• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাতপাখার হাওয়ায় ঘুম হারাম আ.লীগ-বিএনপির


নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ০২:০৭ পিএম
হাতপাখার হাওয়ায় ঘুম হারাম আ.লীগ-বিএনপির

বরিশাল: কীতর্নখোলা নদীর পূর্ব প্রান্ত ঘেষে বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়ন গঠিত। এ ইউনিয়নেই চরমোনাই পীরের প্রধান ঘাটি। চরমোনাইকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম ইসলামীক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।

হাতপাখা প্রতিকের এ দলটি এবার সারাদেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলেও তাদের মুল টার্গেট বরিশাল-৫(সদর) আসন। দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর ও পীরের ভাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এ আসনের প্রার্থী।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত বরিশাল-৫ এ তারা চমক দেখাতে চান। এজন্য তাদের ১০ হাজার কর্মী দিনরাত কাজ করছেন সদরে। যদিও সদর আসনে ৪ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতিকে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। অপর দিকে প্রবল দাপটে এগিয়ে নৌকা প্রতিকে আ’লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম।

তবে কীর্তনখোলার পূর্বপ্রান্তের চরমনোইসহ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ভোটের যে ছক কষেছে ইসলামী আন্দোলন তাতে চিন্তিত বড় দুই দল। শুরু থেকেই নির্বিঘেœ প্রচারনা চালাতে পাড়ায় ভোটের আগ মুহুর্তে হাতপাখার হাওয়ায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮ এর নির্বাচনে প্রাপ্ত ফলাফলে বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার ১ লাখ ৪ হাজার ৫৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম পেয়েছিলেন ৯৮ হাজার ৬৪১ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ২৭ হাজার ১৩৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকেন।

বরিশাল-৫ আসনে এবার মোট ভোটার হচ্ছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৩০জন। ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল সদর থেকে ৪ বার এমপি ও সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। ৯০ দশকের পর থেকে এ আসনটিকে বলা হত বিএনপির দুর্গ। কিন্তু ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে প্রায়ত শওকত হোসেন হিরণ মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় স্থানটি হাতছাড়া হয়ে যায় বিএনপির। সেই থেকে সিটি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর আলোচিত নির্বাচনের পর থেকে সদর আসন দখলে আছে আওয়ামী লীগের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হতে প্রবল দাপটে মাঠ দখল করে রেখেছে আ’লীগ।

বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে লড়াইয়ে নামলেও কোন ঠাসা হয়ে আছে দলটির প্রার্থী। বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল মঙ্গলবারও গনসংযোগকালে অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও থামছে না গণগ্রেফতার। ইতোমধ্যে ৭০জন বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রচারনায় তাকে একাকী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সরোয়ার।

তবে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচারনায় অনেকটা চমকে দিয়েছে হাতপাখার প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। গোটা আসনে হাতপাখার পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, পথসভা আর গনসংযোগে ভোটারদের তাক লাগিয়েছে দলটি।

অবশ্য পুর্বের ভোটের এতোটা ব্যবধান কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে- এর জবাব জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল-৫ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক কে. এম. শরীয়াতুল্লাহ বলেন, দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আসন বরিশাল-৫। জনগন এখানে বড় দুই দলের শাসনই দেখেছে। ইসলামী আন্দোলন প্রচারনায় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হলে বরাদ্ধকৃত অর্থের শতভাগ ব্যয় করবেন জনগনের মাঝে। তারা এটি পরীক্ষার জন্য একবার সুযোগ চাচ্ছেন জনগনের কাছে।

তাছাড়া নদীর পূর্বপাশে ইসলামী আন্দোলনের প্রভাব বেশি। বিশেষ করে চরমোনাই, চরকাউয়া, চাঁদপুরা, চন্দ্রমোহন ও টুঙ্গিবাড়িয়া এ ৫টি ইউনিয়নের মানুষ নদীর এ পাড়ে একজন এমপি দেখতে চান। চরমেনোইর প্রার্থীও নদীর পূর্ব প্রান্তে। ৫ ইউনিয়নের ভোটরদের এ অনুভূতিকে তারা কাজে লাগাতে চান।

তাছাড়া বিগত নির্বাচন অপেক্ষা তাদের ভোটার বেড়েছে ৫ গুন। সদ্য সম্পন্ন হওয়ায় সিটি নির্বাচনে এমন চিত্র দেখা গেছে। সে অনুযায়ী সদর আসনে পূর্বের প্রায় ২৭ হাজার ভোটকে ৮৭ হাজার ভোট করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। আর এজন্য তাদের ১০ হাজার কর্মী সদর আসনে কাজ করছে বলে জানান মিডিয়া সমন্বয়ক কে. এম. শরীয়াতুল্লাহ।

চরমনোই ইউনিয়নের বাসিন্দা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে কর্মরত গাজী ফিরোজ বলেন, কীর্তনখোলা নদীর পূর্বের ৫টি ইউনিয়নই ইসলামী আন্দোলনের দখলে। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আ’লীগ প্রতিপক্ষ বিএনপিকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিল যে চরমনোইর দলটি  দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তা টেরই পায়নি।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর মাহফিলে ভোট ব্যাংক বৃদ্ধিসহ এবার ভোটের সময় প্রচারেও এগিয়ে গেছে দলটি। তিনি বলেন, এখন এ আসনে বিএনপির-আ’লীগের জন্য মাথাব্যাথা হয়ে উঠেছে চরমনোইর দলটি।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সহ সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, বরিশালে হাতপাখা প্রতিকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে কোন বাধা দেয়নি আ’লীগ। পুলিশও আটক করেনি তাদের কোন কর্মীকে। এই সুযোগে লাভবান হতে পারে দলটি। কিন্তু এ আসনে বিএনপি বার বার নির্বাচিত হয়েছে। ধানের শীষের ভোট ব্যাংক অনেক বেশি।

এব্যপারে বরিশাল সদর উপজেলা আ’লীগের সাবেক আহবায়ক ও মহানগর সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হাতপাখা নির্বিঘেœ প্রচারনা চলিয়েছে বাড়িবাড়ি গিয়ে। এর ফলে বিএনপির কিছু ভোট চরমোনাই পাবে। পূর্বের ২৭ হাজার ভোটের বিপরীতে এবার ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ভোট পেতে পারে ইসলামী আন্দোলন।

তিনি বলেন, সদর আসনে আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কিন্তু বিজয়ী হওয়ার সক্ষমতা নেই। নৌকার অবস্থান এ আসনে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!