• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের এক মাস পূর্ণ


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯, ০২:২৫ পিএম
সরকারের এক মাস পূর্ণ

ঢাকা : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত টানা তৃতীয়বারের মতো সরকারের পথচলার বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক মাস পূর্ণ হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদের কোনো সরকারকে মাত্র একটি মাস দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নতুন কোনো সরকারের শুরুটা কেমন, তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলো কী, এক মাসে জনগণের মধ্যে নানাভাবে আরো প্রত্যাশার জন্ম তারা দিতে পেরেছে কি না ও জনপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, বা কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সেসব দিক নিয়ে সরকারের আলোচনা, সমালোচনা ও মূল্যায়ন হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো সরকারের যাত্রা শুরু হয় চমকপ্রদ নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় দলটি। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা দফতরের কাজ শুরু করেন সেই লক্ষ্যে। জনসাধারণের সঙ্গে যে প্রতিশ্রুতি দেন তারা, সেগুলো বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বড় প্রকল্পে। সরকার গঠনের পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেন তারা। দায়িত্বের প্রথম দিনেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। গত এক মাসে সে লক্ষ্যে তারা নানা পদক্ষেপ ও উদ্যোগও নেন। প্রায় সব মন্ত্রণালয়ই নতুন উদ্যম ও প্রেরণায় নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নতুন প্রকল্প শুরুর পরিকল্পনা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের চতুর্থ সরকারের প্রথম কার্যদিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেন তিনি। নতুন সরকার দুর্নীতির পাশাপাশি মাদকের ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে তা আলোচনার জন্ম দেয়। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আর উন্নয়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পথচলার শুরুতে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) আরো সক্রিয় হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দুদকের অনুসন্ধানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যও উঠে আসছে। এর থেকে বাদ যাচ্ছেন না আমলা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীরা পর্যন্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির সন্ধান চালাচ্ছে দুদক।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্য সহনশীলতা) নীতি গ্রহণের পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূলের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। নতুন সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। দুর্নীতিকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে এনে সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলেও অনেক বিশ্লেষকের দাবি। তবে দুর্নীতিবাজ ও মাদক কারবারি রাঘববোয়ালরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। পর্যায়ক্রমে তারাও একে একে তাদের সরকার অভিযানের আওতায় আনবে বলে বিশ্লেষকরা আশাবাদী।

সরকারি খাস জমি দখল, নদীদূষণ আর অনিয়মের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের সব এলাকায় নদী দখলের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কয়েকটি এলাকার উচ্ছেদ অভিযানে ইতোমধ্যে প্রশংসিত সরকারের এসব কার্যক্রম। ঢাকার বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করতে দ্বিতীয় দফা অভিযানের গতকাল দ্বিতীয় দিনেও বিকাল ৫টা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ২৫ থেকে ৩০টি বহুতল ভবন। ভেঙে ফেলা হয় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনও। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ভবন গড়ে তৈরি করলেও অভিযান থেকে তাদের রক্ষা মেলেনি।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল দেশের সব মানুষ বা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতের অঙ্গীকার পূরণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে গতকাল বুধবারও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের আগেই দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আরইবির আওতাধীন ছয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত নতুন নয়টি গ্রিড উপকেন্দ্র, সন্দ্বীপ উপজেলায় বিশেষায়িত বিদ্যুতায়ন ও ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদিকে নতুন সরকারের এক মাস পূর্ণ হওয়ার সময়ের মধ্যেই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ল আরো এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। মাত্র দশ বছর আগেও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল দেশের ঘরে ঘরে। দীর্ঘদিন দেশের প্রত্যন্ত জনপদ আলোর মুখ দেখেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অতিক্রম করেছে ২০ হাজার মেগাওয়াটের ধাপ। এখন সব মিলিয়ে দেশের ১২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ২১ হাজার ৯১৬ মেগাওয়াট।

অভিজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের শুধু উৎপাদন বাড়াতেই নয়, সঞ্চালন সম্প্রসারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালু হয়েছে নয়টি গ্রিড উপকেন্দ্র। সাবমেরিন ক্যাবল প্রযুক্তিতে সাগরের তলদেশ দিয়ে এবার বিদ্যুৎ পৌঁছেছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপেও। নতুন সরকার শুরু থেকেই সড়কপথের উন্নয়ন ও নদীভাঙন রোধ প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেয়। গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নতুন সরকারের একনেক বৈঠকে এক হাজার ৮৯৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পথচলার শুরুতেই দুস্থ প্রসূতি ও তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নগদ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাদের সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পযন্ত সহায়তা দেবে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার পাঁচ লাখ মানুষ এ সুবিধা পাবেন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো এ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নগদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর দৃষ্টি রাখছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনাও সরকারের চ্যালেঞ্জ। নতুন সরকারের আমলে এ খাতে এখনো পর্যন্ত নেতিবাচক কিছু ঘটেনি। পুলিশের করা বিভিন্ন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও সঠিক নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!