• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ

১০০ টাকার চার্টের মূল্য ৭ হাজার ৮০০ টাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, ১১:০৯ এএম
১০০ টাকার চার্টের মূল্য ৭ হাজার ৮০০ টাকা

ঢাকা : হবিগঞ্জের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে অ্যানাটমিক্যাল চার্ট সরবরাহে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ৪৫০টি অ্যানাটমিক্যাল চার্ট সরবরাহ করেছে। সেই হিসাবে প্রতিটির দাম পড়েছে ৭ হাজার ৮০০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইট দারাজ ডটকম বিডি থেকে ৪৯৬ টাকায় অ্যানাটমিক্যাল চার্ট  কেনা যায়। আন্তর্জাতিক অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইট আমাজনের বিভিন্ন অ্যানাটমিক্যাল চার্টের দাম দেখানো হয়েছে ৮ থেকে ২৫ দশমিক ৯৫ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৬৭২ থেকে ২ হাজার ১৭৯ টাকা।

স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানের বাজারে প্রতিটি চার্ট ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়।

শুধু অ্যানাটমিক্যাল চার্ট নয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের জন্য সরবরাহ করা কম্পিউটার, প্রিন্টার, প্রজেক্টর, ওজন মাপার যন্ত্র, আসবাবপত্র, বইয়েরও নিয়মিত মূল্য ছাড়া অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিলে হিটাচি স্টারবোর্ডের ৭৯ ইঞ্চি ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড সেটের বিল দেখিয়েছে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্ত ইউএস ডটকমে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১৯৫ ডলারে হিটাচি স্টারবোর্ড কিনতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এর নিয়মিত দাম এক লাখ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় হবিগঞ্জ শহরের অথেনটিক কম্পিউটারের মালিক নোমান খান বলেন, তার দোকানে হিটাচি কোম্পানির ৭৯ ইঞ্চি ইন্টারেক্টিভ বোর্ড এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

আরেকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠন পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। তারা তাদের বিলে একটি ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্রের দাম দেখিয়েছে ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ বাজারে ভালো মানের ওজন মাপার যন্ত্রের দাম ৭০০ ডলার বা ৫৯ হাজার ৫০০ টাকার বেশি না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অষ্টম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর সমৃদ্ধ ১১০ মডেলের লেনোভো কোম্পানির ৬৭টি ল্যাপটপের দাম দেখানো হয়েছে ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। সে হিসাবে, প্রতিটি ল্যাপটপের দাম এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কিন্তু এসব ল্যাপটপ বাজারে ৩৯ থেকে ৪২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া। এ ছাড়া একটি এইচপি রঙিন প্রিন্টারের (মডেল জেট প্রো এম৪৫২ এন ডব্লিউ) দাম ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যার নিয়মিত দাম ২৯ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো আবু সুফিয়ান ছয় সদস্যবিশিষ্ট দরপত্র কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ফার্নিচার, বই, জার্নাল, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার জন্য দুটি জাতীয় এবং একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় দরপত্র জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেন। পরে সাতটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয় এবং ঢাকার শ্যামলীর নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ এবং মতিঝিলের পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল পণ্য সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে ডা. আবু সুফিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। তবে গত ২৬ নভেম্বর জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি দাবি করেছিলেন, পুরো ক্রয় প্রক্রিয়াটি হয়েছে স্বচ্ছভাবে।

অনেক চেষ্টা করেও নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ এবং পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গত ১৫ অক্টোবর হবিগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী তথ্য অধিকার আইনে নথিগুলোর জন্য আবেদন করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রথমে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন উৎস থেকে জানতে পেরেছি। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শাখা শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সরঞ্জাম ও উপকরণ ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জে দুদকের উপপরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরপর এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করব। প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত তদন্ত শুরু হবে।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের জন্য কেনাকাটা করতে গত বছর প্রায় ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়করের জন্য এক কোটি ৬১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয় এবং বাকি ১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কেনাকাটায় ব্যয় করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!