• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ

সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে মাল্টা


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি আগস্ট ২৬, ২০২০, ০৬:১১ পিএম
সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে মাল্টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হল মাল্টা। ফলটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলে ও বর্তমানে সমতল ভূমিতে চাষ করছেন কৃষকরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার কৃষকরা মৌসুমীফল লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা । তারা পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বারি-১ মাল্টা পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত চার বছর ধরে মাল্টার আবাদ করে কৃষকরা। তবে মাল্টার আবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রথমে কিছুটা হতাশা কাজ করলে ও ফলন আশানুরোপ ভাল হওয়ায় তাদের হতাশা কেটে যায়। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে এই এলাকার বেশী ভাগ অনাবাদি জমি লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পাশাপাশি মাল্টা চাষ শুরু হয়। কম শ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ চাষ।

সরেজমিনে পৌর শহরের দুর্গাপুর, উপজেলার আখাউড়া উত্তরের চানপুর, আজমপুর, আনোয়ারপুর, কল্যাণপুর, দক্ষিনের হীরাপুর, কালিনগর, মোগড়া, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাগানে বাগানে দৃষ্টি নন্দন মাল্টা চাষ ধরেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা।

মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে, এবং এটি পরিপক্ক হয়ে কমলা রং ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। এরপর এটি বাজার জাত করা হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়া ও জেলার বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করা হয়। প্রতি বাগান থেকে ১৫-২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। যা স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা বিক্রি হয়।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের কৃষক মো. ইখলাছ মিয়া বলেন আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে তিনি বিদেশ যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তেমন ভাল করতে না পেরে অবশেষে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর বাড়ি সংলগ্ন পতিত জমিতে শুরু করেন লিচু, কাঁঠাল,পেপে, আনার, পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ। এতে তিনি ভাল ফলন পেয়ে তার উৎসাহ যেন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ইকলাছ মিয়া বলেন, গত ৪ বছর পূর্বে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি ২ বিঘা জমিতে মাল্টা বারি-১ জাতের ১২০টি গাছ রোপন করেন তিনি। দুই বছরের মাথায় এসে সবগুলো গাছেই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে ৯০-১২০টি মাল্টা ধরেছে। যা গত বছর তিনি ১লাখ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয় বলে জানায়। এ বছর গত বছরের চাইতে বেশী ফল এসেছে। গাছে ফল আসার পর বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করছেন বলে জানায়।

তিনি বলেন বর্তমানে মাল্টা ফলের যে অবস্থা আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বিক্রি করা যাবে বলে জানায়। গাছে ফলের সাইজ ভালো হওয়ায় ৪-৫টি মাল্টা ১ কেজি হয় । যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে এ মৌসুমে ২ লক্ষ টাকার উপর মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো বলেন লিচু, কাঁঠাল পেপে, আনার, পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে বছরে তার ২লাখ টাকার উপর আয় হয়। তার এই সফলতা দেখে অনেকেই ফল ও সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

পৌর এলাকার দুর্গাপুরের মো. শাহজাহান মিয়া বলেন লিচু, কাঁঠাল পেয়ারার পাশাপাশি তিনি মাল্টা বারি-১ চাষ করছেন। তার বাগানে ১০০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই ভালো মাল্টা এসেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি এ চাষ করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এ বছর দেড় লক্ষ টাকার উপর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরো বলেন মাল্টা হল একটি লাভ জনক ফল। এ চাষে কোন প্রকার লোকসান নেই। অর্থনীতির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানুষকে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল খাওয়ানো ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে তিনি এ চাষ শুরু করেছেন বলে জানায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাল্টা বারি -১ একটি উচ্চ ফলনশীল একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপণ করতে হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১০০ গাছ লাগানো যায়। এক ফুট বাই এক ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপণ করতে হয়। মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফুল আসতে শুরু করে। প্রথম মওসুমে ফলন একটু কম হয়। পাঁচ বছর বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মাল্টা পাওয়া যায়।

আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান ভূইয়া স্বপন বলেন, আমাদের এলাকায় আগে মাল্টা চাষাবাদ তেমন বেশী পরিচিতি ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এলাকায় প্রতিটি মাল্টা বাগানে দৃষ্টি নন্দন মাল্টা ধরেছে। ফলন ভাল হওয়ায় মাল্টা আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। তবে এ বাগান করতে হলে কৃষককে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন এখানকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপকারী হওয়ায় ফলন ভাল করতে কৃষকদেরকে এ চাষে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি জানায় মাল্টার আবাদ আগামী দিনে অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!