• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আজ মহান মে দিবস

শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি ঘটুক


নিউজ ডেস্ক মে ১, ২০১৯, ০৯:৫৬ এএম
শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি ঘটুক

ঢাকা : ‘হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়, পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়, তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি, তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি; তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান’- আজ মহান মে দিবস। কুলি, মুটে, মজুর শ্রমিকদের দিন। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সংহতি প্রকাশের দিন আজ।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় পুঁজিবাদের বিকাশের বিপরীতে তীব্র হয়ে উঠছিল মেহনতি মানুষের ওপর নির্যাতন, শোষণ আর বঞ্চনা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ‘হে’ মার্কেটে কারখানায় দিনে ৮ ঘণ্টা শ্রমসময় নির্দিষ্ট করার দাবিতে আওয়াজ তোলা মিছিলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক নেতা নিহত হন। মে দিবসের সংগ্রাম শ্রমিক শ্রেণিকে উপহার দিয়েছে সংগ্রামী লাল পতাকা ও মুষ্টিবদ্ধ হাত। শ্রমিক শ্রেণির জন্য আজকের দিনটি তাই দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন, শেকল ছেঁড়ার দিন, উৎসবের দিন, একই সঙ্গে শোকেরও দিন। অথচ এক সংক্ষিপ্ত ও প্রহসনমূলক বিচারে সেদিন ফাঁসি দেওয়া হয় শ্রমিক নেতা স্পাইস, পার্সনস, ফিলডেন, মাইকেল স্কোয়ার, জর্জ এঙ্গেলস ও অ্যাডলফ ফিসারের। পরবর্তী সময়ে আবারো ১৮৮৮ সালের ১ মে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ১৮৯০ সালে বিশ্বের সব দেশে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে মে দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে এ দিনটি শ্রমিক কৃষক মেহনতি মজদুরের দিন।

এই যে সভ্যতার চরম বিকাশে পৃথিবীর পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে তিলোত্তমা নগরী। গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী প্রাসাদ। ক্রমাগত ঘুরছে উন্নয়নের চাকা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শত বছরের দূরত্ব পরিণত হয়েছে চোখের পলকের মতো। মানুষ নামের পৃথিবীর অধিবাসীরা ছুঁয়ে এসেছেন ভিনগ্রহের মাটি। জয় করেছেন চাঁদের পাহাড়। এর পেছনে রয়েছে একটি মহাশক্তি। যার নাম শ্রম। যাকে আমরা সৌভাগ্যের প্রসূতিও বলে থাকি। এই শ্রমই হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলের স্বপ্নসিঁড়ি। সাফল্যের রফরফ। এর বিরতিহীন শুভ যাত্রা শুরু হয়েছে সৃষ্টির সূচনালগ্নেই। আর বর্তমান শতাব্দীর উন্নতির মূলেও এই শ্রমের রয়েছে অনস্বীকার্য অবদান। তাই এই শ্রমকে বলা হয় সভ্যতার হাতিয়ার। এছাড়া পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার পেছনে শ্রমের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই একে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই কারোরই। তাই তো পৃথিবীর প্রায় সব মনীষী, সুশীল জনগোষ্ঠী শ্রমের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন এক বাক্যে। আর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এ প্রসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে নানা নীতিমালা। দেওয়া হয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনাও। এতে  মালিক-শ্রমিক যে ঐক্যের সৃজন হবে, তাতে ভর করে এগিয়ে যাবে দেশ। গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন সমাজ।

আর তাই বর্তমান ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী বিশ্বে মে দিবসের তাৎপর্য আজো অম্লান। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা, যার অবসান এখনো ঘটেনি। আমাদের মতো দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া দেশে লাখ লাখ শ্রমিক এখনো অধিকার-বঞ্চিত, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত এবং মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। আজো বাংলাদেশসহ দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক এখনো তাদের মৌলিক অধিকার ও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত এবং মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। এখনো পোশাকশিল্পের মতো বৃহত্তম খাতে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যত অনুপস্থিত। শিশুশ্রম বন্ধ হয়নি, নারীশ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। এমনকি গৃহশ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালকদের মতো স্বনিয়োজিত শ্রমিক ও ক্রমপ্রসারমান সেবাখাতের বড় অংশ আইনি অধিকার ও কাঠামোগত মজুরি-নিশ্চয়তার বাইরে। এমতাবস্থায় মে দিবসের আদর্শের প্রতি আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে, রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে এই দিনের মাহাত্ম্য। তবেই আদর্শিক মুক্তি ঘটবে মেহনতি মানুষের। আজকের এই মহান মে দিবসে সব শ্রমজীবী মানুষকে জানাই অভিনন্দন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!