• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপে রাজনৈতিক লাভ দেখছে আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৪, ২০১৮, ০৭:৩৬ পিএম
সংলাপে রাজনৈতিক লাভ দেখছে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ও অনুষ্ঠেয় সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক লাভ দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়া রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে চলমান সংলাপকে ‘বিশেষ অর্জন’ মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

দলের প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ১ নভেম্বর সংলাপ শেষে ওই রাজনৈতিক জোটের সভা-সমাবেশে বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের বিবেচনা ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির ফলে আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে বলে মনে করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এতদিন সংলাপের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এলেও শেষ সময়ে সবাইকে চমকে দিয়ে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর পেছনে রাজনৈতিক লাভের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন সব দলের অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে করার পরিকল্পনাও আছে দলটির। এ ছাড়া সংলাপকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনার জন্ম হয়েছে, সেগুলোও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপ চলমান রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলটি। গতকাল ২ নভেম্বরও দলটি সংলাপ করে বিকল্পধারার নেতৃত্বে সদ্যগঠিত যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের প্রাথমিক রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে। আলোচনা শেষেও লাভ হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে আলোচনা করে বিএনপির সভা-সমাবেশ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রমের ওপর কোনো বিধি নিষেধ থাকছে না। এটা আলোচনার সফলতা। এর মধ্য দিয়ে দলটির নেতারা জনগণকে বার্তা দিতে চাচ্ছেন যে, সংবিধান ঠিক রেখে আলোচনা ও সংলাপে যা যা করা সম্ভব, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে সেগুলো করবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সবাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। তবে সংবিধানের বাইরে দলটি যাবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেন, যা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ঐক্যফ্রন্টের সাতটির মধ্যে তিনটি দাবি বাস্তবায়নে আমাদের কোনো বাধা থাকবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পরে দেশীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসের জায়গা অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সংলাপের বিষয়টি তাই রাজনীতিতে ইতিবাচক দিকের সূচনা করবে। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে আলোচনায় সমাধান খুঁজে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞ, দূরদর্শী, মেধাবী ও বিশ্বনন্দিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। তিনি সংলাপে স্বচ্ছ, অবাধ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে উদারতা দেখিয়েছেন।’

আওয়ামী লীগ মনে করছে, রাজনৈতিক সঙ্কটে এবারই প্রথম বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংলাপ আয়োজন করতে পারছেন। সরকারবিরোধী জোট ও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে প্রধানমন্ত্রী দেশি ও বিদেশি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পেরেছেন। সংলাপে না বসলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করলেও সাড়া দেননি তখনকার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সমালোচনার কবলে পড়ে।

এবার সংলাপের আহ্বানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সাড়া দেওয়ায় সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ও বিদেশিরা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এতে আওয়ামী লীগেরই লাভ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রশ্নে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিলে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করতে চায়। ওই সংস্থার মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এ দেশে এসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সফল হননি।

১৯৯৪ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে এক পর্যায়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনস দুই দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এবারের সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করাতে পারলে রাজনীতিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে, যা আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকবে। ফলে দলটি সব দলকে নির্বাচনে আনতে রাজনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!