• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর পানি


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জুন ২৭, ২০২০, ০৪:২৪ পিএম
সুনামগঞ্জে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদীর পানি

ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ: গত দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে ৩৪৩ মি.মি বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীসহ সীমান্ত নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার বসতঘরও প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-আনোয়ারপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কসহ বিভিন্ন উপজেলার সড়ক প্লাবিত হচ্ছে। এ কারণে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষজন। টানা দুই দিনের বৃষ্টির কারনে নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন বিপাকে। সুনামগঞ্জে পাদদেশ মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতেও ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢল হয়ে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ার কারণে বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

পানিউন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি ৮.২৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদসীমার ৪৭ সে.মি. উপর দিয়ে বইছে। জামালগঞ্জের নতুন পাড়া ও নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পাড়ায় পানি উঠায় লোকজন বয়েছেন পানিবন্দী। অনেকের কাছা ও পাকা ঘরে পানি উঠায় তারা রয়েছেন বিপাকে।

এ দিকে, জেলা সদর সদর সংলগ্ন ইব্রাহীমপুরে সুরমান নদীর ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ আরো জানান, এবারো পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের নদী ভাঙন প্রতিরোধে ডাম্পিং কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলমান থাকবে আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। ৪০-৫০ হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হবে নদীর তীরে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এই বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধ হবে, এমন পরিকল্পনা থেকে বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট রাত ১১টায় নদী ভাঙন শুরু হয় পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের বাড়ির সামনে। এতে প্রায় অর্ধেক বাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। অসংখ্য গাছপালাও বিলীন হয় নদীগর্ভে। একই বছর গাজী রহমানের বাড়ি সামনেও নদী ভাঙনের ভয়াবহ আকার ধারণ করে। 

এতে একাধিক ঘর বাড়ি, যাতায়াত সড়ক ও গাছপালা নদী ভাঙনে বিলীন হয়। বিলীন হয়ে যায় নদীর তীরে থাকা এলাকার বাসিন্দা জগলুল মিয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও গ্রামের ব্যবসায়ীদের একাধিক সুঁটকির মাচা তৈরির সমতল জায়গা। ওই বছর মুসলিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে আলী আজগর মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এই নদী ভাঙন পরিলক্ষিত হয়। ২০১১ সালে এই ভাঙন এলাকায় প্রকল্প স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রকল্প স্থাপনের কাজ অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের হওয়ায় ২০১২ সালে অর্ধেক পরিমাণে প্রকল্প নদীগর্ভে খসে পড়ে। এই নদী ভাঙন প্রতিরোধে দুই বারের সংস্কার কাজে কারচুপির অভিযোগের কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে, নদী ভাঙন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা কয়েকজন জানান, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে তাদের বাড়ির বেশিরভাগ অংশ, অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে। বাড়ির সামনে ভাঙনের গভীরতা এখনও রয়েছে। এই গভীরতা ভরে তোলা হয়নি আগের দুইবারের ভাঙন প্রতিরোধ কাজে। ঠিকাদারদের ভালোভাবে বললেও তারা তেমন কোনো কাজ করেনি। ভালোমানের কাজ করলে এই ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হতো।

ফলে আমনের বীজতলা তৈরি ও বীজ বপনের এখনই সময়। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলা অধিকাংশ আমনের বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় জমি চাষাবাদ ও বীজ বপন অনিশ্চিতের আশংকা করছেন কৃষকরা।

অপরদিকে হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় মাছের পুকুর তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন মৎস্যচাষ খ্যাত দোয়ারাবাজার সদর ও সুরমা ইউনিয়নের শতাধিক খামারিরা। এছাড়া জমিতে পানি উঠায় দোয়ারাবাজার উপজেলার বগুলাবাজার, লক্ষীপুর, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের সবজি চাষীরা পড়েছেন বিপাকে।

এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর সেতুর পূর্বাংশের এপ্রোচ নির্মাণাধীন সড়কটি ৩ ফুট পানির নিচে। শুক্রবার সকাল থেকেই তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কে সকল প্রকার যানবাহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, এপ্রোচের দু’পাড়ে যানবাহন রেখে নৌকা যোগে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা আসা যাওয়া করছেন। সড়কের এমন দুরবস্থা দেখে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা তাহিরপুর এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হকের সাথে কথা বলেন এবং সংশ্লিষ্টদেরকে দ্রুত চলাচলের উপযোগী করার জন্য তাগিদ দেন।

বিষয়টি নিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, কাজটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে দরপত্র সংশোধনী প্রাক্ষলনে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সহিবুর রহমান বলেন, গত দুই দিন যাবৎ ভারি বৃষ্টির কারণে উজানের ঢলে পানি ক্রমেই বাড়ছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যহত থাকলে পানি আরো বাড়তে পারে।

এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুর আহাদ বলেন, জেলাতে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ও মাঠ প্রশানসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান কারা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক। আনোয়ারপুর সেতুর পূর্বাংশের এপ্রোচ নির্মাণাধীন কাজে গাফিলতির কারণে চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কাজটি সম্পন্নের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া আমার নির্বাচনী এলাকা জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এলাকায় যেখানেইসড়ক যোগাযোগ সমস্যা হবে সেখানেই পরিদর্শন করে প্রকৌশলীদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলে দিচ্ছি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!