• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবনে কমছে বাঘ, ২০ বছরে মৃত্যু ৩৮


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৫, ২০২০, ০৩:১৬ পিএম
সুন্দরবনে কমছে বাঘ, ২০ বছরে মৃত্যু ৩৮

ফাইল ছবি

ঢাকা: আগামী ৫০ বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সমুদ্রের স্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত বৃদ্ধি ফলে বিশেষত বাংলাদেশ অংশে হারিয়ে যেতে পারে এই প্রাণীটি বলছেন গবেষকরা। গত বছরের ১৪ মে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এক সমীক্ষায় সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছিল, সমুদ্রের স্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তন ক্রমাগত বৃদ্ধি ফলে বিশেষত বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার আগামী ৫০ বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে। ওই সমীক্ষাটি টোটাল এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স নামের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।

এদিকে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ২০ বছরে নানা কারণে ৩৮ বাঘের মৃত্যু হয়েছে। বন বিভাগের সদস্যরা মাত্র সাড়ে ৫ মাসের ব্যবধানে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদহে উদ্ধার করেছে। বাঘ দুটির একটি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ এবং অপরটি পশ্চিম বিভাগের আন্ধারমানিক ফরেস্ট ক্যাম্প এলাকায় বনের মধ্যে মরে পড়ে ছিল। বন বিভাগ জানিয়েছে, বাঘ দুটি অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে গত বছরের মে মাসে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানিয়েছিলেন যে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে ১১৪টি হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের অবস্থা-২০১৮ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উন্মোচন করার সময় তিনি এ তথ্য জানান।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। চোরাশিকারির হাতে, সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে বের হয়ে আসায় গণপিটুনির শিকার হয়ে, ঝড়-জলোচ্ছাসের আঘাতে এবং অসুস্থ হয়ে ও বার্ধক্যজনিত কারণে বাঘ মারা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে ২০২০ সালে এসে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমেছে না বেড়েছে সে সম্পর্কে জানাতে পারেনি বন বিভাগ।

এ বিষয়ে গত শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা জেলার কয়রা উপজেলাধীন আন্ধারমানিক ফরেস্ট ক্যাম্প এলাকা থেকে একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন জানান, বিগত কয়েক দিন ধরে একটি বাঘ আন্ধারমানিক ফরেস্ট ক্যাম্পের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। শুক্রবার দুপুরে ফরেস্ট ক্যাম্প থেকে ২০ হাত দূরে বাঘটিকে পড়ে থাকতে দেখেন বন বিভাগের সদস্যরা। কাছে গিয়ে তারা দেখে পায় বাঘটি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় ১৪ বছর বয়স্ক ওই বাঘিনীটির দৈর্ঘ্য সাত ফুট এবং উচ্চতা তিন ফুট, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বাঘিনীটি পূর্ণবয়স্ক এবং তার বাঁ পায়ের নিচের অংশে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। ভেটেনারি সার্জন দিয়ে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর চামড়া ও দাঁত সংরক্ষণ করা হবে। বাঘটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই বাঘটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ওই বন কর্মকর্তার ধারণা বাঘটির পায়ের ওই ক্ষত কুমিরের আক্রমণ, বাঘে-বাঘে লড়াই অথবা বনের শ্বাসমূলের আঘাতে হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের কবরখালী খাল থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় একটি বাঘের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়। ওই বাঘটির মৃত্যুর কারণ জানতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বন বিভাগের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষার রিপোর্টে জানা গেছে বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।

ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আরও জানান, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনে বাঘসহ বন্যপ্রাণির আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০০ হেক্টর বনের মধ্যে এখন তিন লাখ ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর অভয়ারণ্য এলাকা। আগে যা ছিল মাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর। ২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভায়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে। সুন্দরবনে বাঘের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল ফাঁড়ির কার্যক্রমের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল করা হচ্ছে।

এছাড়া বাঘ যাতে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে বের হতে না পারে এ জন্য বনের সীমানা এলাকায় বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও ডিএফও জানান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিচরণ করে থাকে

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বিভিন্নভাবে ২২টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুস্কৃতকারিদের হাতে ১০টি, জনতার গণপিটুনিতে পাঁচটি, স্বাভাবিকভাবে ছয়টি এবং ২০০৭ সালের সিডরে একটি বাঘের মৃত্যু হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৬টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন এলাকায় ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গণপিটুনিতে নয়টি এবং বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে সাতটি বাঘের মৃত্যু হয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!