• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবাইকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম
সবাইকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা

ঢাকা : পূর্বসূরিদের চেয়ে এবার বাজেট পেশে কিছুটা ভিন্নতা দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অবশ্য তার সামনেও রয়েছে আগের চ্যালেঞ্জগুলো। সেটি তিনি বাজেট বক্তৃতার শেষ অংশে নিজেই জানিয়েছেন।

বিদ্যমান সংকটগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট। ব্যাংক খাতে সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শেয়ারবাজার সংকট সামনে এসেছে বড় করে। কৃষক ধানের সঠিক মূল্য না পেয়ে অসন্তুষ্ট। রাজস্ব আহরণ সক্ষমতায় দুর্বলতা রয়েছে। অর্থব্যয়ে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। তবে সবকিছু স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এসব মেনেই তিনি গতকাল জাতীয় সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা করেছেন। অনেকটাই অতীতের বাজেটগুলো থেকে বাস্তবনির্ভর উদ্যোগের কথা এসেছে বাজেটে। তবে তিনিও বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ থেকে দূরে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের ওপর কেবল করের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাননি মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছেন, তা একেবারে উচ্চাভিলাষী বলা যাবে না। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন বাস্তবতার সঙ্গে। বিগত দিনগুলোতে অর্থমন্ত্রীরা ধারাবাহিক রাজস্ব আয়ে নির্ভর থাকতে চেয়েছেন। ফলে প্রতিবছরই বড় আকারের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে। এ খাতে কিছুটা সতর্ক তিনি। তাই শুরুতেই রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। বিশাল ব্যয়ের পরিকল্পনা সঙ্গে আয়ের নতুন কিছু পরিকল্পনার কথা বলেছেন তিনি।

অবশ্য এবার বাজেট ঘোষণার আগেই জানা যাচ্ছিল, সবাইকে খুশি করতে চান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল। এর আগে দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট দিয়ে গেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালকে একটি চাপ সামাল দিতে হয়েছে। ধারাবাহিক ব্যয় ও আয়ের সঙ্গে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কী চমক দিতে পারেন, সেটি দেখার বিষয়। তবে তাকে সমন্বয় করতে হবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে।

মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতার একটি চমৎকার শিরোনামও রেখেছেন। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ/সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। ১২৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় এবার বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। আর বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটটি দেশ পরিচালনায় সরকারের গত ১০ বছরের অভাবনীয় অর্জন, যা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। তার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী অবশ্য নিজেও বলেছেন, এবারের বাজেট হবে দেশের সব মানুষের জন্য। এতে পার্বত্য অঞ্চল যেমন বাদ যায়নি তেমনি বাদ যায়নি সমতল ও চরাঞ্চল। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের কেউ বাদ যায়নি। দেশের কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ব্যবসায়ী, বেদে, হিজড়া, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সব পেশার মানুষকে বিবেচনায় রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

অবশ্য অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটি কথা বারবার বলে এসেছেন, তিনি কারো বিপক্ষে নন। কেউ তার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যাবেন না। বাজেট প্রণয়নসংক্রান্ত সব আলোচনাতেও তিনি একই কথা বলেছেন। সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে ভালো কিছু করবেন তিনি। আর এই কাজে তিনি ব্যর্থ হতে চান না। তবে শুরুতেই হয়তো সবকিছু করতে পারেন- এমনটা আশা করেন না। তবে আস্তে আস্তে তার অর্থনৈতিক ভাবনার সুফল পৌঁছে দিতে চান প্রান্তিক মানুষের কাছে। প্রবীণ নাগরিকদের কথা মনে রেখেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে যাচ্ছেন। করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ালেও করের হার খুব বেশি বাড়াতে চান না।

এবার রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। বিরোধী রাজনৈতিক শিবির এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দুর্বল। রাজপথে সভা-সমাবেশ করার শক্তি হারিয়েছে বিরোধী শক্তিগুলো। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঝুঁকি নেই। তবে বাজেটের পরিবেশ শতভাগ পক্ষে নেই তার। প্রকৃতি কিছুটা বৈরী। অর্থনীতিতে বেশ কিছু সূচক নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

সর্বশেষ ধানের দাম নিয়ে কৃষকের অসন্তোষ রয়েছে। নানা কূটনৈতিক তৎপরতার পরও মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগানের বাইরে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ করতে হচ্ছে। ফলে অর্থনীতি স্বস্তিতে নেই। কিছুটা চাপ রয়েছে তার মাথায়। তবে হিসাববিদ হিসেবে চাপের প্রকাশ করছেন না তিনি। নীরবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে তার বাজেটে।

