• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ভয়াবহ নেপাল ট্র্যাজেডির এক বছর আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১২, ২০১৯, ০২:৩৪ পিএম
সেই ভয়াবহ নেপাল ট্র্যাজেডির এক বছর আজ

ঢাকা : ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ২১১ বিমানটি আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট হিসেবে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। সেদিনই স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে (ইউটিসি +৫:৪৫) একটি বম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজে করে ফ্লাইটটি চালানোর সময় তা নেপালে অবতরণ করার সময় বিধ্বস্ত হয়। আজ সেই ভয়াবহ নেপাল ট্র্যাজেডির এক বছর।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্লেনে ছিলেন মোট ৭১ জন আরোহী। দুর্ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন যাত্রী। বাকি যাত্রীরা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকেরই আঘাত গুরুতর। আহতরা এখনও ভয়ংকর সেই স্মৃতি ভুলতে পারেননি।

এই দুর্ঘটনার পর নিহত ও আহত যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জনকে বিমা পরিশোধ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে বাকি ৪০ জনকে এখনও ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন জটিলতাকেই দায়ী বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্সটির এক কর্মকর্তা।

বিমানটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ জন যাত্রী, ৪ জন বিমান ক্রু সবমিলিয়ে ৭১জন আরোহী নিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে ১২ মার্চ ২০১৮ সালে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে বিমান বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া যাত্রীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র (ছবি: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস)

ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুরুতে রানওয়ে ০২-তে উড়োজাহাজ অবতরণের ছাড়পত্র দেয় কিন্তু বিমানের এয়ারক্রু রানওয়ে ২০-এ অবতরণের আবেদন জানান। পরে টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রানওয়ে ২০-এ উড়োজাহাজটি অবতরণের অনুমতি দেয়। এরপরে টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজের ক্রুদের তাদের অবতরনের হালনাগাদ জানতে চাইলে ক্রুদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ‘‘আমি রানওয়ে ০২-তেই অবতরণ করতে চাই’’।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ফ্লাইটটি রানওয়ে ০২ স্পর্শ করে দুর্ঘটনায় পড়ার আগে। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, রানওয়েতে উড়োজাহজটি সঠিক নিয়মে অবতরণ করেনি। পরবর্তীতে উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায় এবং ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটায় উড়োজাহাজটি ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পরেই ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। উড়োজাহাজে লাগা আগুন বন্ধ করতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। ৩১ জন গুরুতর জখম যাত্রীকে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উদ্ধারকারী কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষনিক ৮টি লাশ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে উদ্ধারকার্যক্রমের মাধ্যমে আরো ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রী মারা যান যার মধ্যে ৪০ জন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। বাকি ৯ যাত্রীকে হাসাপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। দুর্ঘটনার পর প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এটিই প্রথম বড় সংখ্যক হতাহতের দূর্ঘটনা, এবং বোম্বার্ডি ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজের মাধ্যমে ঘটিত হতাহতের মধ্যে দ্বিতীয় দুর্ঘটনা। এর আগে একই প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজ কোলগান এয়ার ফ্লাইট ৩৪০৭ দুর্ঘটনায় পড়ে।

উড়োজাহাজটি ৬৭ জন যাত্রী এবং চারজন কর্মী নিয়ে যাত্রা করেছিল বলে প্রতিবেদন করা হয়। উড়োজাহাজের অধিনায়ক ছিলেন আবিদ সুলতান, যিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট ছিলেন। আবিদের ২২ বছর বিমান চালোনার অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি দুর্ঘটনায় বেঁচে গেলেও কয়েক ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। উড়োজাহাজের সহকারী পাইলট ছিলেন পৃথুলা রশীদ, তিনি বিমানটির প্রথম মহিলা পাইলট। অন্য দুটি কেবিন ক্রু সদস্য ছিলেন খাজা হোসেন মোহাম্মদ শফি ও শামীম আক্তার।

দুর্ঘটনায় নিহত মোট ৫১ জনের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!