• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাত সুন্দরীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করে কোটিপতি যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৮:৩৬ এএম
সাত সুন্দরীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করে কোটিপতি যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া

ঢাকা: পুরো নাম শামিমা নূর পাপিয়া। তবে পিউ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সেক্রেটারি তিনি। এই নেত্রীর প্রকাশ্য আয়ের উৎস গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে তিনি মূলত অ'বৈ'ধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা করতেন। কোনো কাজ বাগিয়ে নিতে পাঁচ তারকা হোটেলে সুন্দরী তরুণীদের পাঠিয়ে মনোরঞ্জন করতেন সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের।

র‌্যাব বলছে, গত তিন মাসে তিনি শুধু ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলেই বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সবসময় তার নামে বরাদ্দ থাকত। হোটেলটির বা'রে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ' তার বার্ষিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব ব্যাপারে অনুসন্ধান করছিল র‌্যাবের একটি দল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শনিবার সকালে তড়িঘড়ি করে দেশত্যাগের চেষ্টা চালান পাপিয়া।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ তারকা হোটেল থেকে চার নারীকে আটক করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অ'সামা'জিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী।

গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- পাপিয়ার স্বামী ও তার অ'বৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়ি্যবা ও সাব্বির খন্দকার। তাদের কাছে পাওয়া গেছে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলংকান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন।

এ ব্যাপারে জানাতে শনিবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, গাড়ির ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সমাজসেবার নামে তিনি নরসিংদীর অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে আসছিলেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানে তার ও তার স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদারদের অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য নারী সবরবরাহ করাই ছিল তার মূল কাজ। নরসিংদীতে চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ে নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। তিনি গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে বুক করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। সেখানে তার অধীনে থাকা সাত নারীর কথা জানতে পেরেছে র‌্যাব। তাদের তিনি প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে টাকা দিতেন।

মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, দেশে স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অ'নৈ'তিক কর্মকা'ণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। তিনি স্ত্রীর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। নরসিংদীর 'কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন' নামের প্রতিষ্ঠানটির আড়ালে চলে মা'দ'ক ব্যবসা। জেলা শহরের বাইরে গেলে ক্যাডার বাহিনী তাকে বিশাল গাড়িবহরের মাধ্যমে মহড়া দিয়ে থাকে। অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে আয় করা টাকায় নরসিংদী ও ঢাকায় তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।

পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়ি্যবা ও সাব্বির খন্দকার জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা সবসময় পাপিয়ার সঙ্গে থাকতেন। তার ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব ও রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। পাশাপাশি তার সব অবৈধ ব্যবসা, অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি দিতে সহযোগিতা করতেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুইয়া বলেন, অনেক দিন ধরেই পাপিয়া নানা অ'পক'র্মে জড়িত। এলাকার এক এমপি তাকে হঠাৎ যুবলীগে ভিড়িয়েছেন। এর দায় তাকেই নিতে হবে।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, ছয় বছর ধরে পাপিয়া যুবলীগের কমিটিতে রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য তার জানা ছিল না।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!