• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোভন-রাব্বানীর গণভবনের পাস বাতিল


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯, ১২:১৫ পিএম
শোভন-রাব্বানীর গণভবনের পাস বাতিল

ঢাকা : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা নানান অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলার তিনদিন পর এবার সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের পাস বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাদের পাস বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গণভবনে একটি সূত্র ।

সূত্র জানায়, গণভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্থায়ী অনুমতি ছিল। ফলে এতদিন গণভবনে প্রবেশের জন্য অন্য অনেকের মতো তাদের আলাদা কোনো অস্থায়ী পাস বা প্রবেশ কার্ড নেওয়া লাগতো না। যেকোনো সময় তারা গণভবনে প্রবেশ করতে পারতেন। কিন্তু এ সুবিধা বাতিলের ফলে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন চাইলে গণভবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অন্যদের মতো তাদেরও আলাদা অস্থায়ী পাস নিতে হবে।

এর আগে গত শনিবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং অযোগ্যতার কারণে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সভায় তিনি শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর ছড়িয়েছিল।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেওয়া, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেরিতে যাওয়া এমনকি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের গাড়িতে ওঠাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে জড়ান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এ সময় দায়িত্বরত এক সাংবাদিককে শোভনের গাড়িতে তুলে নেওয়া হয় এবং সাংবাদিকের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করা হয়।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত নেতাদের সমালোচনার একপর্যায়ে ১০ মিনিট ধরে ছাত্রলীগ নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কমিটি ভেঙে দিতে বলেন। ওই সভায় উপস্থিত থাকা একটি সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি বলছে, শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সৌরভের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কথা বলেছেন। এমন কথা বাস্তবে প্রতিফলিত না-ও হতে পারে। তবে এটি স্পষ্ট যে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কর্মকাণ্ডে বেশ ক্ষুব্ধ।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে নানা অভিযোগ তোলেন উপস্থিত নেতারা। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া, দুপুরে পর্যন্ত ঘুমানো, অনৈতিক সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি।

এদিকে সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণভবনে অপেক্ষা করছিলেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা তাঁদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দিলেও তাঁরা যাননি। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁদের ‘ধমক দিয়ে’ চলে যেতে বললে তাঁরা গণভবন থেকে চলে আসেন।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গণভবনে ‘বকা’ খেয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সোজা রাব্বানীর হাতিরপুলের বাসায় গিয়ে ওঠেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুজনই এখন ওই বাসায় রয়েছেন। অবশ্য দুজনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

এদিক আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের যেহেতু প্রধানমন্ত্রীই নিয়োগ দেন, সেই ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনের আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!