• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্ক অটুট রাখা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশ্লেষকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক  অক্টোবর ১৫, ২০১৬, ১০:৪৬ পিএম
সম্পর্ক অটুট রাখা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশ্লেষকরা

চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব

পরস্পরের প্রতি বৈরী বিশ্বের অত্যতম দুই বৃহৎ রাষ্ট্র চীন ও ভারত। অঘোষিতভাবে এ দুই রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত স্নায়ুযুদ্ধে জড়িত। এ অবস্থায় আরো নিবিড়ভাবে চীনের সঙ্গে উন্নয়ন সমঝোতায় যুক্ত হলো ঢাকা। এদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেবল উন্নয়নের নয়, বরং বলা যায় জন্ম-জন্মান্তরের। অভ্যুদয়ের সহযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। অন্যদিকে চীন ছিল বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার বিপক্ষে। স্বাধীনতার চার বছর পর তারা স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। 

এখন ভূ-রাজনীতির চিত্র বদলে গেছে। বদলে গেছে বাংলাদেশের ‘অঘোষিত কূটনীতির’ খোল-নলচেও। তাই বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন রোড ম্যাপের’ বড় সহযোগীর তালিকায় এখন চীনও। পরম মিত্রের খাতায়ও তাদের নাম সমুজ্জ্বল। ঢাকার এই নতুন সমীকরণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তবে এই রাখী বন্ধনকে অটুট রাখাকে চ্যালেঞ্জও মনে করছেন তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের উন্নয়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে অত্যন্ত কৌশলী হতে হবে। আকস্মিক বা হঠাৎ উদ্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা এমনটি মন্তব্য করেন। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী  সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ যেমন চীনের সঙ্গে কাজ করছে তেমনি ভারতের সঙ্গেও করছে। উন্নয়নের স্বার্থে সবার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে হবে।’ তিনি মনে করেন ‘এখন পর্যন্ত চীন গঠনমূলক, কাজেই আতঙ্কের কোনো কারণ  নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারত এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এখানে মনে রাখা দরকার চীনের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে তা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ সংক্রান্ত। নিরাপত্তাবিষয়ক বা সামরিক সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে এ  ক্ষেত্রে ভারতের অসন্তোষের কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। বরং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তিগুলো হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে ভারতও নানাভাবে লাভবান হবে। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক একসঙ্গে এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের  রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, চীন কিংবা ভারতের অঙ্গরাজ্য নয়। উভয়ের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনভাবে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ভারত যদি বলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাহলে আমরা এটা মানব কেন? আবার চীন যদি বলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না তাহলেই বা মানব কেন?’ 

সেলিম বলেন, ভারত এবং চীন উভয়েই আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। স্বাধীন অবস্থানে থেকে উভয়ের সঙ্গেই আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র আসলেও সেটা মোকাবিলার মধ্য দিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (একাংশের) কার্যকরী সভাপতি ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইনুদ্দীন খান বাদল বলেন, চীন এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কাজটা সহজ নয়। তবে এটা করতে হবে আপন শক্তিতে এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে এ পরিপ্রেক্ষিতে আপন মর্যাদা বজায় রেখে উভয়ের সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব, যা আগে আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।  

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ বলেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে যুগপৎ সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া অত্যন্ত জটিল। তবে সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতা থাকলে এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রকার সামরিক চুক্তি হয়নি। যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো অর্থনৈতিক। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা নানাভাবে সমঝোতা করছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম 
 

Wordbridge School
Link copied!