• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকি হয়ে উঠতে পারে নিপাহ ভাইরাস


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০১:৫৮ পিএম
হুমকি হয়ে উঠতে পারে নিপাহ ভাইরাস

ঢাকা : বাদুড়বাহিত নিপাহ ভাইরাস মারাত্মক মহামারীর কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৯৯ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস পরবর্তীতে ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরে শুরু হওয়া নিপাহ ভাইরাসবিষয়ক এক সম্মেলনে সহ-আয়োজক কোয়ালিয়শন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড হ্যাচেট এ সতর্ক বার্তা দেন। খবর বিবিসি।

তিনি বলেন, নিপাহ আক্রান্তদের চিকিৎসায় এখনো কোনো ওষুধ কিংবা টিকা উদ্ভাবন না হওয়ায় এতে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৯০ শতাংশ। এটি শনাক্তের পর ২০ বছর কেটে গেছে, কিন্তু নিপাহ ভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সমালানোর মতো পর্যাপ্ত উপকরণ এখনো বিশ্বে নেই।

নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সীমাবদ্ধ। তবে এটি মারাত্মক মহামারির রূপ নিতে পারে। কারণ এ ভাইরাসের বাহক টেরোপাস (ফ্লাইং ফক্স নামেও পরিচিত) বাদুড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, যেখানে প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। মানুষের মাধ্যমেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে, সে ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটির ছড়িয়ে পড়াটাও খুব স্বাভাবিক।

সিঙ্গাপুরে দুদিনব্যাপী নিপাহ সম্মেলনের আরেক আয়োজক হচ্ছে ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুল। সম্মেলনের কো-চেয়ার ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ওয়াং লিনফা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগটিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখলেও নিপাহ ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক টিকা

এখনো নেই। তবে এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশেষজ্ঞরা এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ খুঁজে পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এ সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সে বাদুড় যদি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং তাহলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। এছাড়া শূকরের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়ায়।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। খিচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। সংক্রমণ রোধে খেজুর গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইয়ের মতো ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোগতত্ত্ববিদ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী ও নাগরিক সংগঠন নিয়ে ২০১৭ সালে গড়ে ওঠে সিইপিআই। এতে মূলত নতুন, অজ্ঞাত রোগের প্রতিষেধক তৈরি ও উন্নয়নে কাজ করে থাকে।  

সংগঠনটি যেসব রোগ নিয়ে কাজ করছে, তার মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে নিপাহ। এ ভাইরাস শনাক্তের দুই বছরের মধ্যেই ২০০১ সালে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও রংপুরে মানব দেহে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মতে, ২০১১ সালে বাংলাদেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর ভারতের কেরালায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!