• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-লিটনে পাহাড় ডিঙিয়ে জিতল বাংলাদেশ


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ১৭, ২০১৯, ১১:৩১ পিএম
সাকিব-লিটনে পাহাড় ডিঙিয়ে জিতল বাংলাদেশ

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: ৩২১ রানের পাহাড় ডিঙিয়ে জয় তুলে নেওয়া মুখের কথা নয়। অসাধ্য এই কাজটি কী অবলিয়ায় না করে গেলেন সাকিব আল হাসান। কখনো কখনো সহায়তা করেছেন তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকাররা। আলাদা করে বলতেই হয় বিশ্বকাপে এই ম্যাচেই অভিষিক্ত লিটন দাসের কথা। সাকিবের সঙ্গে শেষ অবধি দুর্দান্ত ব্যাট করে গেলেন তিনি। শেষ অবধি ৭ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ৫১ বল হাতে রেখেই। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচের রাশ একবারের জন্যও ক্যারিবীয়দের কাছে যায়নি। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুঁরে দেয়া বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নেমে বাংলাদেশ দলকে দারুন সূচনা এনে দিয়েছেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ৫২ রানের এই জুটি ভেঙে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। এরপর দুর্দান্ত খেলছিলেন দুই বন্ধু তামিম আর সাকিব। ফিফটি থেকে মাত্র দুই রান দুরে থাকতে রানআউটে কাটা পড়েন তামিম। হতাশ করলেন মুশফিকও। তবে টানা চতুর্থ ফিফটিটাকে সেঞ্চুরিতে ‍রুপ দিয়েছেন সাকিব। এবারের বিশ্বকাপে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারে নবম। শেষ অবধি সাকিব-লিটনই বাংলাদেশের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। সাকিব ৯৯ বল খেলে ১২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাউন্ডারি মেরেছেন ১৬টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর কয়েকটা রান বেশি করলে সেঞ্চুরি করতে পারতেন লিটনও। তিনি শেষ অবধি ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৬৯ বলে খেলা তাঁর এই ইনিংসে ছিল আটটি চার ও চারটি ছক্কা। 

এরআগে শাই হোপ, এভিন লুইস ও  শিমরন হেটমেয়ারের ব্যাটে ৮ উইকেটে ৩২১ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। ফলে জয়ের জন্য টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২২ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুন শুরু করে টাইগাররা। ওপেনিং জুটিতে উঠে গিয়েছিল ৫২ রান। নবম ওভারের প্রথম বলে আন্দ্রে রাসেলকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা মারলেন সৌম্য। পরের বলেই ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপে। ২৩ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ২৯ রান করা সৌম্যর বিদায়ে ভাঙল ৫২ রানের ওপেনিং জুটি। তামিম ইকবালের সঙ্গী হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

সৌম্যর বিদায়ের পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে হাত খুলে খেলা শুরু করেন তামিম ইকবাল। তার সঙ্গী সাকিব আল হাসানও দুর্দান্ত খেলছেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রান করে ফেলেছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। দ্বিতীয় উইকেটে এসে গেছে ৬৯ রান। তখনই ছন্দপতন। শেলডন কটরেলকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে আউট হলেন ৪৭ রান করা তামিম। কটরেল নিজেই সরাসরি থ্রোতে তামিমের স্টাম্প ভেঙে দেন। তারপর মুশফিকুর রহীমও বেশিদূর যেতে পারেননি। ওসানে থমাসের বলে মাত্র ১ রান করে উইকেটরক্ষক শাই হোপের ক্যাচ হয়েছেন মিডল অর্ডারের এই ভরসা।

মুশফিকুর রহিম হতাশ করলেও বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাকিব। এর মধ্যে একটি আবার সেঞ্চুরি। আজ উইন্ডিজের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজের ক্যারিয়ারের ৪৫তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ৪০ বলে ৭ বাউন্ডারিতে। আজই তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রান পূরণ করেছেন। চলতি আসরে আগের চার ইনিংসে তিনি করেছিলেন যথাক্রমে- ৭৫, ৬৪ এবং ১২১ রান। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৪৫ রান। সাকিব আল হাসান ৫৪ এবং লিটন দাস ৩ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন।  

