতে হবে।

বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান শুক্রবার টেলিফোনেবলেন, বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে জটিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। অপসারণ করা হয় দুই ডেপুটি গভর্নরকে। বদলি করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব ড. আসলামুক হককে।

এদিকে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে আরসিবিসির আইনি প্রতিষ্ঠান আদালতে প্রমাণ করতে চাইবে, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রাজনৈতিক অভিযোগ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচিতি পেতে চায়। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অর্থ উদ্ধার করতে চাইত, তবে তিন বছর আগেই মামলা করতে পারত। আরসিবিসির ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েল  আইনজীবী তাই- হেং চেং এরই মধ্যে বলেছেন, এ মামলা যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছু নয়, সেটা আমরা আদালতে দেখিয়ে দেব। তারা নিজেদের দায় আরসিবিসির ঘাড়ে চাপাতে চায়।

এক নজরে রিজার্ভের অর্থ চুরি

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- রিজার্ভ হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি। যার মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে। বাকি ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলঙ্কায়।

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত হয় সুইফট বার্তার মাধ্যমে নিউইয়র্কের হিসাব থেকে ১০ কোটি ডলার চুরি হয়েছে।

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং বিভাগ নিশ্চিত হয় অর্থ সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল ফিলিপাইনে গিয়ে প্রথম বৈঠক করে।

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংক ২ কোটি ডলার ফেরত দেয়।

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- ফিলিপাইনের অর্থ পাচার প্রতিরোধ ইউনিট কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে আদালতে মামলা করেন। ঘটনাটি ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যমে আসে।

১ মার্চ, ২০১৬- ফিলিপাইনের আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করার নির্দেশ দেন।

৭ মার্চ, ২০১৬- বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির বিষয়টি জানায়।

১১ মার্চ- অর্থ পাচারের অভিযোগে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

১৩ মার্চ, ২০১৬- তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৫ মার্চ, ২০১৬- বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।

১৭ মার্চ, ২০১৬- আরসিবিসির অভ্যন্তরীণ তদন্তে শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দোষী সাব্যস্ত হন।

২২ মার্চ, ২০১৬- ঘটনার সম্পৃক্তায় মায়া ও তার সহযোগীকে আরসিবিসি চাকরি থেকে বহিষ্কার করে।

২৩ মার্চ, ২০১৬- যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নানা পর্যায়ে বৈঠক ও আলোচনা চলে।

১৩ জানুয়ারি, ২০১৯- আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৭ জানুয়ারি, ২০১৯- বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মামলার অনুমতি দেন ও একই দিনে একটি দল যুক্তরাষ্ট্র যান।

০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯- যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কোর্টে মামলা দায়ের করা হলো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!