• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মতৈক্য না হলেও ইসি অনড় ইভিএমে

সন্দেহের ইভিএমেই ভোট


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৮, ২০২০, ০২:৩০ পিএম
সন্দেহের ইভিএমেই ভোট

ঢাকা : ভোটের আর তিন দিন বাকি। প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত। প্রচারণা ঘিরে এরই মধ্যে উত্তেজনাও বাড়ছে। এরই মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এলেও থেমে নেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক।

তবু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ভোট হচ্ছে ইভিএমে। ভোটারদের ধারণা দিতে আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) অনুশীলন ভোটের আয়োজন করেছে ইসি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে। বিএনপি ইভিএমের বিপক্ষে। বিএনপির আশঙ্কা, ইভিএমে ডিজিটাল কারচুপি হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান আলাপকালে বলেন, ১  ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে এমনটি আমি আশা করি না। তাদের অতীতের যে কর্মকাণ্ড তাতে এই কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।

সাবেক এই উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে সততা ও কর্ম দক্ষতা থাকা উচিত সেটি নেই। ফলে আশা করা যাচ্ছে না নির্বাচন ভালো হবে।

ইভিএম ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞই এটি ব্যবহার চাননি। এমনকি বুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীও কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন ইভিএম ব্যবহার না করতে। তবে কেন এটি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক প্রার্থী এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

আমিও মনে করি, এখনই শতভাগ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের দরকার ছিল না। দুই সিটিতে পুরোপুরি না করে আংশিক ইভিএমে ভোট করা যেত। রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থায় আনার চেষ্টা করেনি ইসি। তাই ইভিএম ভোট নিয়ে বিতর্ক আরো বাড়াবে।

এদিকে, ভোটারদের সচেতন করতে শেষ মুহূর্তে উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। আজ একযোগে সব কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনী করা হবে। ভোটারা যেকোনো কেন্দ্রে গিয়ে ইভিএম ও এতে ভোট দান সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অনুশীলনমূলক ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রকল্পের অপারেশন প্লানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামানের সই করা এক চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ইভিএমে ভোট সহজ ও নিভর্রযোগ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ একেবারেই নেই, তা নয়।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ মনে করছে, দুটি জায়গায় ইভিএমে ভোট কারচুপি সম্ভব।

প্রথমত, ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙুলের ছাপে ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে পারেন। এভাবে ২৫ শতাংশ ভোটারকে কর্মকর্তা সুযোগ দিতে পারেন। এখানে কারচুপি হতে পারে। তবে ইসি বলছে, এবার সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার এই ক্ষমতা কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে আনা হবে।

দ্বিতীয় শঙ্কার বিষয় হলো, ইভিএমে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফল পরিবর্তন সম্ভব। কারণ, ইভিএমে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি নেই। অর্থাৎ যন্ত্রে ভোট দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রিন্ট কপি ব্যালট জমা হওয়ার সুযোগ নেই। তাই কারচুপি হলে তা প্রমাণ করা যাবে না। তবে ইসি বলছে, এ ধরনের সন্দেহ থাকলে যে কেউ বিশেষজ্ঞ এনে ইভিএম পরীক্ষা করতে পারে।

ইভিএমের প্রচলন শুরু করে যান শামসুল হুদা কমিশন। ২০১২ সালে প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ মোট ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০ শতাংশ। তবে ইভিএমের ছয়টি আসনে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এর আগে-পরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহূত হয়। পৌরসভা নির্বাচনে বেশিরভাগ সদর পৌরসভায় ভোট নেওয়া হয় ইভিএমে। রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন হয়েছিল ইভিএমে। তারপরও ইভিএম নিয়ে আস্থার সংকট কাটেনি। বিএনপি দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও ইভিএমের বিরোধিতা করছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন ইভিএম নিয়ে মতৈক্য হয়নি, তেমনি ভোটারদের বেশির ভাগ এখন পর্যন্ত ইভিএমের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত নন। বিএনপির মতো সিপিবিও ইভিএম নিয়ে শঙ্কায় আছে। ভোটারদের প্রশিক্ষণের বিষয় আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইভিএমে ইন্টারনেটের কোনো সংযোগ নেই। ফলে হ্যাকিংয়ের সুযোগ নেই। আঙুলের ছাপ বা স্মার্ট কার্ড বা ভোটার নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে ভোটার শনাক্ত করা হবে। ভোটারের ছবি পোলিং এজেন্টরা দেখতে পাবেন।

তাই জাল ভোট, ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট দেওয়া, একজনের ভোট অন্যজনে দেওয়া বা একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। অনুমোদিত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে ইভিএম চালু করা সম্ভব নয়। এক ভোট কক্ষের জন্য নির্দিষ্ট করা ইভিএম অন্য কোথাও ব্যবহার করার সুযোগ নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!