সোমবার (১৭ জুন) টনটনে টস জিতে উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ক্যারিবীয়দের চেপে ধরে মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সেই ধারাবাহিকতায় কোন রান করার আগেই মারকুটে ব্যাটসম্যান গেইলকে সাজঘরের টিকেট হাতে ধরিয়ে দেন সাইফুদ্দিন। তার সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল গেইলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় মুশফিকুর রহিমের সামনে। ঝাঁপিয়ে ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করেন এই উইকেটকিপার। ১৩ বল খেলে কোন রান না করেই আউট গেইল।

মাত্র ৬ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে সতর্কতার সঙ্গে ব্যাট করছেন শাই হোপ ও এভিন লুইস। আস্তে আস্তে হাত খুলে খেলা শুরু করেন তারা। এভিন লুইস তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত লুইসকে শিকার করে ১১৬ রানের জুটি ভাঙেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাব্বির রহমানের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৬৭ বলে ৬টি চার আর ২টি ছক্কায় ৭০ রান করেন এই মারকুটে ওপেনার। সঙ্গী হারিয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শাই হোপ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা তার টানা ৬ষ্ঠ ফিফটি।

এরপর উইকেটে এসে রানের জন্য ছটফট করছিলেন নিকোলাস পুরান (২৫)। তাকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। লং অন থেকে দারুন ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। বিধ্বংসী শিমরন হেটমায়ার উইকেটে এসেই তাণ্ডব শুরু করেছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমানের ওপরেই তার ঝড়টা বেশি গেছে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ২৫ বলে।

শেষ পর্যন্ত এই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে তামিম ইকবালের তালুবন্দি করেন মোস্তাফিজ। ক্রিস গেইলের মতো আরেক ভয়ঙ্কর আন্দ্রে রাসেলও ফিরেছেন শূন্য হাতে। কাটার মাষ্টারের বলে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই দানবীয় ব্যাটসম্যান। শিমরন হেটমায়াররের মতো জেসন হোল্ডারও উইকেটে এসেই পেটাতে শুরু করেন বাংলাদেশের বোলারদের। শেষ পর্যন্ত উইন্ডিজ অধিনায়ককে বিদায় করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হওয়ার আগে ১৫ বলে ৪টি চার আর ২টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন হোল্ডার।

৬ উইকেট হারিয়েও সেঞ্চুরির পথেই এগোচ্ছিলেন শাই হোপ। কিন্তু শতক থেকে মাত্র ৪ রান দুরে থাকতে মোস্তাফিজের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান এই ক্যারিবীয় ওপেনার। লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায়ের আগে ১২১ বলে ৪টি চার আর ১টি ছক্কায় ৯৬ রান করেন তিনি। এরপর ১৫ বলে ১৯ রান করে ইনিংসের শেষ বলে সাইফউদ্দিনের তৃতীয় শিকার হন ড্যারেন ব্রাভো। ততক্ষণে উইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে ৮ উইকেটে ৩২১ রান জমা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ২টি উইকেট।

টনটন বাংলাদেশের জন্য অপরিচিত মাঠ। এর আগে কখনই এই মাঠে খেলা হয়নি টাইগারদের। ইংল্যান্ডের অন্যান্য মাঠের তুলনায় এই মাঠটি ছোট। তাই বাংলাদেশের আজকের চ্যালেঞ্জ, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলদের মতো ক্যারিবীয় হার্ডহিটারদের শুরুতেই থামিয়ে দেওয়া।

প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝড়ো ব্যাটিং শক্তি- টন্টনের স্পোর্টিং উইকেট এসব অনুষঙ্গকে বিবেচনা রেখে বাংলাদেশ এই ম্যাচে খেলাচ্ছে লিটন দাসকে। একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন অফ ফর্মে থাকা মোহাম্মদ মিথুন।

সোনালীনিউজ/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!