• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রী ঘুমিয়ে গেলে শুতে আসে সৌদি গৃহকর্তা, অতঃপর...


নিউজ ডেস্ক মার্চ ১৯, ২০১৯, ০২:৫২ পিএম
স্ত্রী ঘুমিয়ে গেলে শুতে আসে সৌদি গৃহকর্তা, অতঃপর...

ঢাকা : বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এলেন শিউলি আক্তার পিংকি। মেয়ের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বাবা বাবুল সাজি। বাবাকে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন পিংকি। মেয়েকে বুকে আগলে নিজের কান্না সংবরণ করে তার কান্না থামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কিছুতেই মেয়ের কান্না থামছিল না। প্রায় ১৫ মিনিট চেষ্টার পর পিংকির কান্না থামে।

তখন বাবার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দেশে ফেরা এবং পরিবারকে কাছে পাওয়ার আনন্দে এভাবেই কেটে যায় কিছুটা সময়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর পিংকি স্বাভাবিক হন। এরপর কথা হয় এই প্রতিনিধির সঙ্গে। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের যে বাসায় তিনি কাজ করতেন সেখানকার বর্ণনা দেন।

পিংকি বলেন, সৌদি আরব যাওয়ার পর জানতো না কোথায় সে কাজ করছে। বাসার মালিকের নামও জানা ছিল না তার। ভাষাও বোঝেন না তাই, ইশারায় নির্দেশ বুঝে নিয়ে সব কাজ করতেন। প্রতিদিন তিনতলা বাসা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হতো তাকে। প্রতিটি তলার ১০টি বড় বড় রুম ছিল। এমনকি ছাদও পরিষ্কার করতে হতো প্রতিদিন।

তিনি বলেন, ‘সকালে উঠে থালা-বাসন পরিষ্কার করতাম। এরপর সারাদিন পানি দিয়ে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে করতে পুরো শরীর ভিজে যেতো। শুকনা কাপড় পরারও সময় পেতাম না। রাতে ভেজা কাপড়েই ঘুমিয়ে পড়তাম, টের পেতাম না। সকালে ওঠার পর বুঝতাম গায়ের কাপড় ভেজা ছিল। পরের দিন আবার একই কাজ। এত কাজের বিনিময়ে সকালে একটা আর রাতে একটা রুটি দেয় খেতে দিতো।

হাতে-পায়ে ধরে ভাত চাইলেও দিত না। ওরা অনেক ভালো-মন্দ খাবার খেতো, আমাকে দিতো একটা রুটি। আমার মতো কেউ যেনও আর সৌদি আরব না যায়।’ পিংকি বলেন, ‘কয়েকদিন কাজ করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ক্যাম্প। নোংরা আর প্রচণ্ড গরমে থাকতে হয়েছে সেখানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম রোজার দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে একটা রুটি দিয়েছিল খেতে। আমরা ৯ জন মেয়ে মিলে তাদের ভাত দেওয়ার অনুরোধ করার পর সেহরিতে ভাত দেয়। আলু আর পেঁয়াজের পাতার ভাজি দিয়ে ভাত খেয়েছি। ইফতার করেছি এক গ্লাস পানি দিয়ে। দুই ঘণ্টার পর ভাত দিয়েছে আলু আর পেঁয়াজ পাতার ভাজি দিয়ে।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে পিংকি বলেন, ‘সৌদি আরব যাওয়ার পর খাওয়ার খুব কষ্টে ছিলাম ভাই। আপনিই বলেন, খেতে না পাওয়ার চেয়ে আর কী কষ্ট আছে।’

পিংকির বাবা বাবুল সাজি বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম শিউলী আক্তার পিংকি। ওর বয়স এখন ১৮ বছর। কিন্তু ২৬ বছর দেখিয়ে ওর পাসপোর্ট করা হয়েছে। এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি আমার মেয়ের। পিংকি চেয়েছিল, বেশি টাকা আয় হলে ছোট ভাইবোন দু’টির লেখাপড়া করবে। কিন্তু তাকেই হারানোর অবস্থা হয়েছিল। তাকে ফিরে পেয়েছি। আপনার দোয়া করবেন আমার মেয়ের জন্য।’

