• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৮, ২০২০, ০৬:৪৭ পিএম
শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান

ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

শনিবার (১৮ জুলাই) রিসারজেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও পুনরুদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক চতুর্থ সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে পর্যবেক্ষন হচ্ছে, যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আসেন, তারা ভালো আছেন। তবে কেউ কেউ নিয়মিত লেনদেন করতে চাচ্ছেন। সার্ভেইল্যান্স রিপোর্টে দেখা গেছে, তারা বড় ধরনের টাকা বিভিন্ন পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করেন এবং শেয়ার দর বাড়িয়ে অল্প সময়ে বিক্রি করে টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন।

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে তাদেরকে স্বাগত জানাই। এক্ষেত্রে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করছি। কিন্তু ম্যানপুলেশনের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কঠোর। যাতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের সঠিক সময়। তাই ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে বিষয়টি বুঝানোর জন্য বলব। প্রয়োজনে আপনারা (ব্রোকারেজ হাউজ) রোড শো আয়োজন করেন, সেখানে আমি যাবো।

মানি মার্কেট বন্ধ না থাকলে ক্যাপিটাল মার্কেট কখনো বন্ধ থাকে না উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন শেয়ারবাজার বন্ধ হবে না, যদি না মানি মার্কেট বন্ধ থাকে। ফ্লোর প্রাইস একটি প্রতিবন্ধকতা, এটা ঠিক। এটা আমরাও বুঝি। মার্কেটকে ঠিকভাবে মুভ করতে দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে যথাশীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরো বলেন, ভালো খবর হচ্ছে আমরা যোগদানের সময় যখন লেনদেন ৫০ কোটি টাকা হতো, সেটা এখন ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই আশার খবর। তবে খুব শীগগির এটা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। তবে আমি বিশ্বাস করি আস্থা চলে আসলে তখন আর টাকার সমস্যা হবে না।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা করে যে আসার কথা, সেটা নিয়ে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রেখেছি। আপনারা যেনে খুশি হবেন এরইমধ্যে ১৩টি ব্যাংক এই ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য পর্ষদে পাশ করিয়ে ফেলেছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সবগুলো ব্যাংকই বিনিয়োগ নিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অনলাইনে অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ডিসক্লোজার ভিত্তিতে অ্যাকাউন্টসের উপর আইপিও দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের অডিটিংয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা লাগবে। কারন অ্যাকাউন্টসে অনেক রকম কারসাজি করা হয়। এমনও হয় যে এবছর যে অ্যাকাউন্টস দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে, পরের বছর গিয়ে আগের বছর অ্যাকাউন্টস পুরো পরিবর্তন করে ফেলছে। এই সমস্যাটা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান বলেন, আগে আইপিওতে যে ভুলগুলো দেখেছি, সেখানে মেজর ছিল অ্যাকাউন্টিং সংক্রান্ত কাগজপত্রে। এখানে জালিয়াতি করা হয়। আমরা নিজেরা দেখতে পাচ্ছি একটি কোম্পানি যে ধরনের অবস্থা দেখিয়ে শেয়ারবাজারে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে সেরকম না। এখন ওইসব কোম্পানিকে নিয়ে সবাই একটু সমস্যায় আছে। গত কমিশনে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জালিয়াতির কারনে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের শাস্তির দরকার আছে।

তিনি বলেন, বাই ব্যাংক নিয়ে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এখানে কোম্পানি আইনের একটি বিষয় আছে। আমরা নিজেরা এটা করতে পারছি না। এ কারনে এ বিষয়ে কোম্পানি আইনে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর কাজ শুরু করেছি। ২ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারকে ভালো অবস্থানে পাবেন এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শেয়ারবাজার ছড়িয়ে যাবে। আইটিতে আন্তর্জাতিক দক্ষ একজনকে নিয়োগের অনুমতি পেয়ে গেছি। তার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আইটি প্লাটফর্ম দাড় করানো হবে। এই প্লাটফর্মে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, মার্কেটে আসলে বিএসইসি ইন্টারফেয়ার করে না। মূলত রুলস-রেগুলেশনের কাজ করে। তিনি বলেন, স্ক্রিপ্ট নিটিংয়ের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করব।

আগামী ২-১ সপ্তাহের মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালকদের আবেদন হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ক্রাইটেরিয়া পূরণ করলেই আবেদন করা যাবে। অন্যথায় তাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে না। কোম্পানির পর্ষদের মধ্যে আমরা স্বচ্ছতা চাচ্ছি। এই মুহুর্তে আমাদের কাছে সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা শুরু থেকেই কাজ করছি।

আপনারা খেয়াল করবেন মাঝখানে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নিয়ে একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা ডিএসইর সহযোগিতায় দ্রুত সেটাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এবং এমনভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যে, আগামিতে এ ধরনের কাজ করে কেউ পার পাবে না, সেই ম্যাসেজ বাজারে গিয়েছে।

তিনি বলেন, আইসিবি সমস্যার মধ্যে আছে, সে ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আগামি সপ্তাহে একটি টেন্ডারে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে আইসিবিকে পূণ:গঠনের প্রস্তাবনা তৈরী করা হবে। এ বিষয়ে আগামি নভেম্বরের মধ্যেই প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। শেয়ারবাজারে আইসিবির সঠিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজনে সরকার অর্থায়ন করবে।

অনুষ্ঠানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার মতো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম বলে অভিযোগ করে। তাদের মতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ৭-৮টা কোম্পানি আছে বিনিয়োগ করার মতো। এছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব আছে বলে তারা অভিযোগ করে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আনার জন্য সহায়ক পলিসির ঘাটতি রয়েছে। এটা সমাধান করা দরকার। এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের দিকে নজড় দিয়ে শেয়ারবাজারকে মৌলিকভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এগিয়ে নিতে হলে ক্ষুদ্র ও বড় সকল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।

এমসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আসে না বলে অভিযোগ আছে। এর পেছনে অন্যতম কারন হিসেবে রয়েছে সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়া। এখানে লোকসান করা কোম্পানির দর বাড়ে।

তিনি বলেন, রেগুলেটরদের যথেষ্ট ইন্টারফেয়ার করার অভিযোগ আছে। শেয়ার বিক্রি না করার জন্য ফোন দিয়ে নির্দেশ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকের নির্দেশে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য। আগামিতে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর সমস্যা নন পারফরমিং লোন (এনপিএল)। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কোন ব্যাংক সমস্যায় আছে এমন কোন তথ্য আমার জানা নেই। অথচ ব্যাংকগুলোকে ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। বিনিয়োগ কি পরিমাণ করবে, সেটা ব্যাংকের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, অনিয়মকারীদেরকে শাস্তির আওতায় আনলে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। তাই যখনই অনিয়ম হবে, তখনই শাস্তি প্রদান করতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠানে অনলাইনে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন  ঢাকা স্টক এক্সচেজ্ঞের এমডি কাজী সানাউল হক, আইসিবির এমডি আবুল হোসেন, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও ডিবিএ সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন।

সোনালীনিউজ/এলএ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!