• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্নায়ুচাপে সরকারি ব্যাংক এমডিরা!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৩, ২০১৯, ০১:৩১ পিএম
স্নায়ুচাপে সরকারি ব্যাংক এমডিরা!

ঢাকা : ব্যক্তিগত হিসাবনিকাশ কষছেন সরকারি ব্যাংক এমডিরা। স্নায়ুচাপে দিন যাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের। আসছে আগস্ট মাসে একসঙ্গে তিনটি সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডির চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোনালি, অগ্রণী ও রূপালী। এছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও বেসিক ব্যাংকে এমডি নেই। আর জনতা ব্যাংকে এমডির মেয়াদ থাকলেও তিনি সরকারের সুনজরে নেই। ফলে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডি পদ নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। তবে এমডি নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে কি না তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সূত্রমতে, জনতা ব্যাংকের এমডির মেয়াদ আরো দেড় বছর রয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। তবে যোগদানের পর থেকে ব্যাপক চাপে রয়েছেন তিনি। ফলে সরকারের সুনজরে আর নেই তিনি। এরই মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এই এমডিকে নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীর পদে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদউল্লাহ আল মাসুদ, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ও রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধানকে একসঙ্গে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংকিং খাতের অন্যতম এই তিন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর চাকরির চুক্তির মেয়াদ একসঙ্গে শেষ হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড-বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকের এমডি নেই। বেসিক ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এমডি নিয়োগ দিতে উদ্যোগ নিয়েও পারছে না।

আর বিডিবিএল’র এমডি ছিলেন মনজুর আহমেদ। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মে মাসে। সেখানেও নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, এই ব্যাংকে এমডি হতে এরই মধ্যে ১৩ জন আগ্রহী হয়েছেন। তারা আবেদন করেছেন। তবে সবচেয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ। ব্যাংকিংয়ের আর্থিক সূচকে অবনতি এবং বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই ব্যাংকারের প্রতি সরকারের সুনজর নেই। যদিও তার চাকরির মেয়াদ আরো প্রায় দেড় বছর রয়েছে। কিন্তু তিনি পুনরায় নিয়োগ পাবেন না এমন তথ্য এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওবায়েদউল্লাহ আল মাসুদের নিয়োগ বাড়বে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। তার স্থলে এই ব্যাংকে নতুন এমডি আসার সম্ভাবনা রয়েছে রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধানের। সরকারি ব্যাংকের এমডিদের মধ্যে তিনি এরই মধ্যে ভালো দক্ষতা দেখিয়েছেন। লোকসানে থাকা রূপালী ব্যাংককে তিনি মুনাফায় ফিরিয়ে এনেছেন। গত তিন বছরে ব্যাংকটি আর্থিক সূচকে দৃশ্যমান উন্নতি করেছে, যা সর্বমহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। তাকে রূপালী ব্যাংকেই বহাল রাখতে পারে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের এমডি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটির কিছু অনিয়ম সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। ফলে তার মেয়াদ বাড়বে কি না তা নিয়ে ব্যাংকটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে। তবে ব্যাংকের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছেন তিনি। তার এই উদ্ভাবনকে সরকার কাজে লাগিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তিনি সরকারের সুনজরে আছেন।

এর আগে একসঙ্গে তিনটি ব্যাংকের এমডি নিয়োগ দিতে সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার। তবে এবার নতুন অর্থমন্ত্রী কি প্রক্রিয়ায় যাবেন তা স্পষ্ট হতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্যাংকিং খাত থেকে অদক্ষ ও দুষ্টদের বিদায় নিতে হবে। তিনি তদবিরে আর কাউকে নিয়োগ দেবেন না। দক্ষতা ও যোগ্যতায় নিয়োগ দেওয়া হবে। একই প্রক্রিয়ায় পরিচালক নিয়োগ পাবে আগামী দিনগুলোতে।

প্রতিটি ব্যাংকের জন্য একজন করে এমডির নাম চূড়ান্ত করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বোর্ড আইন অনুসারে এমডিদের মেয়াদ, ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করে থাকে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকারি ব্যাংকের এমডি হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পেতে অথবা নতুন নিয়োগ পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজেদের পক্ষে সরকারের প্রভাবশালীদের সুপারিশ বাড়াতে বিভিন্ন দপ্তরে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন।

একটি সরকারি ব্যাংকের এমডি আলাপকালে জানান, চাকরির চুক্তির মেয়াদ বাড়বে কি না সেই চিন্তা করছি না। যতদিন আছি ব্যাংকটির উন্নতি নিয়ে কাজ করছি। যোগ্যতা ও দক্ষতায় যদি নিয়োগ পাই সেটি ভালো। নতুন মেয়াদে ব্যাংকটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!