আয়ের লক্ষ্য : প্রস্তাবিত বাজেটে মুস্তফা কামাল আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অবশ্য রাজস্ব ঘাটতি থেকে এটি সংশোধন করে গতকাল উপস্থাপন করা হয় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন লক্ষ্যমাত্রা কোনো দিনই অর্জন হবে না।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী জোরালোভাবে বলেছেন, তিনি ব্যর্থ হবেন না। বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন বাজেটে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উৎস থেকে কর আহরণ করা হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত উৎস থেকে কর আহরণ করতে চান ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

ব্যয় কাঠামো : আগামী অর্থবছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত পরিমাণ ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। অবশ্য প্রস্তাবিত আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী পরিচালন ব্যয় ধরেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে উন্নয়ন ব্যয় প্রস্তাব করেছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যাবে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ব্যয়ের বড় একটি অংশ যাবে সুদ পরিশোধে। এর পরিমাণ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতি : নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে ধার করতে হবে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার উপস্থাপিত বাজেটে দেখা গেছে, মোট বাজেটের বড় একটি অংশ বিভিন্ন উৎস থেকে ধারদেনা করতে হবে জনতুষ্টির এই বাজেট বাস্তবায়নে। এর পরিমাণ প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। বাজেট বক্তৃতায় কামাল বলেছেন, ঘাটতি অর্থায়নে দুটি উৎসই ব্যবহার করবেন তিনি। বৈদেশিক উৎস থেকে ধার করবেন ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। অবশ্য এ জন্য অর্থমন্ত্রীকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আগামী অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করতে চান মুস্তফা কামাল, যা মোট জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেবেন ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা অর্থাৎ জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা বা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

অর্থাৎ বড় উৎস ভাবা হচ্ছে ব্যাংকব্যবস্থাকে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের উচ্চ ঋণ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে টানাটানি তৈরি করে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আর সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকবহির্ভূত অন্য খাত থেকে ধার করবেন ২৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এর পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

রাজস্ব বাড়ানোর বিশেষ পরিকল্পনা : কেবল ঘোষণাতেই থেমে থাকেননি অর্থমন্ত্রী। তিনি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করের জাল বিস্তার করতে চান। এজন্য দেশের প্রতিটি উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কর অফিস নিয়ে যাবেন। তবে করের হার বাড়াতে চাননি। তাই বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, এবার বাজেটের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না।

অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুপাতে আমাদের রাজস্ব আহরণ কম। এটি বর্তমানে মোট জিডিপির ১০ শতাংশ। তবে আগামী দুই বছরে এটি ১৪ শতাংশ উন্নীত করতে চান সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী। আগামী দিনগুলোতে কর প্রদানে যোগ্যদের করের আওতায় আনতে চান তিনি। দেশের ৪ কোটি মানুষ মধ্যম আয়ের অন্তর্ভুক্ত। অথচ কর দেন মাত্র ২২ লাখ মানুষ। এটি দ্রুততম সময়ে এক কোটি করতে চান অর্থমন্ত্রী।

ভ্যাট আইন : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাজেটে ভ্যাট আইন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন মুস্তফা কামাল। তবে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতাকে সম্মান দেখিয়ে তিনি বলেছেন, আইনটি কার্যকর করতে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। আর সব কর আইনগুলোতে আনতে চান সংস্কার। আগামী অর্থবছরে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইন সংস্কারের কথা বলেছেন কামাল। জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না তিনি। এখানে তিনি স্বচ্ছতার কথা বলেছেন জোরালোভাবে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি : চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের বিপরীতে প্রাথমিক হিসাবে অর্জন ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত দুই বছর ধরেই লক্ষ্যের চাইতে জিডিপিতে বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগামী অর্থবছরে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা বাজেটে এমন লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মূল্যস্ফীতি : জিডিপিতে বড় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের সফলতা আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ হিসাবে লক্ষ্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি। তবে প্রায় ১২ মাস কমতির দিকে থাকলেও গত তিন মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

ব্যাংক খাতের সংস্কার : প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত সংস্কারে বেশ কিছু চিন্তার কথা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাত শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কোনো ধরনের সংস্কার আমরা লক্ষ করিনি। ব্যাংক থেকে কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণ করে ঋণ শোধে ব্যর্থ হলে তার জন্য কোনো ধরনের ‘এক্সিট’-এর ব্যবস্থা ছিল না।

