• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সান্ত্বনা দিতেই বন্ধুর বোনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান


বান্দরবান প্রতিনিধি মার্চ ২৫, ২০১৯, ০৭:১৮ পিএম
সান্ত্বনা দিতেই বন্ধুর বোনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

বান্দরবান : গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মো. আবুল কালাম। এরপর ২২ মার্চ স্থানীয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেরিনচর পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান তিনি। ওই পাড়ায় মূলত ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বসবাস।

সংবর্ধনা নিতে গিয়ে জনসম্মুখে আপত্তিকর এক ঘটনা ঘটান আবুল কালাম। আবুল কালাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্রো নৃগোষ্ঠীর এক বিধবা নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে ধরেছেন আবুল কালাম। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়, এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান তাকে জোরপূর্বক ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আবুল কালাম দাবি করেছেন, সে একজন বিধবা নারী। তাই ওই নারীকে তিনি সান্তনা দিচ্ছিলেন।

এদিকে ফেসবুকে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই চেয়ারম্যানের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন বিধবা নারীকে এভাবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হেনস্তা করার দায়ে চেয়ারম্যানের বিচার চেয়েছেন অনেকে। ওই নারীর ভাই স্থানীয় এমএনপি কমান্ডারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওই পাড়ায় সংবর্ধনা নিতে যান বলে জানা যায়।

ছবিগুলো শেয়ার করে মোহাম্মদ রকি নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মো. আবুল কালাম, একজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় সম্প্রতি তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজন সচরাচর একটু সরল প্রকৃতির। সাদামনের মানুষও বটে, সরল মনে ম্রো আদিবাসীরা খুব সহজে বিশ্বাস করেন। তারা হয়তো এটা জানেন না যে, আবুল কালাম (নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান) ম্রো-দের মতো একজন সরল প্রকৃতির মানুষ নন।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না ওই নারীর অনুমতি ছাড়া। কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি ছাড়া কখনো একজন নারীকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ শ্লীলতাহানি ও নারী সমাজকে অবমূল্যায়ন করা।’

আব্দুল্লাহ আল মনছুর নামে একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আবুল কালাম, বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ম্রো আদিবাসীদের পাড়ায় যান সংবর্ধনা নেয়ার জন্য। বান্দরবানের ম্রো আদিবাসীর লোকজন একটু সরল প্রকৃতির। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আবুল কালাম। একজন জনপ্রতিনিধি কখনো এভাবে একজন নারীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না। এটি শ্লীলতাহানি।’

নিপুন ত্রিপুরা নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন ছবিগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ভোট কারচুপি করে বিজয়ী হওয়া আলীকদমের এই চেয়ারম্যানের নাম আবদুল কালাম। সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সহজ সরল ম্রো মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন, তার আশপাশের লোকজন হাততালি দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ‘ওই নারীর ভাই স্থানীয় এমএনপি কমান্ডার। তার সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বন্ধুর মতো। সেই সুবাদে আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সংবর্ধনা নেয়ার সময় ওই নারী কান্নায় ভেঙে পড়লে আমি তাকে সান্তনা দিচ্ছিলাম, সেখানে আপত্তিকর আচরণের কিছু ছিল না।’

আর ঘটনার স্থানে ওই নারীর বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তেমন কিছু হলে তো সেখানে তারা প্রতিবাদ করতেন।’ এ ব্যাপারে তার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই বলেও দাবি করেন চেয়ারম্যান।

ওই নারীর অভিব্যক্তিতে অস্বস্তি বোধের বিষয়টি জানালে নবনির্বাচিত এ চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি কান্নাকাটি করছিলেন, আমি শুধু তাকে সান্তনা দিচ্ছিলাম। আর সেই ছবি আমি নিজেই আমার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছি। তেমন কিছু হলে তো আমি ছবিগুলো শেয়ার দিতাম না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!