• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
আফরিনের হাতে

সিজার ছাড়াই পৃথিবীর আলো দেখলো ৩ হাজার শিশু


চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ০৮:৩৫ পিএম
সিজার ছাড়াই পৃথিবীর আলো দেখলো ৩ হাজার শিশু

চুয়াডাঙ্গা: সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও অনেক ক্লিনিক ঠিকে থাকার মুল চাবিকাটি সিজার নামক লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে সিজার নামক ব্যবসা শহর ছাড়িয়ে পল্লী অঞ্চলেও ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে। তবে বর্তমানে সিজার ছাড়া নরমাল ডেলিভারী করার কথা চিন্তা করতেই যেনো কেমন লাগে। আধুনিক মেয়েদের কাছে নরমাল ডেলিভারী যেনো বিষফোঁড়া। সরকারী হাসপাতাল, প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তো মহাসমরাহে চলছে সিজার বানিজ্য। সিজার পরবর্তী প্রসুতি মায়ের নানান বিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। 

তারপরও কিছুতেই থামছেনা সিজারিয়ান অপারেশন। সিজারিয়ান অপারেশনের মধ্যে ডেলিভারীর এই মহামারী সময়ে একবারে ভিন্নচিত্র চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নে। মাত্র একজন মানুষের প্রচেষ্টায় এই এলাকায় এখন সিজারিয়ান অপারেশনের মাত্রা প্রায় শুন্যের কোটায়। চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে গত ৫ বছর ধরে ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারী সেবা দেওয়া হচ্ছে।  

এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা আরফিন আরা পাল্টে দিয়েছে স্থানীয় মানুষের গতানুগতিক চিন্তাধারা। সিজারিয়ান অপারেশনের কুফল ও নরমাল ডেলিভারী সুফল সম্পর্কে গর্ভবতি মায়েদের অবহিত করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে এখন প্রতিমাসে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি নরমাল ডেলিভারী করেন তিনি। সম্পূর্ন বিনা খরচে ২৪ ঘন্টা গর্ভবর্তি মহিলাদের নরমাল ডেলিভারী সহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে।  গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার আস্থার প্রতীক হয়ে দাড়িয়ে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। 

এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ডেলিভারী নিয়ে একটা বাড়তি ভীতি কাজ করে। সেই ভীতি থেকেই মানুষ সিজারিয়ান ডেলিভারীতে ঝুঁকে পড়েন। তাদের ধারণা নরমাল ডেলিভারী অনেক ঝুকিপূর্ন আর সিজারিয়ান ডেলিভারী ঝুঁকি মুক্ত। 

যদিও সাধারণ মানুষের এই ধারণা পুরোটাই উল্টো। একজন গর্ভবতিকে সিজার করা হলে অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যা দীর্ঘ মেয়াদী। নরমাল ডেলিভারীতে নবজাতক সন্তান যেমন সুস্থ থাকে তেমন প্রসুতি মা ও নিরাপদ থাকে। আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪ ঘন্টা নরমাল ডেলিভারী করার পাশাপাশি গর্ভবতি মহিলাদের সব ধরনের চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। 

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা মোছাঃ আফরিন আরাবলেন, সিজারিয়ান ছাড়ায় নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে ঝুঁকি মুক্ত সন্তন প্রসব করানো সম্ভাব৷ বর্তমানে আমাদের এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ টি নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভাব হচ্ছে।  সিজার ছাড়া ডেলিভারি করানো আমার  কাছে নেশার মতো। আর আমি চেষ্টা করি আন্তরিকতার সাথে গর্ভবতি মহিলাদের সেবা দিতে।  

তার কথার প্রমাণ ও পাওয়া যায় তার কর্মকান্ডে। প্রতিটি ডেলিভারি শেষ করেই নবজাতককে নিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। অবশ্য ফেসবুকে পোস্ট করেন নিজের সুমান বৃদ্ধির জন্য নয়, নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে যে নিরাপদ প্রসব করানো সম্ভব তা স্থানীয়দের মাঝে প্রচারের উদ্দেশ্যে করে থাকেন। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি  পরপর ৬ বার চুুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ১ম স্থান অধিকার অর্জনের গৌরব অর্জন করেছে। 

এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসারের উদ্যোগে  মোঃ ওয়াশীমুল বারী বলেন, বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবার মান আরো বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্য উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে নিরাপদ ডেলিভারী সহায়ক অনেক উপকরণ প্রদান করা হয়েছে, এছাড়া একটি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তৈরী করে দেওয়া হয়েছে, এই কর্ণারে তৈরীর ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা মায়েরা তাদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। এছাড়া এখানে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের জন্য পোশাক সহ অন্যান্য সামাগ্রী উপহার দেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর  উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনী সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করার হচ্ছে। যা আগামীতেও অব্যহত থাকবে।  

এদিকে, বেগমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা নিয়ে বেগমপুর ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪ ঘন্টা নরমারী ডেলিভারী সেবা প্রদান করা হয় এবং গর্ভবতি মহিলাদের যেভাবে আন্তরিক চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে, তা আমাদের জন্য সত্যিই গর্ভের। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। 
এবিষয়ে কথা হয় হিজলগাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজার সাথে, তিনি বলেন,। 

মুলত, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ আলমগীর কবির ও পরিদর্শিকা আরফিন আরার গর্ববতি মহিলাদের যেভাবে আন্তরিক চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান করেন তা যদি দেশের সবগুলো সরকারী হাসপাতাল ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করা হত, তবে আমাদের দেশে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমে যেত।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!