• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ডিআইজি পার্থ বণিকের যত কুকীর্তি


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ৩০, ২০১৯, ০৩:৫৭ পিএম
সেই ডিআইজি পার্থ বণিকের যত কুকীর্তি

ঢাকা : দুদকের হাতে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে উঠছে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার একের পর এক অভিযোগ।

পার্থ গোপাল বণিক জড়িত ছিলেন কারাগারে কারাগারে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে, মাদক সিন্ডিকেট, উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাৎ, কারাবন্দীদের অবৈধ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হওয়ার মতো কাজে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছিলেন ৮০ লাখ টাকাসহ দুদকের হাতে গ্রেফতার হওয়া পার্থ বণিক। তখন থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত তিনি। সেসময় তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রতিবেদন পাঠায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় পার্থ গোপাল বণিক ডেপুটি জেলার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। টাঙ্গাইল, যশোর ও রাজশাহী কারাগারে জেল সুপার পদে দায়িত্ব পালন করে ২০১১ সালের ২৭ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে যোগ দেন। তার পরিবার বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

২০১১ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যুদ্ধাপরাধী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বিতর্কিত রাজনীতিবিদদের তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অলিখিতভাবে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ঐদিন পার্থ বণিক বিএনপির এমপি পাপিয়া রহমানের স্বামী ও পরিবারকে তার অফিসকক্ষে একান্তে আলাপের ব্যবস্থা করে দেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অন্য ছাত্রদল, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের নানা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন পার্থ।

এমনকি শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লাসহ অনেক জঙ্গি বন্দীদের জেল-কোড অনুযায়ী ওই সেলে যত্রতত্র যাতায়াত বা যোগাযোগের বিষয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পার্থ সেসব উপেক্ষা করে সেখানে অবাধে যাতায়াত ও যোগাযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি বাইরে পাচার করেছেন।

পার্থ গোপাল বণিক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগ দিয়েই কারাগারে কর্মরত হাবিলদার খলিলুর রহমান, কারারক্ষী রাহাত মিয়া ও রতন রায়ের মাধ্যমে কারারক্ষী ও কারাবন্দীদের বদলি এবং স্থানান্তরের ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। আসামিদের খাবারসামগ্রী বাইরে বিক্রি, সেলের সিট বিক্রি, কয়েদি বন্দীদের কাজ পরিবর্তন এবং ভিআইপি বন্দীদের বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়া তিনি যশোর কারাগারে জেল সুপার থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে।

গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ অধিশাখা ২০১২ সালের ১ এপ্রিল পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ২১টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পার্থ গোপাল বণিক যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় কারাগারের টাকায় বাদ্যযন্ত্র ও সাউন্ডবক্স ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে পরে তা মেরামতের নামে কারাগারের বাইরে পাঠিয়ে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করা, কারাগারের বিভিন্ন এলাকায় লাগানো নানা প্রজাতির বড় বড় গাছ অবৈধভাবে কেটে তার কাঠ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা, মুক্তি পাওয়ার পরও কয়েদি রামলালকে নিজের সরকারি বাসায় তিন সপ্তাহ আটকে রেখে ব্যক্তিগত কাজ করানো।

ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল কারাগারে : নিজের বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার (২৯ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ  কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। আসামি পক্ষে আইনজীবী গাজী শাহ আলম, আসাদুজ্জামান খান রচি আদালতে পার্থ গোপালের জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  মোশারফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন।

এর আগে গতকাল ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা করে কমিশন। মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষগ্রহণ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদী কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। দুদকের জনসংযোগ কার্যালয় মামলার বিষয়টি জানিয়েছেন।

রবিবার ৮০ লাখ টাকাসহ ধানমন্ডির বাসা থেকে ডিআইজি পার্থকে গ্রেফতার করে দুদক। তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে নিয়ে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা টাকা উদ্ধারে অভিযানে যায় দুদক টিম। তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক ডিআইজি।

দুদকের তথ্য মতে, সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার্থ গোপাল বণিক অবৈধ উপায়ে এবং বৈধ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত হিসেবে ঘুষ গ্রহণ করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেছেন। এই টাকা তিনি নিজের দখলে নিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!