• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সংসদ নির্বাচন হজম হয়নি’ তাই ডিএনসিসিতে অনীহা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০১:৫৭ পিএম
‘সংসদ নির্বাচন হজম হয়নি’ তাই ডিএনসিসিতে অনীহা

ঢাকা : আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর তেমন আগ্রহ নেই। এমনকি মহাজোটের শরিকরাও এ নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। অন্য দলগুলোরও এ নির্বাচনে অনীহা রয়েছে। বিরোধী মতের দলগুলো নির্বাচনে না যাওয়ার পেছনে সরকার ও ইসির প্রতি আস্থাহীনতাকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন। একই সঙ্গে দুই সিটির সম্প্রসারিত ৩৬ ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সরকারি দল মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। ডিএনসিসির মেয়র পদে ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। দলের প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে দলটি। গতবার বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে উত্তরের মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এবারো আতিকুল ইসলামের মনোনয়ন নিশ্চিত হলো।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) থেকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ডিএনসিসির মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে। পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদেও মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। শনিবার (২৬ জানুয়ারি) জাপার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

যদিও গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, উত্তর সিটি নির্বাচনে আমাদের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মেয়রপদে যোগ্য প্রার্থী আছে কি না খোঁজ করে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী আসেনি। এ ছাড়া মহাজোটের অন্য শরিকদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

তবে সিটি নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলেও ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে ডিএনসিসি এবং উপজেলাসহ অন্য কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি— একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রহসনের মধ্য দিয়ে হয়েছে। তাই এই সরকার ও ইসির অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। আমরা কোনো উপনির্বাচনেও যাচ্ছি না।

বাম মোর্চার অন্যতম নেতা মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই এখনো আমাদের হজম হয়নি। এরপর নতুন করে আরেকটি নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ আমরা মনে করি না যে, এটি অর্থবহ নির্বাচন হবে। কাজেই আমরা বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা এই নির্বাচনে অংশ নেব না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও এই নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেছেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনকে যেহেতু প্রত্যাখ্যান করেছি। কাজেই নতুন করে আরেকটি নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে নির্বাচনে বিরোধী দলের না আসা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিরোধী দল নির্বাচন না করলে ডিএনসিসির উপনির্বাচন বন্ধ হবে না। নির্বাচনে না এলে তারা ভুল করবে।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে এবারো বিএনপি একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করল। এর মাধ্যমে বিএনপি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে যেমন করে আত্মহননের মতো কাজ করেছিল এবারো তারা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করল নির্বাচন বয়কট করে।’

আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ার পর গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদের উপনির্বাচন, ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!