• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ১৫, ২০১৮, ০৬:২১ পিএম
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু

ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের জন্য ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে তালিকা তৈরির কাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ৪০ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের বেশীতেই নেই বিদ্যুতসংযোগ। ফলে এগুলোতে চার্জার লাইটের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোট সম্পর্কিত এসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চলতি বাজেটে নির্বাচন কমিশনকে ছয়শ’ পঁচাত্তর কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এই অর্থের বেশীর ভাগই ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতেই ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে কমিশনসংশ্লিষ্টরা।

ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কে কমিশন সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে অনুমোদিত ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা’ পাঠানো হয়েছে। এখন সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে আসনভিত্তিক খসড়া তালিকা করা হবে। আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষ করে কর্মকর্তারা তা কমিশনে পাঠালে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।

এ প্রসঙ্গে ইসির উপসচিব আব্দুল হালিম খান বলেন, ‘বুধবার কমিশন ওই নীতিমালা অনুমোদন করার পর তা মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হল।’

আগামী ৩০শে অক্টোবর থেকে ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এবার তিন ৩ হাজার ভোটকেন্দ্র বেশি লাগবে ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এর মধ্যে ৬১৩টি কেন্দ্র হবে পার্বত্য এলাকায়; বাকি ৩৯ হাজার ৩৮৭টি হবে দেশের বাকি এলাকায়।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, অক্টোবরের মধ্যে ৩০০ আসনের ভোটার তালিকার সিডি ও ভোটার তালিকা মুদ্রণ শেষ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ‘উপযুক্ত সময়ে’ ইসি তফসিল ঘোষণা করবে।

নবম সংসদ নির্বাচন : ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি; ভোটকক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি।

দশম সংসদ নির্বাচন : ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের বিপরীতে ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি। ৩০০ আসনে ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন : ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের বিপরীতে প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র; ভোটকক্ষ লাগবে প্রায় ২ লাখ।

কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এমাসেই অর্থাৎ জুলাইয়ে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক খসড়া তালিকা প্রকাশ; অগাস্টে খসড়া তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি; ভোটের ২৫ দিন আগে ইসি অনুমোদিত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ এবং তফসিলের পর নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে সেই তালিকা পাঠানোর কথা রয়েছে।

ভোটকেন্দ্র নীতিমালায় বলা হয়েছে, গড়ে ২৫০০ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৬০০ পুরুষ ও ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে ভোট কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পারতপক্ষে ভোটকেন্দ্র করা যাবে না। কেন্দ্র নির্ধারণে সাধারণত যাতায়াত ও ভৌগলিক অবস্থানের সুবিধা বিবেচনা করা হয়। তবে এ নিয়ে প্রার্থীদেরও নানা রকম অভিযোগ- আপত্তি থাকে। প্রতিবারই ভোটের আগ মুহূর্তে ভোটকেন্দ্র পাল্টাতে কিছু প্রার্থীর তৎপরতা দেখা যায়। তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্র কোনো প্রার্থীর বাড়ির কাছে বা ‘প্রভাব বলয়ের মধ্যে’ পড়ছে বলে প্রতীয়মান হলে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করা যায়।

ইসির উপসচিব বলেন, ‘সাধারণত আগের নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে ভোট হয়েছিল সেগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়। তবে নদীভাঙন ও দুর্যোগে ভোটকেন্দ্র বিলুপ্ত হলে নতুন ভোটকেন্দ্র ঠিক করতে হবে। কোথাও ভোটার বাড়লেও নতুন কেন্দ্র লাগে।’

আসছে ৩০শে জুলাই তিন সিটির ভোটের পর নির্বাচন কমিশন পুরোদমে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নামবে বলে কর্মকর্তারা জানান।

অর্ধেক ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই : দেশের অর্ধেক ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ শুরু করেছে, আর তাতেই সম্ভাব্য অর্ধেক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকার তথ্য জানা গেছে।

