• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঝুঁকি নিয়েই মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে

সবাই পাচ্ছে না প্রবৃদ্ধির সুফল


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৩, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম
সবাই পাচ্ছে না প্রবৃদ্ধির সুফল

ঢাকা: বিনিয়োগ, ভোগ, সরকারি ব্যয় এবং আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব মিলছে না। সাম্প্রতিককালের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আদায়ের পরিমাণ যেমন কম, তেমনি করের আওতাও বাড়েনি। ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় উঠছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়। আর্থিক হিসাবে প্রবৃদ্ধি এলেও তার সুফল পাচ্ছেন না সবাই। অর্থনীতির মূল ভিত্তি ব্যাংকিং খাতের অবস্থাও ভালো নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। অর্থনৈতিক শঙ্কা ও সুশাসন নিয়ে আয়োজিত এক সভায় শনিবার (২২ জুন) বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘অর্থনৈতিক শঙ্কা ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ব্র্যাকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আনতে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে দাবি করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। হিসাবের খাতা মেলাতে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে বাড়তি সময় নষ্ট করা হয়নি বলেও এ সময় জানান মন্ত্রী।

আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, অধ্যাপক আবু আহমেদ, তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, ইউএনডিপির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সেলিম জাহান, বিআইডিএসের গবেষক ড. নাজনীন আক্তার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, বাংলাদেশ মহিলা দলের সভাপতি সৈয়দা আসিফা আশরাফ পাপিয়া প্রমুখ।

সিজিএস নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

এতে বলা হয়, ভোগ, সরকারি ব্যয় এবং আমদানি-রপ্তানির পরিবর্তনে জিডিপি কমে বা বাড়ে। কিন্তু দেশে জাতীয় আয়ের হিসেবে গরমিল রয়েছে। ভারসাম্যহীনতার কারণে সাম্প্রতিককালের বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায়ের পরিমাণ যেমন কম, করের আওতাও বাড়েনি। ফলে অন্যান্য বছরের মতো নতুন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, খাতার পাতা উল্টাতে বা ব্যালান্স শিট মেলাতে সময় শেষ না করে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ১১ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ সরকার দিয়েছে। এই স্থিতিশীলতা সরকার হাতছাড়া করতে চায় না। দেশের জনগণও চায় না। এই স্থিতিশীলতায় কেউ আঘাত করতে চাইলে জনগণই বাধা দেবে।

সরকারের পক্ষ থেকে যে উন্নয়নের দাবি করা হয়, তাকে ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক মূলধন। এ কারণে এ প্রবৃদ্ধি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খারাপ। তারল্য সংকট রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প যদি ৩০ হাজার কোটি টাকায় হাতে নেওয়া হয়, তাহলে সেটি কি প্রকৃত বিনিয়োগ হবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। ব্যাংকিং খাতে শক্ত কোনো সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। এ খাতে নজর দিতে হবে। অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বন্ড মার্কেট চালু করা সম্ভব নয়। এখানে করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে। সরকারিভাবে হলে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তবে বিশ্বাসের অভাবেই বন্ড মার্কেট কার্যকর হবে না।

আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ কোনো ব্যাংক মানছে না। এর পরও গ্যাসের দাম বাড়ার কথা উঠছে। সেবা খাতে ৫ টাকা বাড়ালে বড় সমস্যা হবে না। কিন্তু শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ২ টাকা বাড়লে এর ব্যপক প্রভাব পড়বে।

অধ্যাপক সেলিম জাহান বলেন, প্রবৃদ্ধি সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, ভাবতে হবে কিসের প্রবৃদ্ধি, কার জন্য প্রবৃদ্ধি এবং কেমন প্রবৃদ্ধি? এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। প্রবৃদ্ধির জন্য প্রবৃদ্ধি নয়, মানব উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। বৈষম্যের কারণে একসময় রাজনৈতিক বোমায় পরিণত হবে।

সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। ভারসাম্য না থাকলে কিছুই হবে না। ড. নাজনীন আক্তার বলেন, উৎপাদনশীলতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে পোশাক খাতের শ্রমিকদের দিকে নজর দিতে হবে।

নাজমা আক্তার বলেন, যারা বছরে তিন কোটি টাকা আয় করেন, তারা যদি সঠিকভাবে কর দেন তাহলে দরিদ্রদের ঘাড়ে করের চাপ আসত না।

সৈয়দা আসিফা আশরাফ পাপিয়া বলেন, উন্নয়নের প্রকৃত তথ্য জানার অধিকার সবার আছে। প্রকৃত তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!