• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হালনাগাদ হয়না সরকারি ওয়েবসাইট, বিড়ম্বনায় সেবাপ্রার্থীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১১, ২০২০, ০৬:০৭ পিএম
হালনাগাদ হয়না সরকারি ওয়েবসাইট, বিড়ম্বনায় সেবাপ্রার্থীরা

ঢাকা : মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছিলেন ডাঃ আশুতোষ ভক্ত। ৫ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর কর্মস্থল ছেড়ে ঢাকায় এসে অবসর জীবন যাপন করছেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকারী ওয়েবসাইটে থাকা নাম্বারে ফোন করেন সেবা প্রার্থীরা। অবসরে থাকায় সেবাপ্রার্থীকে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়ে বিব্রত হন তিনি। তার সাথে বিব্রত হন সেবাপ্রার্থীরাও।

একই অবস্থা দেখা যায় কেরাণীগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্টার অফিস মডেলের সাব রেজিস্টার হিসেবে নাম রয়েছে প্রভাকর সাহার। অথচ তিনি প্রায় ১০ বছর আগে পদোন্নতি পেয়ে এ উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। এখন তিনি অবসরের যাওয়ার পর্যায়ে। 

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন গত ৯ জুলাই মারা গেছেন। কিন্তু ঢাকা জেলার ওয়েবসাইটে সংসদ সদস্যের তালিকায় জীবিত হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

জানাগেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রত্যেক সরকারি অফিসের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল ২৪ হাজার ওয়েবসাইট। উদ্দেশ্য ছিল সরকারি সব কার্যক্রম সম্পর্কে সার্বক্ষণিক আপডেট থাকা এবং জনসাধারণকে জানানো। যেন একজন সাধারণ মানুষও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কাঙ্খিত তথ্য পেতে পারেন। কিন্তু সে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ হচ্ছে না বছরের পর বছর ধরে। মৃত এমপিকেও ওয়েবসাইটে জীবিত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও স্বপদে বহাল আছেন। এমন হাজারো ভুলে ভরা সরকারি ওয়েবসাইটগুলো। এতে করে বাড়ছে ভোগান্তি। তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। 

হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা ওয়েবসাইট দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাহলে কি করছেন এমন প্রশ্ন সবার। এ ধরনের ঘটনা সরকারি শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন কিছু দায়িত্বহীন কর্মকর্তার কারণে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকারি কর্মচারিদের এ ধরনের কার্যক্রম প্রমান করে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন না। 

জানা যায়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ ওয়েবসাইট পুরোনো তথ্য দিয়ে ভরা। এতে সাধারণ মানুষ ভুল তথ্য পাচ্ছেন এবং বঞ্চিত হচ্ছেন তথ্যপ্রাপ্তির ন্যায্য অধিকার থেকে। সরকারি সেবার বিভিন্ন তথ্য সাধারণ মানুষ অবাধে না জানার ফলে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতিও বাড়ছে। একইভাবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। কিছু বিষয় শুধু ইংরেজি ভাষায় তৈরি। এ কারণে অনেক ব্যবহারকারী সহজে ব্যবহার করতে পারেন না। 

তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও বিপুল অর্থ ব্যয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও প্রকাশনা বিজি প্রেসে ছাপা হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। অথচ কভিড-১৯ শুরুর পর থেকে সাধারণ মানুষ অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে সক্রিয়ভাবে অফিস পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সরকার ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১২ সালে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ২৪ হাজার তৈরি করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ওয়েবসাইট ভুলে ভরা তথ্যে সয়লাব হয়ে আছে। এতে সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য। 

তিনি বলেন, সরকারি সব ওয়েবসাইট হালনাগদ করার জন্য প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, সরকারি অনেক কর্মকর্তা তথ্য প্রযুক্তির কাজে অনীহা রয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এসআই/এএস

Wordbridge School
Link copied!