• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমিক নেতাদের টাকার পাহাড়


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০২:০২ পিএম
শ্রমিক নেতাদের টাকার পাহাড়

ঢাকা : সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে পোশাকশিল্প যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই এই খাতকে ধ্বংসের দিকে নিতে তৎপর একটি মহল। আর তাদের জোরে ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কিছু অসাধু শ্রমিক নেতা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। যার প্রভাব পড়ছে খেটে খাওয়া শ্রমিক তথা পোশাকশিল্পের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় নামি-বেনামি এমন নেতা ও শ্রমিক সংগঠনের অভাব নেই। বেশির ভাগ শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করার বিপরীতে উল্টো তাদের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব নামধারী সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শামীম খান অন্যতম। তার বিরুদ্ধে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার নামে শ্রমিকসহ কারখানা মালিকদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনেক শ্রমিক অভিযোগ করেন, শামীম খান প্রথমে একটি পোশাক কারখানা নির্বাচন করেন। পরে ওই কারখানার কিছু শ্রমিকের পরিচয়পত্রের ফটোকপি কৌশলে সংগ্রহ করেন ও কাগজপত্র প্রস্তুত করে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতির জন্য শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেন। এরপর কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ট্রেড ইউনিয়ন না করার শর্তে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন তিনি।

কোন কোন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করতে চায়, সে তথ্য দেওয়ার শর্তে কারখানা মালিক চাঁদার টাকা পরিশোধ করেন। এভাবেই প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানা মালিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। শুধু শামীম খান নন, আরো কয়েকজন শ্রমিক নেতা আছেন, যারা এই টাকায় বাড়ি-গাড়ি কিনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

এদিকে কারখানা মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়নের কাগজপত্রে যে শ্রমিকদের নাম পাচ্ছেন, তাদের ছাঁটাই করে দিচ্ছেন। আর এ ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শুরু হচ্ছে অসন্তোষ-আন্দোলন। কোনো কোনো সময় আন্দোলনের মুখে কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। অথচ শ্রমিকেরা জানতেও পারছেন না ছাঁটাইয়ের কারণ।

গত ৮ সেপ্টেম্বরে আশুলিয়ার ইএসকেই কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের কারণে চাকরি হারান পোশাক শ্রমিক সেলিনা। এরপর আর কোথাও চাকরি পাননি তিনি। অভাবের সংসারে ওই চাকরিটাই ছিল সেলিনার পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, তারা ৩০ জন শ্রমিক মিলে একটি ফেডারেশনের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়নের কমিটিতে নাম জমা দেন। এর কয়েক দিন পরেই সেই ৩০ জনকে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করা হয়।

তিনি আরো বলেন, কারখানা থেকে ছাঁটাই করে দেওয়ার পর সে সময় আমরা শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর জন্য আন্দোলন করেছিলাম। তখন সেই ফেডারেশনের কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি। পরে জানতে পারলাম, কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সমঝোতার মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সেই সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব বদরুদ্দোজা বলেন, এই সিন্ডিকেটে আছে কিছু ভুয়া শ্রমিক নেতা, রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন ও বিজিএমইএর লেবার সেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন। এরপর নির্ধারিত অধিদপ্তর থেকে কারখানা মালিকদের একটি চিঠি পাঠানো হয়।

পরে শ্রমিক নেতা, মালিক পক্ষ ও রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তারা ওই কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন না করার শর্তে সমঝোতায় আসেন। মালিকেরাও চান না যে, তাদের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন হোক। এরপর কিছু নিরীহ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

ডেবনিয়র কারখানার মালিক আইয়ুব খান বলেন, আমাদের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের নামে অনেক শ্রমিক নেতাই টাকা খেয়েছেন। শামীম খানও ট্রেড ইউনিয়ন জমা দিয়েছিলেন। কোনো কারণে তার ট্রেড ইউনিয়নটি বাতিল হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের কারখানা সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

আজকাল আবার কিছু অসাধু শ্রমিক নেতা আমাদের কর্মকর্তার কাছ থেকে ট্রেড ইউনিয়নের নামে টাকা নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তাদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে কারখানায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। হয়তো অনেক কারখানার মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন চান না। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন করলে কারখানা শ্রমিকেরাসহ সবাই সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শামীম খান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তো বেতন নেই। আমরা চলব কীভাবে? শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করব কীভাবে? কারখানার মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ সবাই আমার ওপর ঈর্ষান্বিত হয়েই এই অভিযোগগুলো করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!