• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

১১ জন শেষ, মৃত্যুর পথে আরও ২০ জন


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৩:১০ পিএম
১১ জন শেষ, মৃত্যুর পথে আরও ২০ জন

ঢাকা: কেরানীগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের সবার অবস্থা খারাপ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কেরানীগঞ্জের ঘটনায় যে রোগীগুলো হাসপাতালে এসেছে, তাদের সবার অবস্থা খারাপ। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ স্টাফরা অনেক কষ্ট করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ঢামেক বার্ন উইনিটে ভর্তি দগ্ধদের খোঁজ-খবর নেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কেরানীগঞ্জের ঘটনায় যে রোগীগুলো হাসপাতালে এসেছে, তাদের সবার অবস্থা খারাপ। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ স্টাফরা অনেক কষ্ট করেছেন। এখনো যারা ভর্তি আছেন তাদের অবস্থা খারাপ। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খবর রাখছেন। সরকারি করছে তাদের চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অনেক কারখানা আছে যারা নিয়ম কানুন মেনে কাজ করে না। অনেক জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। এ বিষয়ে মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের উদাসীনতাই এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আজ যেখানে আগুন লেগেছে। সেখানে নিশ্চয় আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ছিল না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পুরান ঢাকার কয়েক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য সরকার তাদের জন্য বড় জায়গা করে রেখেছে। পুরান ঢাকার ক্যামিকেল গোডাউনগুলো সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। সব কারখানায় ফায়ার সেফটি ভালো রাখতে হবে। দুর্জয় নামে একজন রোগী ছিল। নিজ ইচ্ছায় তাকে বাসায় নিয়ে গেছে।

বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যেসব রোগী এসেছে সবগুলোই মেজর। বন্ধ ঘরে আগুন লাগলে যে অবস্থা হয়। এ আগুনটাও তেমন ছিল। এখন পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ১১ জন মারা গেছে। ভর্তি আছে আরও ২০ জন। তাদের মধ্যে পুরান বার্ন ইউনিট থেকে ১১ জনকে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নেয়া হয়েছে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে কেরানীগঞ্জের ওই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ওই ঘটনায় ৩০ জনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন উইনিটে ভর্তি করা হয়।

দগ্ধ শরীরে পোড়ার জ্বালা নিয়ে স্ত্রীর কাছে ছুটেছিলেন আলম
পোড়া শরীর নিয়ে দৌড়ে বাসায় ছুটে এসেছিলেন আলম। স্ত্রী রুমাকে ডেকে বলেছিলেন, "আমারে বাঁচাও রুমা, আমারে বাঁচাও। অগ্নিদগ্ধ স্বামীকে চেহারায় না চিনলেও কণ্ঠ শুনে চিনতে পারেন রুমা। পাগলের মতো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। পানি এনে স্বামীর শরীরে ঢালতে থাকেন। তার কান্না শুনে প্রতিবেশীদের অনেকে ছুটে আসেন। গাড়ি ডেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলম মারা যান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢামেক জরুরি বিভাগ সংলগ্ন মর্গের সামনে রুমা আহাজারি করে বলছিলেন, বাঁচার জন্য কি আকুতি জানিয়েছিল কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না।

মাসিক বেতন ও ওভারটাইম মিলিয়ে ১১ হাজার টাকা বেতনে গেল ৫ বছর কেরানীগঞ্জের হিজলতলা বাজার সংলগ্ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানায় কাজ করছিলেন আলম। ফ্যাক্টরির পাশেই তার বাসা। একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন তার বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক। গতকালের দুর্ঘটনায় তিনিও দগ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে রাজ্জাক আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন।

রুমা নিঃসন্তান। মর্গে আহাজারি করে বলছিলেন এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো? আলম ও রাজ্জাকের ছোট ভাই একবার মর্গের সামনে আরেকবার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে দৌড়াদোড়ি করছিলেন। তিনি বললেন, বড় ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। যেকোনো সময় দুঃসংবাদ আসতে পারে। তার ছোট্ট ভাতিজিকে জানেনা তার বাবার এই অবস্থা।

পুড়ে অঙ্গার ছেলের মরদেহ ব্রেসলেট দেখে চিনলেন বাবা

ঘটনাস্থলে নিহত একজনের মরদেহ গতকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পড়া ছিল। অনেকেই মর্গে মরদেহের মুখ দেখলেও কেউ চিনতে পারছিলেন না। অবশেষে বৃহস্পতিবার তার বাবা গুলজার হোসেন তাকে চিনতে পেরেছেন। তবে মুখ দেখে নয়, ছেলের বাম হাতের ব্রেসলেটটি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেছেন তিনি।

নিহতের নাম মাহবুব (২৫), বাড়ি রংপুরের পীরগাছায়। গত ৫ বছর ধরে তিনি কেরানীগঞ্জের প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে মেশিন অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ছেলের মরদেহ শনাক্ত করে দিশেহারা বাবা গুলজার হোসেন বলছিলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে মাহবুবকে ফোন দিচ্ছি, রিং বাজে কিন্তু কেউ ধরে না। এরপর রাতে ফোন বন্ধ পেলাম। রাতেই আমার এক ভাতিজা ফোন দিয়ে বলল, ছেলে যে কারখানায় কাজ করত সেখানে আগুন লেগেছে। সেই সংবাদ শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে আসি। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ৩১ জনের নামের তালিকা দেখে তাদের কাছে যাই। কিন্তু আমার ছেলে ছিল না।’

‘এরপর সকালে আমি জানতে পারি মর্গে একটি লাশ রয়েছে। মর্গে গিয়ে দেখতে পাই একটি পোড়া লাশ, পুরোটাই পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এর বাম হাতে একটা ব্রেসলেট ছিল। ব্রেসলেটটি আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে বাম হাতে পড়তো।’

মাহবুব গত বছরের আগস্টে কোরবানি ঈদের সময় সর্বশেষ বাড়িতে গিয়েছিলেন। বাবা গুলজার হোসেন ঢাকার মিরপুরে থাকেন। তিনি একজন রিকশাচালক। গত ১৫ দিন আগে সর্বশেষ বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন মাহবুব। তিনদিন আগে মাহবুব তার বাবাকে ফোন দিয়ে এক কেজি মধু কিনতে বলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা গুলজার বলেন, ছেলে ফোন দিয়ে বলল যে তার একটি ওষুধ বানাতে হবে। সেটার জন্য মধু দরকার। আমি মধু কিনে বাসায় রেখে দিয়েছিলাম। আগামীকাল (শুক্রবার) আমার মিরপুরের বাসায় আসার কথা ছিল তার। এখনতো ছেলে আর কোনোদিন ফিরবে না।

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় ছিলেন মাহবুব। বোনটি এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে তার ছোট ভাই।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!