• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বজনদের’ ছুঁড়ে ফেলা কন্যাশিশুকে কোলে তুলে নিল পুলিশ


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০, ০১:৫৭ পিএম
‘স্বজনদের’ ছুঁড়ে ফেলা কন্যাশিশুকে কোলে তুলে নিল পুলিশ

ঢাকা : এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করছিলেন চট্টগ্রামের খুলশী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিরণ মিয়া। বেলা একটার কিছুটা আগে। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন একটি অটোরিকশা থেকে ভারি কিছু একটা ফেলে দেওয়া হয়েছে। এরপর দ্রুত চলে গেছে অটোরিকশাটি। 

কৌতুহল নিয়ে পুলিশ সদস্য হিরণ মিয়া সেখানে গিয়ে দেখেন  আনুমানিক ৮-৯ মাসের একটি শিশু মৃত প্রায় অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। পাশেই কবরস্থান কিছুটা নির্জন এই জায়গায় কেন শিশুটিকে ফেলে গেল অটোরিকশা। কিছু বুঝে উঠার আগেই পালিয়েছে অটোরিকশাটি। এই কারণে নম্বরটির দিকে ভালো করে লক্ষ করেননি।

তাৎক্ষণিক পালিয়ে যাওয়া অটোরিকশার পিছু না দৌঁড়ে হিরণ মিয়া কোলে তুলে নিলেন প্রায় নিথর শিশুকে। এরপর ঘটনা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেন শিশু ফেলে যাওয়ার কথা। এরপর অন্য একটি অটোরিকশা নিয়ে নিজেই ছুটে যান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হয়। 

শিশুকে ফেলে যাওয়ার পর উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পুলিশ সদস্য হিরণ মিয়া।
 
সোমবার বেলা ১টায় দিকে শিশুকে কোলে করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮নং ওয়ার্ডে শিশুটিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুর পায়ুপথে কিছুটা পচন ধরেছে। এছাড়া পানিশূন্যতায় ভুগছে শিশুটি। তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। আর পচন ধরা স্থানে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।

একটি মেয়ে শিশু। বয়স আনুমানিক সাত কি আট মাস পৃথিবীতে আসার পর বাস্তবতা বুঝে ওঠার আগেই তাকে শিকার স্বজনদের এমন নির্মমতার। 

এবিষয়ে এসআই হিরণ মিয়া বলেন, ‘আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপালন করছিলাম। এই সময় অদূরে কবরস্থানে অটোরিকশা থেকে কিছু একটা ফেলে যেতে দেখি। দ্রুত ছুটে যাওয়ায় অটোরিকশার নম্বর খেলায় করতে পারিনি। কাছে গিয়ে দেখি একটি মেয়ে শিশু জীবন্ত পড়ে আছে। এরপর আমি শিশুটিকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। এখন শিশুটি ভালো আছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি শুধু দায়িত্বপালন করেছি। কতোটা মানবিক হয়েছে সেই বিবেচনার ভার মানুষের। আমি ভবিষ্যতেও এমন ভালো কাজ করতে চাই।’

এব্যাপারে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণব চৌধুরী বলেন, অটোরিকশার ভেতরে কারা ছিল, সেটা এএসআই হিরণ সঠিকভাবে দেখতে পাননি। শিশুটি মারা যাবে ভেবে কবরস্থানের পাশে ফেলে যাওয়া হয়েছে, যাতে মৃত্যুর পর বেওয়ারিশ হিসেবে ধরে দাফন করে ফেলতে পারে। একটি শিশুর সঙ্গে এমন নির্মম আচরণ কল্পনাও করা। এঘটনা ভাবতেই গা শিউরে উঠে যোগ করেন তিনি।

এটা কোনো অপহরণের ঘটনা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত, মনে হচ্ছে শিশুটিকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। তারপরও পুরো বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি। আশপাশের সব সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অটোরিকশাটি শনাক্ত করা গেলে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, ‘শিশুটি পানিশূন্যতাসহ কিছু রোগে ভুগছে। এই কারণে অভিভাবকরা শিশুটিকে ফেলে গেছে বলে ধারণা করছি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!