তবে ভোট দেয়া ও গণনার সুবিধার জন্য এসব কেন্দ্রে অন্তত দুটি করে চার্জার লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি দাতা সংস্থার কাছে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্রও দেয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নবম সংসদে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি (ভোটকক্ষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি)। দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ২১ লাখ। ফলে ভোটার অনুপাতে এবার অর্থাৎ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৭৯টি।

এ প্রসঙ্গে ইসির জ্যেষ্ঠ সহাকারী সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) ফরহাদ হোসেন বলেন, “সম্ভাব্য এসব ভোটকেন্দ্রের ৫০ শতাংশে বিদ্যুৎ নেই। এজন্য ২২ হাজার কেন্দ্রের জন্য চার্জার লাইট প্রয়োজন হবে।’

ইসি সচিবালয়ের আইটি অনুবিভাগের সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আকতার জানান, ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ১৮ হাজার ৮৯৫টি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানে আবার একাধিক ভোটকেন্দ্রও স্থাপন করা হয়।

ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকলে গণনাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করায় অসুবিধা দেখা দেয়।’

অতীতে ভোটকেন্দ্রে মোমবাতি সরবরাহ করা হতো। সর্বশেষ ভোলা-২ সংসদ উপ নির্বাচনে ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিদ্যুৎবিহীন ভোটকেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে চার্জার কিনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সরবরাহ করা হয়।

ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা জানান, এবার বিদ্যুৎবিহীন ভোটকেন্দ্রে দুটি করে চার্জার লাইট সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে এবার বরাদ্দ থাকছে ৬৭৫ কোটি টাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনের এসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন; সেই সঙ্গে নতুন অর্থবছরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য পাচ্ছে ৬০৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ভোটের জন্য ১২৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখুলেসুর রহমান বলেন, ‘ভোটের জন্য আমরা ১২ শ’ কোটি টাকার বেশি চেয়েছিলাম। আমরা যা চেয়েছি তা পেয়েছি। তেমন কাটছাঁট হয়নি।’

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের জন্যে প্রস্তাবিত বরাদ্দের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৭৫ কোটি টাকা; উপজেলা পরিষদের জন্য ৫৭৫ কোটি টাকা; পৌরসভার জন্য ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ১১ কোটি টাকা এবং কিছু সিটি করপোরেশনের ভোটের জন্য বাকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ইসির জন্য ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তাতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা ও উপজেলা পরিষদের জন্য সম পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল।

ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে। শেষ পর্যন্ত দশম সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যার ১৮৩ কোটি টাকাই আইন শৃঙ্খলা খাতে যায়।

ভোটের আগে হালনাগাদ হচ্ছে না ভোটার তালিকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা আর হালনাগাদের কোনো কর্মসূচি নেবে না নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে অক্টোবরের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের ভোটারের সিডি প্রস্তুত ও ভোটার তালিকা মুদ্রণ সম্পন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

গত জানুয়ারিতে হালনাগাদ শেষে বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার রয়েছে। এরাই একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
ইসি সচিব বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন আর নতুন করে হালনাগাদ কর্মসূচি নেওয়া হবে না।’

হালনাগাদ কর্মসূচিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিকল্পভাবে উপজেলায় এসে ভোটার হতে বিশেষ কর্মসূচিও থাকে। কিন্তু এবার তেমন কোনো বিশেষ উদ্যোগ রাখবে না সংস্থাটি।

তবে বাদ পড়া বা যোগ্য কেউ থাকলে চলমান প্রক্রিয়ায় তারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন বলে জানান ইসি সচিব। তিনি এও জানান, তৃতীয় লিঙ্গ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পর আগামী বছর থেকে হিজড়া পরিচয়ে তাদের ভোটার নিবন্ধন করা হবে। বর্তমানে তারা নারী বা পুরুষ পরিচয়ে নিবন্ধিত হচ্ছে।

‘প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার লক্ষ্যে হিজড়া পরিচয়ে নিবন্ধন করতে সময় লাগবে। তবে কেউ আবেদন করলে তাকে হিজড়া পরিচয়ে নিবন্ধন করা যেতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর।’

চলতি বছরের ৩০শে অক্টোবর থেকে আগামী ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!