• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হারাচ্ছেন ক্যাসিনো সম্রাটসহ ১০ জন


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৫:০৫ পিএম
স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হারাচ্ছেন ক্যাসিনো সম্রাটসহ ১০ জন

ঢাকা: ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানসহ অন্তত ১০ জনের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হচ্ছে।

দুদক সূত্র থেকে জানা গেছে, ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই দফায় ১৭৮ জনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। ওইসব মামলায় আসামিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এরইমধ্যে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ও টেন্ডারকিং জি কে শামীমসহ কয়েকজনের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানসহ অন্তত ১০ জনের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান দুদকের ওই কর্মকর্তারা।

অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ৭ কারবারির ৪২৬ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এর আগে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) এসব মামলা হয়।

আর এদের মধ্যে জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কাজী আনিছুর রহমান, এনামুল হক এনু, রুপন ভূঁইয়া ও সেলিম প্রধানের সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দেয়া হয়। এদের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে আবেদন করেন।

এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন, এ আদেশের মাধ্যমে তদন্ত চলাকালে আসামিদের সম্পদ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরে যে শঙ্কা ছিল, তা বন্ধ হয়ে গেল। এছাড়া তদন্ত পর্যায়ে যদি আসামিদের আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ মেলে, তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে তা ক্রোক ও ফ্রিজ করা যাবে।

বিষয়টি নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, অবৈধ সম্পদধারীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তারা সম্পদ ক্রোকের আবেদনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

গেল ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে স্টার লাইন পরিবহনের মুনীর হোসেন চৌধুরীর বাসা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করে র‍্যাব। ওইদিনই তাদের ঢাকায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেন নিয়ে অভিযানে বের হয় র‍্যাব। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায় র‍্যাবের একটি দল। সেখানে অবৈধ পিস্তল, গুলি, ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, ১৬ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, নির্যাতন করার জন্য বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। 

একই সময় সম্রাটের মহাখালী ও শান্তিনগরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‍্যাব। পরে কাকরাইলের নিজ কার্যালয়ে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‍্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এই আদেশ দেন। পরে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এছাড়া মাতাল অবস্থায় গ্রেফতার হওয়ায় এনামুল হক আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিন রাতে তাঁকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী সহসভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে দুদক। মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলেও দেশের বাইরে নামে-বেনামে অন্তত ১০০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লে­খ করা হয়। 

তার এ সম্পদ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও আমেরিকায় রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট রাজধানীর মতিঝিল ও ফকিরেরপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেগুলোতে নিজের লোক বসিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন।

অনেক সময় নিজের লোক দিয়ে ক্লাবগুলোতে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অবৈধ মাদক ব্যবসা পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি দেশের বাইরে সম্পদ গড়েছেন। দেশেও উত্তরা, ধানমণ্ডি, গুলশানসহ বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন।

অনুসন্ধানকালে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্রাট ক্যাসিনোসহ অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন। দেশেও তিনি ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি করেছেন, সিনেমায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। মামলার তদন্তকালে আইনানুগ পদ্ধতিতে আসামি সম্রাটের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের আরও প্রমাণাদি পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।

আর দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে সম্রাটের বিরুদ্ধে করা মামলায় আরও বলা হয়, তিনি ২০১৮-১৯ করবর্ষে নিজ নামে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। তবে অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, সম্রাট তার মালিকানাধীন ‘হিজ মুভিজ’-এর নামে সোনালী ব্যাংক, কাকরাইল শাখায় চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ কোটি ৭৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ওই হিসাবে বর্তমান স্থিতি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে তার এফডিআর আছে ১ কোটি ১০ লাখ ৭৬ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে দেশে তার অবৈধ সম্পদের সন্ধান মেলে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

অন্যদিকে, যুবলীগ নেতা সম্রাটের সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দু’জনের বিরুদ্ধেই ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অপরাধ আনা হয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!