• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যগ্রহণের সময় যা করতেন বিশ্বনবি


ধর্মচিন্তা ডেস্ক ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯, ১২:৪২ পিএম
সূর্যগ্রহণের সময় যা করতেন বিশ্বনবি

ঢাকা: সূর্যগ্রহণ দেখতে মানুষের মাঝে অনেক কৌতুহল ও আনন্দ কাজ করে। অথচ সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময়টি উদযাপন বা তা দেখার আনন্দের বিষয় নয়। সূর্যগ্রহণের সময়টিকে ভয় করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। এ সময় মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন।

আবার জাহিলিয়াতের যুগের লোকেরা মনে করত বড় কোনো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়। মুগিরা ইবনে শুবা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতে সুর্যগ্রহণ হলো। তখন আমরা সকলে বলাবলি করছিলাম যে, নবিদের ছেলেদের মৃত্যুর কারণেই এমনটা ঘটেছে। এ কথা শুনে বিশ্বনবি বললেন-
‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং নামাজ আদায় করবে ও সাদকা প্রদান করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

যখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ শুরু হতো তখন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে জামাআতে নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আল্লাহর কাছে প্রচণ্ড রোনাজারি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তিনি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় একবার সূর্যগ্রহণ লাগল। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়ালেন। তিনি কেয়ামত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। অবশেষে তিনি মাসজিদে এসে নামাযে দাঁড়ালেন এবং সবচেয়ে লম্বা কেয়াম, লম্বা রুকূ, লম্বা সেজদাসহ নামাজ আদায় করতে লাগলেন। আমি কখনও কোনো নামাজে তাঁকে এত লম্বা করতে দেখিনি। নামাজ শেষ করে তিনি বললেন, এসব নিদর্শনাবলী যা আল্লাহ জগতে পাঠান, কোনো ব্যক্তির মৃত্যু বা জীবনের কারণে অবশ্যই তা হয় না। বরং আল্লাহ এগুলো পাঠিয়ে বান্দাদের সতর্ক করেন। অতএব তোমরা যখন এমন কিছু দেখতে পাও, তখন তোমরা ভীত হয়ে আল্লাহর জিকির, দোয়া ও ইসেতেগফারে মশগুল হও।’ (মুসলিম)

আরবিতে এ সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নামাজ পড়তেন তাকে কুসুফের নামাজ বলা হয়।

১০ম হিজরিতে যখন মদিনায় সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয় তখন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়ে মানুষদেরকে নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সমবেত সাহাবাদের ইমাম হয়ে তিনি নামাজ আদায় করেছিলেন। সম্ভবত এ নামাজই ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ নামাজ। নামাজের কেয়াম, রুকু, সেজদাহ সবই অন্যান্য নামাজের তুলনায় দীর্ঘ ছিল।

তৎকালীন সময়সহ পরবর্তীতে অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা যখন প্রথম জানতে পারলো যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সময় কান্নাকাটি করেছেন এবং নামাজসহ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তখন তারা হাসি ও বিদ্রুপ করতে লাগলো। নামাজ, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্নাকাটির কি প্রয়োজন বা যৌক্তিকতা আছে বলে তারা প্রশ্ন তুলেছিল।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো
বিংশ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে আসলো যে, বিশ্বনবির কান্নাকাটি, নামাজ ও ক্ষমা প্রার্থনা ছিল যুক্তযুক্ত। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ আমলের কারণ বেরিয়ে আসলো। আর তাহলো সূর্যগ্রহণের ফলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

হাদিসের ভাষ্য ও বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফল হলো, সূর্যগ্রহণ লাগলে মুমিন মুসলমানের পালনীয় আমল হলো-
>> সূর্যগ্রহণের সময় দোয়া করা,
>> তাসবিহ পাঠ করা,
>> তাওবা-ইসতেগফার করা,
>> লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করা এবং
>> সাদকা করা।

কেননা হাদিসে এসেছে এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। ভয় প্রদর্শন করেন। তাই আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা এ সময় আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। হাদিসে পাকেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আমলগুলো প্রমাণিত।

উল্লেখ্য যে, ১৭২ বছর পর একই রকম সূর্যগ্রহণ দেখছে মানুষ। এ সূর্যগ্রহণে আগুনের একটি বলয় সূর্যকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘রিং অফ ফায়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ সময়টিতে হাদিসে উল্লেখিত আমলে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় ক্ষতি থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!