• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণালি মুকুলের মুগ্ধতা


রাজশাহী ব্যুরো জানুয়ারি ২০, ২০১৯, ০২:১৬ পিএম
স্বর্ণালি মুকুলের মুগ্ধতা

রাজশাহী : শীতের দাপটে হাড় কাঁপছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের। বাংলা পঞ্জিকায় সদ্যই অভিষিক্ত হয়েছে বহু আচার-অনুষ্ঠান আর সৃষ্টির মাস ‘মাঘ’র। মাঘ মাসের পূর্ণিমাকে বলা হয় মাঘী পূর্ণিমা। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে করা হয় সরস্বতী পূজা।

বিশেষত মাঘ মাস রাজশাহীর মানুষের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত মৌসুম। কারণ এই মাসের শেষেই আম গাছে মুকুল আসে। কিন্তু খানিকটা হলেও ব্যত্যয় ঘটেছে এবার। মাঘের শুরুতেই রাজশাহীর অনেক আমগাছে আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। তাই আমচাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে।

আমপ্রধান এই অঞ্চলের মানুষের বছরের প্রায় পুরো সময় কাটে আমগাছ ও মুকুলের যত্নআত্তি নিয়েই। এজন্য মাঘের হিমেল হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে স্বর্ণালি মুকুলেই স্বপ্ন বাঁধেন চাষিরা।

আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ম-ম করতে শুরু করছে চারদিক। বনফুল থেকে মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করেছে আমের মুকুলে। মুকুলের সুমিষ্ট সুবাসে আনন্দে ভরে উঠছে চাষির মনও। গাছের কচি শাখা-প্রশাখায় ফোটা স্বর্ণালি ফুলগুলোর ওপরে সূর্যচ্ছটা পড়তেই চিকচিক করে উঠছে।

পরিবেশ ও প্রতিবেশ যেন আসছে আম উৎসবেরই জানান দিচ্ছে। আমের মুকুল ও কৃষকের স্বপ্ন তাই একই সুতোয় গাঁথা। বছরের নির্দিষ্ট এই সময়জুড়ে তাই চাষি তো বটেই চলতে-ফিরতে কমবেশি সব শ্রেণির মানুষেরও নজর থাকে চিরসবুজ আমগাছের মগডালে। আমের গাছে সদ্য মুকুল ফোটার এ দৃশ্য এরই মধ্যে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামেও।

শহরের ছোটবনগ্রাম, গৌরহাঙ্গা, শিরোইল, ভেড়িপাড়া, পুলিশ লাইন, মালোপাড়া, মেহেরচণ্ডি ও ভদ্রা আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। সোনারাঙা সেই মুকুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে বাতাসে।

রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকার আম ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, এই আম বিক্রি করেই অনেক চাষি মেয়ের বিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করেন, বড় ঋণ পরিশোধ করেন, মহাজনের কাছ থেকে টাকা দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তাই গাছ, মুকুল আর আম অনেকেরই বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন। একবার ফলন হলেও বছরের প্রায় পুরোটা সময়টা জুড়েই আম বাগানের পরিচর্যাতেই চলে যায় আমাদের। সাধারণত মাঘের শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমের মুকুল আসে। তবে এবার প্রায় এক মাস আগে মধ্য জানুয়ারিতেই কিছু কিছু গাছে আমের আগাম মুকুল এসেছে।

আমচাষিরা খুশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, শীত বিদায় নেওয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো কিছু নয়। এখন ঘন কুয়াশা পড়লে গাছে আগেভাগে আসা মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ফলনেও প্রভাব ফেলবে। টানা শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে মাঘ মাসজুড়ে যদি আবার ঘনকুয়াশাও স্থায়ী হয় তাহলে মুকুলের ক্ষতি হবে। পাউডারি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব মুকুলের অধিকাংশই ঝরে যাবে। ফলে আক্রান্ত বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই শেষ পর্যন্ত না দেখে বলা খুবই কঠিন যে, কী হবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, মাঘের শুরুতেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এরই মধ্যে মুকুল চলে এসেছে অনেক গাছে। এখন যদি ঘন কুয়াশা পড়ে এবং তা যদি স্থায়ী হয় তবে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আবহাওয়া যদি রৌদ্রোজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু বাড়ে তবে সমস্যা হবে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, রাজশাহীতে কিছু গাছে প্রতিবছরই আগাম মুকুল আসে। এটি স্বাভাবিক। এখন টানা কয়েকদিন ঘন কুয়াশা না পড়লেই ভালো। তাহলে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যাবে। আর মুকুলগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়লে ফলন খারাপ হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষদিকে যেসব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছের মুকুল স্থায়ী হবে। ফলনও ভালো হবে তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!