• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শৈল্পিক অবকাঠামোর ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ‘উপবন পর্যটন’


বান্দরবান প্রতিনিধি আগস্ট ২৮, ২০২০, ০২:১৭ পিএম
শৈল্পিক অবকাঠামোর ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ‘উপবন পর্যটন’

বান্দরবান : প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে সাদা সিমেন্টের শৈল্পিক ধাঁচের রেলিং উপবনের চারপাশ ঘেরা। নিচে নামতেই সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের কিনারায় কারুকার্য করা বেঞ্চ, স্বল্প দূরে পুরনো রান্নার গোল ঘরের পাশে বসানো হয়েছে চোখ জুড়ানো শৈলী চেয়ার-টেবিল, এবং মাঠের মাঝখানে শিশুদের জন্য দোলনা এবং পানির ফোয়ারা। আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে নির্মিত হবে ভিউ পয়েন্ট।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নতুন শৈল্পিক অবকাঠামোর ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে উপবন পর্যটনের আগের পরিবেশ। এই পর্যটন কেন্দ্রটি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় হলেও পর্যটন মৌসুমে পাশের জেলা কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের ভীড় জমে। করোনাকালীন পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে পর্যটনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রশাসন।

বেশকিছু উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে উপবনের আগের পরিবেশ। চলমান কাজ শেষ হলে দর্শনার্থীদের ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপবনের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ও সদর উপজেলা যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আনছার উল্লাহ বলেন, লকডাউনের কারনে পর্যটক আসতে পারেনি। তবে এই সময়ের মধ্যে বর্তমান ইউএনও’র উদ্যোগ ও প্রচেষ্ঠায় উপবনের সৌন্দর্য বেড়েছে। আগামীতে উন্নয়নের মাধ্যমে এই পর্যটনকে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন- বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন উপবন পর্যটনকে। এই দৃশ্যগুলো দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছে, এটি আসলেই আমাদের গর্বের ব্যপার। তারমতে, আগামীতে নিরব শান্ত পরিবেশের দৃষ্টিনন্দন উপবন কেন্দ্র বান্দরবানের অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পাবে।

উপবন পর্যটন স্পটের পাশের হোটেল ব্যবসায়ী নুরুল হক টিপু বলেন, ‘লকডাউনের কারনে অন্য ব্যবসায়ীদের মতো আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি’। কিন্তু লকডাউন ও উপবনের আধুনিকায়নের পর ব্যবসা বানিজ্য বেড়েছে। ক্ষুদ্র এই হোটেল ব্যবসায়ীর মতে, আগামীতে উপজেলা প্রশাসন উন্নয়ন কাজ চালিয়ে গেলে পর্যটক আরো বাড়বে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্রটি বহুবছর উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু শাফায়েত এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেন এবং কিছু স্থাপনাও করেছিলেন। পরবর্তীতে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি যোগদানের পর নতুনভাবে বদলে যেতে শুরু করে উপবন পর্যটনের চিত্র। শুরুতেই তিনি উপবন লেকের ঝুলন্ত সেতু সংষ্কার, প্যাডেল বোর্ট সংযুক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, এক সময় এই লেকের পশ্চিম পার্শ্বে  বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ঝর্ণা ছিল। এসব ঝর্ণার পানির উৎস নিয়ে ১৯৯৪ সালে দুই পাহাড়ের মধ্যখানে কৃত্রিম হ্রদ খনন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল উপজেলা সদরে পানির সমস্যা দূরীকরণ। পরবর্তী ১৯৯৬ সালে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠে। শুরুতে এটি ''ইউএনও'র গোধা'' বা লেক নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তী ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করার পর ''শৈলশোভা'' লেক নামে পরিচিতি পায়।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনে বিভিন্ন সময়ে পর্যটনবান্ধব কর্মকর্তার যোগদানের সূত্র ধরে এবং বান্দরবানের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের প্রচেষ্টায় শৈলশোভা লেকটি ‘উপবন পর্যটন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এখন এই পর্যটন শুধু বান্দরবানে সীমাবদ্ধ নেই। একাধিক টিভি নাটক, চলচিত্র ও বিজ্ঞাপন চিত্রায়িত হয়েছে এই উপবনে।

চলমান উন্নয়ন কাজের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, যোগদানের পর থেকে উপবন পর্যটনে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। শীতকালে এখানে অনেক ট্যুরিস্ট আসে। বিশেষ করে কক্সবাজারের পর্যটকরা। এসব পর্যটক যাতে সুন্দরভাবে উপবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সেজন্য সম্প্রতি কিছু বেঞ্চ, টেবিল, শিশুদের জন্য দোলনার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পানির ফোয়ারার কাজ চলমান। ভবিষ্যতে পিকনিকের জন্য রান্নাঘর এবং ভিউ পয়েন্ট করার পরিকল্পনা আছে। বরাদ্দ পেলে এই কাজগুলো শুরু করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!