• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুইল চেয়ারে তারুণ্যদীপ্ত ভালোবাসা


আবু রায়হান মিকাঈল ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৩:৩৫ পিএম
হুইল চেয়ারে তারুণ্যদীপ্ত ভালোবাসা

ঢাকা : অমর একুশে বইমেলা। বাঙালির প্রাণের মেলা। প্রাণের মেলায় সবার প্রাণসঞ্চার করতে ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে বসেছে একঝাঁক তরুণ/তরুণী। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় মুগ্ধ বইমেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা। মেলার শুরু থেকে এই শেষলগ্ন পর্যন্ত তাদের কর্মজ্ঞ মুহূর্তগুলো ছিল নয়ানাভিরাম।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে এই প্রাণের মেলা। শতশত লেখকের অজশ্রু বইয়ের সমারোহ আর দর্শনার্থীদের উপস্থিতি মেলাকে প্রাণোবন্ত করে তোলে। ফেব্রুয়ারি মাস যেমন গৌরবের তেমনই আত্মত্যাগেরও। কিন্তু আমরা সামান্যতমও কি আত্মত্যাগের কাজ করেছি এ মাসে? কি সার্থকতা এই মেলার? কি শিক্ষা নিচ্ছি আমরা মেলা থেকে?

মাসব্যাপী বইমেলা কি শিখিয়েছে জানিনা; তবে টিএসসি’র সামনে বইমেলার প্রবেশ পথের একটি দৃশ্য ঠিকই কিছু একটা শিখিয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি, বিকাল সাড়ে ৪টা। গাড়ি থেকে বইমেলার প্রবেশ পথে নামতেই দেখলাম একঝাঁক তরুণ/তরুণী হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে। যাঁরা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও হেঁটে চলাফেরা করতে পারে না তাদের জন্য এই হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। বইমেলায় বিনাখরচে সেবাটি দিচ্ছে ‘সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে চালাচ্ছে এই কার্যক্রম।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি হুইল চেয়ারে চড়ে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরেছি বেশ কিছুক্ষণ। আমাকে পুরো মেলা ঘুরে দেখিয়েছেন সুইচ বাংলাদেশের সদস্য ও সদ্য গ্রাজুয়েট শেষ করা তরুণ শিপলু। শিপলু ভাইয়ের আন্তরিকতা আর ভালোবাসা আমাকে খুব মুগ্ধ করছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম আমাকে নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে। এজন্য আমি বারবার বলছিলাম- ভাইয়া থাক, আর না। এবার চলে যায়। তখন উনি একটু মুচকি হেসে বললেন- কেন, মাত্র তো মেলায় আসলেন। আরেকটু ঘোরেন। এই বলে উনি আমাকে দীর্ঘক্ষণ মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখালেন।

বইমেলা ঘুরে টিএসসি মোড়ে এসে সুইচ বাংলাদেশের সদস্যদের মাঝে প্রায় ঘন্টাখানিক সময় কাটালাম। তাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে জানতে পারলাম তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ইডেন কলেজের কয়েকজন ছাত্রীও ছিল তাদের সঙ্গে। পড়াশোনা আর টিউশুনির মধ্যদিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের অনেকেরই। ব্যস্ততার মাঝে তবুও একটু অবসর সময় খুঁজে এখানে এসেছেন তারা।

হুইল চেয়ার ধরে প্রতিবন্ধীদের সেবাদানে অপেক্ষায় থাকা এক তরুণী বললেন- মেলার শুরু থেকে আমরা প্রতিদিন এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এভাবে একদিন এই কংক্রিটের শহরে ভালোবাসার মেলবন্ধন তৈরি হবে।

সেখানে আমি বসে থাকতেই দেখলাম শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অন্ধ ব্যক্তিরা মেলায় এই ফ্রি হুইল চেয়ার সেবা পেয়ে অনেক খুশি। তাদের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে কেউ কেউ আবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন।

এ সময় সেখানে আমার সঙ্গে কথা হয় সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমানের। তিনি জানান- গত তিন বছর ধরে সংগঠনের সদস্যরা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও যারা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে অক্ষম তাদেরকে হুইল চেয়ারের মাধ্যমে মেলায় প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছেন। কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর যতক্ষণ মন চায় তিনি ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সহায়তায় হুইল চেয়ারে করে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরতে পারেন। মেলায় এবারই প্রথম শিশুদের জন্য বিশেষ হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি।

এদিকে রাজধানীর ঢাকা উদ্যানে একটি বিনামূল্যে স্কুল পরিচালনা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। যেখানে প্রায় দেড় শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। খুব অল্প সময়ে সংগঠনটি আত্মমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

কংক্রিটের শহরে হুইল চেয়ারে তারুণ্যদীপ্ত এই ভালোবাসা একদিন বদলে দেবে চারপাশটা। যে বয়সের তরুণ/তরুণীরা স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গ করেছে এই সেবায়; ঠিক সেই বয়সের বহু তরুণ/তরুণীরা নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে নানান আড্ডায়। আর এই আড্ডা থেকে তারাও একদিন ফিরবে শান্ত নীড়ের ছাঁয়ায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!