• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হার্ডলাইনে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৯, ২০১৮, ০৬:৫৭ পিএম
হার্ডলাইনে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা : সরকারের গতিবিধি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সরকার হার্ডলাইনে গেলে ঐক্যফ্রন্টও সেই পথে যাবে। ফ্রন্ট নেতাদের ধারণা, নিজেদের রূপরেখা থেকে পিছু হটেছে বর্তমান সরকার। সংসদ বহাল রেখে তারা মুখে নির্বাচনকালীন সরকারের আওয়াজ দিলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার নড়চড় করছে না।

এদিকে ফ্রন্টের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল ছোট আকারের মন্ত্রিপরিষদকে কাবু করতে ছোট ধাক্কা দেবে। তবে সে সিদ্ধান্তও পাল্টিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, সরকার তাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে। আর এ কারণেই সিদ্ধান্ত বদলেছে। জোট গঠনের দুই সপ্তাহ না যেতেই তাদের শীর্ষ দুই নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেকজনের নামে দখল-চুরির মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে পথ চলছেন শীর্ষ নেতারা।

বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বিভাগীয় শহর শেষে ঢাকার জনসভা থেকে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। এর জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করবে তারা। এ তথ্য জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাতে ৭ দফা দাবির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিরাজমান সঙ্কট উত্তরণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

কয়েক মাস ধরে আলোচনা ছিল সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট হতে পারে। বর্তমান সরকারের অর্ধডজন নেতা সভা-সমাবেশে জানিয়েছিলেন— তফসিল ঘোষণার আগে তাদের সরকারের আকার ছোট হবে। ওই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার নামে পরিচিত হবে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।

আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ রেখে আগামী ৪ নভেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। ঐক্যফ্রন্টের প্রভাবশালী এক নেতা জানিয়েছেন, সরকার ফ্রন্টের সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে রাজনীতিতে মঞ্চের বক্তব্য আর পর্দার পেছনের সিদ্ধান্তের মধ্যে ফারাক থাকে। এখনো তার ব্যত্যয় ঘটবে না। তাই সংলাপের দ্বার খোলা রেখেই সামনে হাঁটবে তারা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সিলেটের জনসভা সফল হওয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৭ দফা দাবি আদায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথাই ভাবছে জোটটি।

এ প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সরকারপ্রধান ও তাদের জোটপ্রধান দলের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি। সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেখি তারা কী জবাব দেন। রাজসভায় সমস্যার সমাধান না হলে রাজপথ বেছে নেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। সরকার কঠোর অবস্থায় গেলে আমরা তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।

মাঠের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গত বুধবার সিলেটে জনসভা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। গত শনিবার চট্টগ্রামে জনসভা করেছে। নেতারা বলেছেন, প্রশাসনের গড়িমসির পরও সিলেট-চট্টগ্রামে জনসভার অনুমতি পাওয়া, নেতাকর্মীদের জনসভায় আসতে বাধা দেওয়া, গ্রেফতার, তল্লাশির পরও জনসভায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছে। জনসভাও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তাদের। যদিও সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরো কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী ২ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। প্রথমে ৩০ অক্টোবর রাজশাহীতে জনসভা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করার পর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দুটি জনসভায় এমন আভাস দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ৭ দফা দাবি আদায়ে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি মেনে না নিয়ে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে ওই দিন থেকেই সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এই জোটের। তবে তার আগ পর্যন্ত দাবি আদায়ে সরকারকে আবারো সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে। শেষ পর্যন্ত যদি সরকার সংলাপের পথে না আসে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও সমন্বয়ক কমিটির সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরো একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা ঝুলছে। দুই নেতা কারাগারে যাওয়ায় সমানের কর্মসূচি সফলে আরো সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!