• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে আ.লীগ’


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৫, ২০১৯, ১০:২৮ পিএম
‘স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে আ.লীগ’

ঢাকা: আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দলের আয়োজিত আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের যে চেতনা যে আদর্শকে সামনে নিয়ে এই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতা অর্জন করে নিয়ে এসেছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ আজ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীন মানে কী? স্বাধীনতা মানে কি একটা ভূখণ্ডের স্বাধীনতা, স্বাধীনতা মানে কি শুধুমাত্র একটি পতাকা। না। স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, এই ভূখণ্ডে বাস করে যারা মানুষ তাদের স্বাধীনতা। তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং তাদের মুক্তির স্বাধীনতা। যা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজকে আবার এই ৪৮ বছর পরে ঠিক একইভাবে তারা আজকে নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ছদ্মবেশে একটা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। আজকে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন হয়েছে, আজকে সত্যিকার সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে, আজকে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকে এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, অঙ্গসংগঠনের কাজী আবুল বাশার, আহসানুল্লাহ হাসান, সাদেক আহমেদ খান, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, মামুন হাসান, হেলেন জেরিন খান, এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুল আউয়াল খান, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সেলিম রেজা হাবিব, নবী উল্লাহ নবী, মো. মোহন, মোরতাজুল করীম বাদরু, মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা চলাকালে দর্শক সারিতে থাকা নেতাকর্মীরা কর্মসূচি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দলের সহসম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আলোচনা সভার পর জাসাসের শিল্পীরা পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

ফখরুল বলেন, যারা সরকারের আছে তারা মানুষের অধিকারকে হরণ করে, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা বারবার করে এই কথা বলতে চায় যে, এখন এমন উন্নয়ন হয়েছে যে উন্নয়ন অতীতে কখনও হয়নি। এটা পৃথিবীর কাছে একটা রোল মডেল হয়ে আছে। ভেতরটা কী? ভেতরটা ফাঁকা। এই উন্নয়ন শুধু কথাই উন্নয়ন, এই উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতির উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ফলে কিছুসংখ্যক মানুষ ধনী থেকে ধনীতে পরিণত হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এখন ধনীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আমাদের আন্তর্জাতিক রিপোর্টে এসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে জন্য আমরা বলি এই সরকারকে সরানো ছাড়া জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যিনি শুধু আমাদের দলের নেতা নয়, তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের নেতা, যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। যিনি সারা জীবন ধরে এই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এত ত্যাগ কোনো নেতা এ দেশে কেউ করেনি। এই নেতা এখন পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে। প্রতিদিন তার শরীর খারাপ হচ্ছে। কী দুর্ভাগ্য ও ভয়ংকর যে, এই ভয়াবহ সরকার তার চিকিৎসা পর্যন্ত করছে না। আজকে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, যে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করব। তাকে মুক্ত করলেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় তারা স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয় নিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করে মানুষকে অন্যপথে পরিচালিত করতে চাইছে। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে যারা লুকোচুরি করে বা ইতিহাসকে বিকৃত করে যা কোনোভাবে ক্ষমার যোগ্য নয়। স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন এটা আমাদের বলার অপেক্ষা রাখে না।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, জিয়াউর রহমানের নাম এয়ারপোর্ট থেকে মুছে দিয়ে, জাদুঘর থেকে মুছে দিয়ে কখনও জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। এ দেশের মানুষের অন্তরে জিয়ার নাম গাথা। ইতিহাস বিকৃত করে তাকে মুছে ফেলা যাবে না। এই সরকার জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে ভয় পায়। সে জন্য তারা এই দলের বিরুদ্ধে, এই দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এতে কোনো কাজ হবে না।

জিয়াউর রহমান ফরম পূরণ করে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের এই বক্তব্যে ‘সঠিক নয়’ দাবি করে ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাকশাল যখন গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে আমি তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলাম। একদিন সকালে ১০টার সময়ে জেনারেল জিয়া আমাকে বললেন, দেখ তো হাফিজ আমার কাছে একটা ফরম পাঠিয়েছে। আমি দেখলাম এটা বাকশালে যোগদানের ফরম। উনি বললেন, তোমরা কী বল? আমি বললাম, স্যার এই ব্যবস্থা টিকবে না, আপনি এটাতে যোগ দেবেন না। উনি আমার দিকে তাকালেন। এরপর উনি বললেন, তুমি ঠিকই বলেছো, ফরমটা নিয়ে উনি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটের মধ্যে ফেলে দিলেন। আমি তার জীবন্ত সাক্ষী। আমি বলছি, যদি উনি (জিয়াউর রহমান) যোগদান করে দেখান, ফরম ফিলআপ করে থাকেন তা দেখান। মিথ্যাচার করে দেশটাকে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ করে দিয়েছেন। দেশে নির্বাচন হয় নাই। বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের করদরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!