• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে যেতেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৬, ২০১৬, ০৯:০৩ পিএম
সংসদে যেতেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

ঢাকা: টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এখন প্রাণপণ চেষ্টা সংসদে যাওয়া। এজন্য তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা পেলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনে যাবে।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এমন ইঙ্গিতই করেছেন। কেননা, আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। তাই যেভাবেই হোক, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা করবে তারা। তবে আপাতত তাদের লক্ষ্য সংসদে গিয়ে বিরোধী দল হিসেবে বসা।

২০০৬ সালের অক্টোবরে ক্ষমতা হারানোর পর টানা দুই বছর সংসদের বাইরে থাকে বিএনপি। এর দুবছর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধীদল হিসেবে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে ফের সংসদের বাইরে চলে যায় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটি। এরপর প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও সরকারকে চাপে ফেলে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায় করার মতো কিছুই করতে পারেনি দলটি। বাকি দুই বছরে কিছু করতে পারবে বলেও মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা।

এমন বাস্তবতায় বিএনপির বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে গেলে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। তবে সন্তোষজনক আসন নিয়ে প্রধান বিরোধীদল হতে পারবে বিএনপি।

এদিকে, বিএনপির যেসব নেতা রাজনীতিকে অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, তারা নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় প্রধানকে চাপ দিচ্ছেন। কারণ সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মিল, কল-কারখানা, ব্যাংক-বীমা, পোশাকশিল্প, শেয়ারবাজার, ঠিকাদারি- সবই চলছে ঠিকঠাক মতো।

দলীয় সূত্রমতে, দলের ভেতরে থাকা ওইসব সুবিধাবাদী ‘কুচক্রীর’ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির মূলধারার নেতারা। তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে আপাতত সংসদে যেতে হবে। ৭০/৮০ আসন নিয়ে বিরোধীদল হতে পারলেও রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করার সুযোগ থাকবে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির মূলধারার নেতারা কোনো অবস্থাতেই চান না, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের মতো নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যাক।
তা ছাড়া নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলে বিএনপি আর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হবে না। একটি সংগঠনে পরিণত হবে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের এমন পরিণতি দেখতে চান না বিএনপির মূলধারার নেতারা। তাই তারা সুবিধাবাদী-সুযোগসন্ধানী-পুঁজিপতি নেতাদের প্ররোচনা থেকে দলের হাইকমান্ডকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত হলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে জোটের শরিকদের জন্য ১০/১৫টি আসন ছেড়ে দেয়া হবে। লক্ষ্য থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে জিতে সরকার গঠন করা। আর তা যদি না-ও হয় আপাতত সংসদে যাওয়া।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটা দল। জন্মলগ্ন থেকে এ দলটি জনগণের ম্যানডেট নিয়ে হয় সরকারে, না হয় বিরোধীদলে থেকে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুধু ক্ষমতার জন্য বিএনপির রাজনীতি নয়, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই বিএনপির লক্ষ্য।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএন/আকন

Wordbridge School
Link copied!