• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হঠাৎ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৬, ২০১৯, ০২:৫৮ পিএম
হঠাৎ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক!

ঢাকা : হঠাৎ বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ ‘অলঙ্কৃত’ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এম মোর্শেদ খান। যদিও পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করলেছেন। তবে তার ঘনিষ্টজনরা বলছেন দীর্ঘদিনের জমানো রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকেই বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দিলেন দলটির সিনিয়র এই নেতা।

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) মোর্শেদ খানের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে মোর্শেদ খানের পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন।

এদিকে, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম ও এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী যে কোনও সময় বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন। বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছ থেকেও

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘তিনি (মোর্শেদ খান) গত ৩০ ডিসেম্বরের পরপরই বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওনার শুভাকাঙ্খীরা বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে ওইসময় পদত্যাগ থেকে বিরত রাখেন।’’

তিনি বলেন, মোর্শেদ খান সোমবার (৪ নভেম্বর) লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। তিনি দেশে ফিরে আসার পর আমি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাই। তখন বিভিন্ন কথায় তিনি (মোর্শেদ খান) বলেন, আগে লন্ডন গেলে শুনতাম ও দেখতাম ওখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য লোকজন বিএনপি বিএনপি বলতে পাগল থাকতেন। কিন্তু অবস্থা বদলে গেছে। এখন তারেক রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় যারা ওখানে বিএনপি করে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আগের সেসব লোকদের ধারে-কাছেও নেই।

ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বিএনপি মহাসচিব বরাবর দল থেকে তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে ‘নেহাত ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করলেও তা শুধু ব্যক্তিগত কারণ নয়। বরং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অবজ্ঞা, গত জাতীয় নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দেয়া এবং চট্টগ্রাম ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখার কারণেই দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান।

আর পদত্যাগের ব্যাপারে মোর্শেদ খান বলেন, ‘অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে তার উপলব্ধি হয়েছে, সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’

ঘনিষ্ঠজনরা আরো জানান, অবমূল্যায়ণের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কর্মকাণ্ডও মোর্শেদ খানকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে। তিনি তার কাছের মানুষদের বলেছেন, তারেক রহামন তার মায়ের মুক্তির বিষয়েও জোরালো কোনও আন্দোলন গড়ে তুলবেন না। দলীয় প্রধানের কারামুক্তিও তাই সুদূরপরাহত বিষয়। আর খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপির রাজনীতি করে করার কোনও ইচ্ছা তার নেই। মূলত বিভিন্ন  ক্ষোভ থেকেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াবিহীন দল পরিচালনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একক কর্তৃত্ব নিয়ে তার প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, মোর্শেদ খানের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ্যে এলো। এতদিন সিনিয়র নেতাদের নানা ক্ষোভের কথা শোনা গেলেও এই প্রথম কেউ পদত্যাগ করলেন।

সূত্র আরো জানায়, মোর্শেদ খানের দেখানো পথ ধরে আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা শিগগিরিই বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন। শোনা যাচ্ছে প্রবীণ রাজনীতিক এরশাদ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম ও এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী যে কোনও সময় বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন।

বিএনপির সিনিয়র নেতা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছ থেকেও বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে যে কোনও সময়ে। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় থেকে নিজের হতাশার কথা প্রকাশ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বরাবর পদত্যাগপত্রে মোর্শেদ খান লিখেছেন, মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমার বিবেচনায় সে ক্ষণটি বর্তমানে উপস্থিত এবং উপযুক্তও বটে। তাই অনেকটা দুঃখ ও বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে পদত্যাগের এ চিঠি।

মোর্শেদ খান আরো বলেন, রাজনীতির অঙ্গনে আমার পদচারণা দীর্ঘকালের। কিন্তু দেশের রাজনীতি এবং দলের অগ্রগতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার মতো সঙ্গতি নেই। তাই ব্যক্তিগত কারণ হেতু আমার উপলব্ধি-সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার এখনই সময়। বহুবিধ বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি অবিলম্বে আজ (গতকাল মঙ্গলবার) থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ অবস্থায় এবং স্বাভাবিক নিয়মে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহারসহ বর্তমানে ‘অলঙ্কৃত’ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘‘বিএনপির সঙ্গে আমার সম্পর্কের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অসংখ্য নেতাকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি এবং উপভোগ করেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রয়াত এবং অনেকেই বর্তমানে দলের হাল ধরে আছেন। প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি যেমন কামনা করি, তেমনি আপনিসহ বর্তমান সব কর্মী-কান্ডারীদেরও আমি মঙ্গলাকাঙ্খী। অতীত ও বর্তমান সব কর্মীর নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য, সখ্য, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার কথা আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। দলের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং দলের কর্মী হিসেবে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে বিএনপি আমাকে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে।’’

উল্লেখ্য, মোর্শেদ খান ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সাল, এর পর জুন ’৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ছিলেন। 

এছাড়া, বাংলাদেশ স্পেশাল কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!