বাগেরহাট : জেলার শরণখোলায় চলতি (পিএসসি) পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক ও এবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এক শ্রেণীর অসাধু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নানা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের সুনামসহ শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য এক শ্রেণীর অসাধু শিক্ষকদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতি বছর নানা কৌশলে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (১৮ নভেম্বর) শরণখোলা উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ১১৪টি প্রাথমিক, ৫৯টি আনন্দ ও ২০টি মাদ্রাসার অনুকূলে ৮টি কেন্দ্রে ২৬৮৪ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উপজেলার জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার ৫, ৬ ও ৭নং কক্ষে উত্তর তাফালবাড়ী মান্নান হাওলাদারের বাড়ি, উত্তর তাফালবাড়ী ফারুক হাওলাদারে বাড়ি, উত্তর তাফালবাড়ী লুৎফর রহমান বাড়ি, ক্ষিতিশি চন্দ্রের বাড়ি, কদমতলা এমাদুল হকের বাড়ি, উত্তর তাফালবাড়ী হক ফরাজী বাড়ি, কাঞ্চন জোমাদ্দার বাড়ি, রনজিৎ হাওলাদার বাড়ি, মজিব রহমান বাড়ি, রায়েন্দা বাজার তৌহিদের বাড়ি, ডা. সাইয়েদুর রহমান বাড়ি, দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া আ. আজিজ মোল্লার বাড়ি, পূর্বমাথার শান্তিরঞ্জন বাড়ি, মালিয়া দেলোয়ার মোল্লার বাড়ি, রাজাপুর আলী হোসেনের বাড়ি আনন্দ স্কুলের অনুকূলে ১৩৩৮, ১৭৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৯৩, ১৬৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯ নং রোল নম্বরের প্রায় ৩০/৩৫ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিলেও এদের অধিকাংশ উপজেলার আর,কে,ডি,এস পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তাফালবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুলের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
ওই কেন্দ্রে চলতি পিএসসি পরীক্ষায় নেয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া, মরিয়ম ও রাবিনা জানায়, তারা আর,কে,ডি,এস বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। তাদের এলাকার একটি আনন্দ স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, স্কুলের সুনাম বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর কতিপয় অসাধু শিক্ষকদের একটি শক্তিশালী চক্র বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ছাত্র সাজিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করান। এবং একাধিক কেন্দ্র থাকার সুযোগে প্রশাসনের তেমন নজরধারী না থাকায় শিক্ষকরাই নকল সরবরাহ করে পাশের হার বৃদ্ধি করেন। এতে তাদের পাশাপাশি স্কুলের সুনাম বৃদ্ধি পেলেও বঞ্চিত হয় প্রকৃত শিক্ষার্থীরা। ওই চক্রসহ অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের লাগাম টানতে না পারলে অভিবাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যতই কষ্ট করুক ফলাফল ভালো হবে না।
এ ছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন চর্চা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তারা পড়ালেখায় আগ্রহ হারাবে। এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রের হলো সুপার প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের আকার আকৃতি দেখলেই মনে হয় এরা যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও মাদ্রাসার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। কিন্তু যথা উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে পরীক্ষা থেকে ওই শিক্ষার্থীদের আটকানো যায় না। এ ব্যাপারে আনন্দ স্কুলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনের ০১৭১১০১৪৬৭৩ নং মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। অপরদিকে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম যোগসাজশের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আনন্দ স্কুলের সঙ্গে জড়িতদের জন্য শিক্ষা বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন হলে তা মেনে নেয়া হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, অভিনব এ জালিয়াতির বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর
আপনার মতামত লিখুন :