• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি নৌযান তৈরি, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৬, ১১:৫০ এএম
সরকারি নৌযান তৈরি, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা

সরকারি নৌযান তৈরির নামে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি চক্র অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সে লক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে যথাযথ বিধি অনুসরণ না করেই ক্রয় সক্রান্ত মন্ত্রিসভার অনুমোদনের তোড়জোড় চলছে। আর যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নৌযান তৈরির চেষ্টা চলছে ইতিপূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানটি থেকে একাধিক নৌযান ক্রয় করা হলেও তা এখনো ডকেই পড়ে রয়েছে।

নৌযান তৈরির নামে অর্থ নয়ছয়ের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, নৌ মন্ত্রণালয় সচিব, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর মহাপরিচালক এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন বিভাগের মহাপরিচালক বরবার অভিযোগপত্রও জমা পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র মতে, বিআইডব্লিউটিএ মোট ৮টি নৌযান তৈরির জন্য চলতি বছরের ২২ জুন দরপত্র আহ্বান করে এবং শেষ তারিখ ছিল ১৯ জুলাই। ওই সময়ে ঈদের কারণে ৯ দিন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দরপত্র দাখিলের সময় বাড়ানো হয়নি। তাছাড়া দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে পিপিআর-২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি দরপত্রের নোটিশে প্রি-টেন্ডার মিটিংয়ের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

অথচ স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট অনুযায়ী এই ধরনের দরপত্রে প্রি-টেন্ডার মিটিং থাকা খুবই জরুরি। তাহলে সকল আগ্রহী দরদাতা ও ক্রয়কারী সংস্থা পারস্পরিক আলোচনা করে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক দর প্রস্তাব নির্ধারণ করা সম্ভব হতো। অথচ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রি-টেন্ডার মিটিয়ের জন্য আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি।

বরং চক্রটি আখের গুছাতে নীল নকশার মাধ্যমে একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বলে বিবেচনা করে। যে প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্তাদি পূরণে অক্ষম। তারপরও বিতর্কিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে ওই প্রতিষ্ঠানকে নৌযান তৈরির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, বিআইডব্লিউটিএর একটি টাগবোট, ৫টি ছোট ক্রেইট বোট, ৫টি ছোট ক্রেইন বোট, একটি হাউজ বোট, পাইপ বহনকারী বার্জ ৩টি, সেলফ প্রোপেল বার্জ ২টি এবং বল সকেট ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু দরপত্রে ৮টি ক্লাশ ভেসেল তৈরির জন্য দরদাতার অভিজ্ঞতা হিসাবে সুনির্দিষ্টভাবে ১২টি ক্লাশ ভেসেল তৈরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। 

কিন্তু ওই শর্তানুযায়ী দরপত্রটি বৃহৎ পরিসরে উন্মুক্ত করা হয়নি। শুধুমাত্র দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ৩ দরদাতার মধ্যে দুজনকে বাদ দিয়ে বিশেষ একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। অথচ ওই কোম্পানির দাখিলকৃত দর অন্য দুই দরদাতার চেয়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেশি। তারপরও অসাধু চক্র পরিকল্পিতভাবে তাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠান থেকেই নৌযান তৈরিতে মরিয়া।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়- বিআইডব্লিউটিএর মনোনীত কোম্পানি থ্রি-এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ-এর ১২টি ফুল ক্লাশ ভেসেল সরবরাহের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যদিও দরপত্রে ওই শর্তটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তাছাড়া ইতিপূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিআইডব্লিউটিএ ৯টি ছোট আকারের ক্লাশ ভেসেল তৈরি ও সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছিল।

কিন্তু আজ পর্যন্ত ওসব ভেসেলের কাজ সম্পন্ন এবং সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটির ডকইয়ার্ডেই অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ ভুয়া সরবরাহ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানকেই আবারো নৌযান সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ডেজিং) আতাহার আলী সরকারের সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!