• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ুন আহমেদের প্রয়াণ দিবসে আজ নুহাশ পল্লীতে যতো আয়োজন


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৯, ২০১৯, ০৮:২২ এএম
হুমায়ুন আহমেদের প্রয়াণ দিবসে আজ নুহাশ পল্লীতে যতো আয়োজন

ঢাকা: সবুজ ঘাসে ঢাকা প্রশস্ত মাঠ, পাখির কলকাকলি, লীলাবতী দীঘির স্বচ্ছ জল, ঔষধি বাগান, লতা-পাতায় ঘন সবুজে আচ্ছাদিত দীর্ঘ দেহের ছাতিম গাছ, লেখার টেবিল, থরে থরে সাজানো বই কিংবা রাজহাঁসের দল- নুহাশপল্লীর প্রান্তরজুড়ে সবই আছে আগের মতো। শুধু নেই প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ।

সেই না থাকার সাত বছর পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার (১৯ জুলাই)। ২০১২ সালের এই দিনে হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা থেকে বহু দূরে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চার দিন পর হুমায়ূনকে ভালোবাসার অর্ঘ্য দেন লাখো মানুষ। পরদিন ২৪ জুন নুহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয় এ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ লেখককে।

নন্দিত লেখক ও নির্মাতার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তারই হাতে তৈরি করা নুহাশ পল্লী সেজেছে বিষাদের সজ্জায়। তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনায় নেয়া হয়েছে বেশি কিছু আয়োজন।

থাকছে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। নুহাশ পল্লীর আশপাশের মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র, পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ুন আহমেদের ঘনিষ্ট কয়েকজন লেখকসহ পাঁচ শতাধিক লোককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, ‘শুক্রবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করবে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবে। ওই দিনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ পল্লীতে পৌঁছাবেন।

এছাড়া কথা সাহিত্যিকের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেবেন।’

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থি নুহাশ পল্লীতে আসবেন। বিশেষ করে হুমায়ূন ভক্ত তরুণ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থি থাকবেন।

ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, ‘মৃত্যুার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়েছে। এতিম শিশু ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথি, এলাকার লোকজন ও হুমায়ুন স্যারের পরিবারের লোকজন থাকবেন।

শুক্রবার ভোরে হুমায়ুন স্যারের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ ও তার সন্তানরা নুহাশ পল্লীতে আসার কথা রয়েছে। দিনটি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে।’

মৃত্যুর সপ্তম বার্ষিকীতে হুমায়ূনতীর্থ নুহাশপল্লীতে নামবে ভক্ত-অনুরাগী ও সাধারণ দর্শনার্থীর ঢল। এতিম ও অনাথ শিশুদের খাওয়ানো হবে হুমায়ূনের পছন্দের খাবার। নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। পিরুজালী ও এর আশপাশের এতিমখানার অন্তত সাড়ে ৩শ' এতিমসহ সহস্রাধিক মুসল্লিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরা থাকবেন। আসবেন হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশকরাও।

তবে দেশের বাইরে থাকায় উপস্থিত থাকতে পারছেন না হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটালেও হুমায়ূন আহমেদের শুরু কবিতা দিয়ে। এর পর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন প্রতিভা ও সাফল্যের স্বাক্ষর। তিনি বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম কাজল। বাবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান লেখক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।

১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে' প্রকাশের পরপরই হুমায়ূন আহমেদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। টিভি নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম টিভি নাটক 'এইসব দিনরাত্রি' তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

১৯৭৩ সালে গুলতেকিন খানের সঙ্গে বিয়ে হয় হুমায়ূন আহমেদের। এই দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৩ সালে তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। 

গৌরীপুরবাসীর দাবি :হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে রেলমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন স্থানীয় হুমায়ূনভক্তরা। স্মারকলিপিতে তার নামে একটি ট্রেনের নাম রাখা এবং গৌরীপুর জংশনে তার স্মৃতি রক্ষার দাবি করা হয়েছে। 

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, উদ্যোক্তারা ঢাকা-নেত্রকোনায় চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনটির নাম হুমায়ূন আহমেদ করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের একটি কালজয়ী উপন্যাসের নাম 'গৌরীপুর জংশন'। 

২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটি গৌরীপুর জংশনে হুমায়ূন আহমেদ চত্বর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন এর সভাপতি মোতালিব বিন আয়েত। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আবদুর রশিদ জানান, চত্বর নির্মাণ এবং ট্রেনের নামকরণের বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। 

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!