আমরা এবার এ কার্যক্রমটি আইন প্রক্রিয়ায় সুরাহার লক্ষ্যে একটি কার্যকর ইনসলভেন্সি আইন ও ব্যাংক্রাপ্টসি আইনের হাত ধরে ঋণগ্রহীতাদের এক্সিটের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বাড়াতে একটি ব্যাংক কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা আমরা দীর্ঘদিন শুনে আসছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদের আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ প্রদানে বাধ্য হতো। এতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এটা কখনো কখনো সংকট সৃষ্টি করে থাকে। এ-জাতীয় ভারসাম্যহীন অবস্থা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একটি গতিশীল বন্ড মার্কেটসহ অন্যান্য উপাদান যেমন- ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদির ব্যবহার উৎসাহিত করব।

পর্যায়ক্রমে আমরা ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়াব, ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন আনব, যাতে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অঙ্গগুলো যথা- ভ্যাট, কাস্টমস এবং আয়করসংক্রান্ত আইনসহ অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনবোধে ব্যাংক একীভূতকরণ ও প্রয়োজন হলে সেটা যেন আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা যায়, তার জন্যও ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

অসুস্থ ছিলেন অর্থমন্ত্রী : গত কয়েকদিন ধরেই জ্বরে আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী কয়েক দফা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল হাসপাতাল থেকে সংসদে যান নিজের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করতে। অসুস্থ শরীরেই বৃহস্পতিবার সংসদে গিয়ে বাজেট অধিবেশনে অংশ নেন তিনি। কিন্তু এরপর আবার তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।

বাজেট পড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী : অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি বক্তৃতা নিয়ে। ত্রাতা হয়ে এসে তার বাকি বক্তৃতা পড়ে দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের সময় এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে কোনো সরকারপ্রধান কখনো বাজেট বক্তৃতা দেননি।

অর্থমন্ত্রীর অপারগতায় কোনো প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতা পড়ে দিচ্ছেন, এমন ঘটনাও বাংলাদেশ এর আগে দেখেনি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি চাইতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন অসুস্থ কামাল, যার বাজেট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। অনুমতি কীভাবে চাইতে হবে, তা পরে অর্থমন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন স্পিকার। সে অনুযায়ী বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি নেন। বাজেট উপস্থাপনের অনুমতি চাওয়ার সময় দাঁড়িয়েই কথা বলছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট বক্তৃতা শুরু করার আগে বসে কথা বলার অনুমতি নিয়ে নেন তিনি।

স্পিকারকে কামাল বলেন, ‘আনফরচুনেটলি আমি অসুস্থ। অসুস্থতার কারণে সকল সময় দাঁড়িয়ে বলতে পারব না। তাই আমি আপনার কাছ থেকে অনুমতি চাচ্ছি মাঝে মাঝে বসে বাজেট পড়ার।’ শুরুতেই দেখানো হয় দুটি ডিজিটাল উপস্থাপনা। তারপর বাজেট বক্তৃতার খানিকটা পড়েন তিনি। কিছু সময় পর শরীর খারাপ লাগায় মুস্তফা কামাল ৫-৭ মিনিট বিরতি চাইলে স্পিকার তা মঞ্জুর করেন। ওই বিরতির পর অর্থমন্ত্রী আবারো বাজেট বক্তৃতা পড়তে শুরু করেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তার গলা ধরে আসছিল।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর শরীর খারাপ থাকায় আপনি অনুমতি দিলে আমি বাজেট বক্তৃতা পড়ে দিতে পারি।’ স্পিকার তাতে সম্মতি দিলে সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পড়ে শোনাতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। একপর্যায়ে একটি লাইন আসে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওই প্যারা পড়তে গিয়ে হেসে ওঠেন শেখ হাসিনা।

হাসতে হাসতে বলেন, ‘এগুলো কিন্তু আমার কথা না, আমি কিন্তু অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বাজেট প্রস্তাব পড়ছি।’ স্পিকার তখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় যেখানে যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, আপনি তা পড়বেন।’

মন্ত্রিসভার বৈঠক : বাজেট উপস্থাপন করার আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাজেটসংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি অংশ নেন। সংসদে তোলার জন্য এই বৈঠকেই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

সংসদে উপস্থাপনের আগে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিকাল ৩টার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!