• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার চায় শরিকরা বিরোধী দলে থাকুক


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৮, ২০১৯, ১১:৫৫ এএম
সরকার চায় শরিকরা বিরোধী দলে থাকুক

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকতে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংসদে বিরোধী দলগুলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে যে ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমন বিরোধীদলের ভূমিকায় শরিক দলগুলোকে দেখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। তবে সংসদে বিরোধী দল হওয়া নিয়ে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে দেখা দিয়েছে মতানৈক্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েকটি দল বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকতে চাইলেও অন্যান্য দলের নেতারা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন। ফলে আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের মধ্যে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলো বিরোধীদলে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কী না, এ প্রশ্নও উঠেছে। যদিও দলগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দলীয় ও জোটগত বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

ভিন্নমত পোষণকারী দলের নেতাদের দাবি- বিরোধী জোটে নয়, ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক হিসেবেই সংসদে থাকবে দলগুলো। একই প্রতীকে নির্বাচন করার পর এখন তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন্ন তুলেছেন তারা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের পর ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক কয়েকটি দলের বিষয়ে আওয়ামী লীগের আর কোনো ‘আগ্রহ’ নেই বলেও অভিযোগ তাদের।

সরকারের চাওয়া মত বিরোধীদলে গেলে আদর্শিক এ জোটের ঐক্য অটুট থাকবে না বলেও তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন। তবে বিরোধীদলের আসনে না বসলেও সংসদ প্রাণবন্ত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার পক্ষেও তারা কাজ করতে চান। নতুন সরকারে মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় কোনো ক্ষোভ নেই বলেও দাবি করেন তারা।

আবার যারা বিরোধী দলে থাকতে আগ্রহী, সেসব নেতার যুক্তি হলো- সরকার ও বিরোধী দলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের শরিকরা বিরোধী দলে থাকলে তা তাদের জন্যও ভালো আর সরকারের জন্যও ভালো। কারণ, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে সরকারের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতে সুবিধা হয়। দায়িত্বশীল বিরোধিতা দেশের গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

১৪ দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি বসতে যাওয়া সংসদে জোট শরিক সব দলের নেতাকে বিরোধীদলের আসনে বসাতে চাওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন নেতার কথায়। যদিও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি দলগুলোর সঙ্গে। নির্বাচনের পর গত ৩ জানুয়ারি বৈঠক হয়েছিল ১৪ দলের। বৈঠকে সংসদে সরকারি ও বিরোধী জোটে থাকার অবস্থান নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

শরিক দলের নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে শিগগিরই সরকারের সঙ্গে আলোচনায়ও আগ্রহী তারা। নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী ২০ জানুয়ারি পলিটব্যুরোর সদস্যদের বৈঠক ডেকেছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

এ ছাড়া আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদের (আম্বিয়া) একাংশ ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে অনেকে বিরোধীদলের ভূমিকা পালনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানা যায়, মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) একাদশ সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকছে। তবে মহাজোটের আরেক শরিক বিকল্পধারা বিরোধী দলে থাকতে আগ্রহী নয়। বিকল্পধারা সরকারে থাকার পক্ষে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি ও তরীকত ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে বিরোধী দলে থাকতে তাদের আপত্তির বিষয়টি জানা যায়। তবে তাদের শরিক সাম্যবাদী দলসহ আরো কয়েকটি দল সংসদে বিরোধী দলে থাকতে আগ্রহী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসবে ১৪ দলের শরিকরা। তারা শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবেন। সংসদে তারা বিরোধী দলের আসনে বসলে আর দায়িত্বশীল বিরোধিতা যদি তারা করেন, সেটা সরকারের জন্য ভালো, তাদের জন্য ভালো। ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট, রাজনৈতিক জোট। এটি কোনো নির্বাচনী জোট নয়।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শরিকরা বিরোধীদলের ভূমিকায় গেলে ১৪ দলের ঐক্য থাকবে না। সরকারের প্রতি অনাস্থা ও বাজেট পাস করার ক্ষেত্রে সরকারকে আমাদের সহায়তা করতে হবে। এ দুটি বিষয় ছাড়া অনেক বিষয়ে আমরা সরকারের কোনো প্রস্তাবিত আইন বা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দিতে পারব- এ বিধান থাকা উচিত। তাহলে সংসদ সদস্যরা ভেবেচিন্তে অবদান রাখতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শরিকরা বিরোধী দলে গেলে ভালো হয়। তিনি যদি সেটা মনে করেন, তাহলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।’

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমরা জোটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই থাকব। এ মুহূর্তে আমরা জোটে আছি, এর ভিত্তিতেই দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেব।’

বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারের সহায়তা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধী দলে যাওয়া ঠিক নয়। এটা নৈতিকভাবে ভুল।’

তবে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া মনে করেন, ‘শরিকদের বিরোধী দলে ঠেলে দেওয়ার পেছনে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে একটা নতুন দিকদর্শন দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকবে, একই শক্তি বিরোধী দলেও থাকবে।’

জাতীয় পার্টির (জেপি- মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বিরোধী দলে যাবেন না। অন্যদেরও বিরোধী দলে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!