সৌদিতে পাঠাতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে বাবুল সাজি জানান, প্রতিবেশী বাতেনের মাধ্যমে আল মনসুর ওভারসিস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছি। মেয়ের আয় থেকে বাকি ৫৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। পিংকি যাওয়ার সময় অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা আল মনসুর বন্ধ করে দেন। বন্ধ না হলে কত মেয়েকে নিয়ে যে কষ্ট দেবে তার ঠিক নেই।’

প্রসঙ্গত, আল মনসুরের সৌদিতে পাঠানো ৯ নারীর একজন পিংকি। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানার দক্ষিণ কুমিরা গ্রামে। বিমানবন্দরে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী প্রীত বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় পিংকিসহ পাঁচজন আজ (শুক্রবার) ফেরত এসেছে। অন্য চারজনকেও ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

সৌদিতে ভারী বন্যায় ১২ জনের মৃত্যু : চলতি সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় সৌদিতে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।জর্ডান সীমান্তের কাছে দেশটির পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বর্ষণের কারণে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এসপিএ নিউজ এজেন্সির এক খবরে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবুক শহরে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে, পবিত্র নগরী মদিনাতে একজন এবং উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় একজন নিহত হয়েছে।

এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার থেকে এখন পর্যন্ত ২৭১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবুক অঞ্চল থেকে ১৩৭ জনকে উদ্ধার করেছে।

এই জীবন রেখে লাভ কী, প্রবাসী মুক্তারের আক্ষেপ : আমি প্রতিদিনের মতো রাস্তায় গাছ লাগাচ্ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে একটি কালো রংয়ের গাড়ি আমার ওপরে উঠাইয়া দেয়। এরপরে আমি আর কিছু কইতে পারি না। পরে যখন আমার হুঁশ আসে, তখন হাসপাতালের বিছানায়।

ডাক্তার আমার একটা পাও কাইট্যা ফালাইয়া দিছে। এখন আমি কি করুম। আমার এই জীবন রেখে লাভ কী? জীবনটা যে ধ্বংস করছে, তার আমি বিচার চাই।’এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৈরুতের আমেরিকান হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিছানায় পাগলের মতো প্রলাপ করছিলেন প্রবাসী মুক্তার মিয়া।

২৫ জানুয়ারি শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের আল রৌশা এলাকায় মুক্তার মিয়া (২৫) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানায়। বাবার নাম কালা মিয়া।

লেবাননে অবস্থানরত মুক্তারের বড় ভাই খোরশেদ জানায়, ২০১৩ সালে আমি আমার ছোট ভাইকে একটি কোম্পানির ভিসায় লেবাননে নিয়ে আসি। প্রতিদিনের মতো সে বৈরুতের আল রৌশা এলাকায় সড়কের আইল্যান্ডে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ সকাল ৮টার দিকে দ্রুতগতির একটি কালো রংয়ের ল্যান্ড রোভার গাড়ি ব্রেকফেল করে রাস্তার আইল্যান্ডে উঠে পড়ে মুক্তার আলীকে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা দেয়।

পরে রেডক্রসের কর্মীরা মুক্তার আলীকে আমেরিকান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শরীরে দুই বার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় থেতলে যাওয়া ডান পা-টি কেটে ফেলে দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মুক্তারকে আমেরিকান হাসপাতাল থেকে ডামুরের একটি স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। এদিকে লেবাননের পুলিশ গাড়িটিকে আটক করেছে এবং গাড়ির চালক বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

অন্যদিকে মুক্তার আলীর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বৈরুত দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসপাতালে ছুটে যায় এবং তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে বলে মুক্তারের বড় ভাই খোরশেদ জানায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!