• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
রিফাত হত্যার ষড়যন্ত্রকারী মিন্নি

১২৩২ পৃষ্ঠার চার্জশিট, সাক্ষী ৭৫, আলামত ৫০


আদালত প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম
১২৩২ পৃষ্ঠার চার্জশিট, সাক্ষী ৭৫, আলামত ৫০

ঢাকা : বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন আদালত।

বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী ১ হাজার ২৩২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করে নথিভুক্ত করেছেন।

অভিযোগপত্রে বাদীসহ মোট ৭৫ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। এছাড়াও তদন্তে প্রাপ্ত ৫০ প্রকারের আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হয়েছে।

বয়সের ভিত্তিতে দাখিল করা দুই খণ্ডের অভিযোগপত্রের প্রথম খণ্ডে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ১০ জন আসামি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রিফাত ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ১৪ জন কিশোরের নাম। এতে রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই রিশান ফরাজীকে ১নং আসামি করা হয়েছে। মিন্নির জামিন শুনানির জন্য বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ  মামলার মূল নথি রয়েছে।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থেকে মূল নথি আসার পর বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগের উপর শুনানি শেষে আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে সূত্র জানায়।

অভিযোগপত্রের সঙ্গে যা আছে : রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পুলিশের দাখিল করা মূল অভিযোগপত্র দুটি খণ্ডে মোট ৩৪ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খণ্ডে মিন্নিসহ অন্য ১ জনের বিরুদ্ধে একটি খণ্ড ১৬ পৃষ্ঠার এবং কিশোর অপরাধীদের অভিযোগপত্র ১৮ পৃষ্ঠার।

এ ছাড়াও ১৫ জন আসামির ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জমা দেয়া হয়েছে। মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশের গ্রহণ করা ৭৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ৫০টির বেশি আলামতের জব্দ তালিকা ও বিভিন্ন সময়ে আসামিদের ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল ডিটেইলস অভিযোগপত্রের সঙ্গে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।

যেসব আলামত জব্দ করেছে পুলিশ : অভিযোগপত্রের সাথে আলামত হিসেবে একটি স্যামসাং ও একটি ধূসর রংয়ের অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, হত্যায় ব্যবহৃত রামদা, বন্ড ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের প্রোফাইল ছবির একটি স্ক্রিনশট, ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস এর কপি ১২ কপি স্ক্রিনশট, বন্ড ০০৭ গ্রুপের ১১ জন সদস্যর প্রোফাইল ছবির ১১টি স্ক্রিনশট, বন্ড ০০৭ গ্রুপের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দেয়া ১১ জন সদস্যর ম্যাসেঞ্জারের ১১ কপি স্ক্রিনশটের প্রিন্টেড কপি জমা দেয়া হয়েছে।

মামলায় মিন্নির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ও আলামত জমা দেয়া হয়েছে : তদন্তকারী কর্মকর্তা রোববার বিকালে আদালতে ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দাখিল করেছেন এর প্রথম খণ্ডের অভিযোগপত্রে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। এতে মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘হত্যার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে রিফাত হত্যার আগে ও পরে মিন্নির সাথে ঘাতক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজির সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও অভিযোগপত্রে রিফাতকে নয়ন বন্ডরা কুপিয়ে জখম করার পরও মুঠোফোনে যোগাযোগ ও নয়ন বন্ডের সাথে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তার আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মিন্নির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিপরীতে নয়ন বন্ডের মায়ের নামে নিবন্ধিত একটি সিমের গোপনে মিন্নি ব্যবহার করত এমন অভিযোগ এনে ওই নম্বরের সাথে নয়ন বন্ডের বিভিন্ন সময়ে কল লিস্ট ও কল ডিটেইলস জমা দিয়েছেন।

এছাড়াও আলামত হিসেবে নিহত নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ স্যালোয়ার কামিজ, আই ভ্রু, মিন্নির ছবি, মাথা আচরানো চিরুনি, চিরুনিতে পেচানো নারীদের চুল জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রের বিবরণিতে অধিকাংশ জায়গায় মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

রিফাত শরীফ হত্যার মূল কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে অভিযোগপত্রে : রিফাত শরীফকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে, রিফাত শরীফের সাথে বিয়ে পরবর্তী নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির সম্পর্কে সৃষ্ট বিরোধিতার জেরেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্নি ও নয়ন বন্ড এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবরণিতে বলা হয়, প্রথমে মিন্নি নয়নকে বিয়ে করে। বিষয়টি গোপন রেখে ফের রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের সাথে গোপনে যোগাযোগ ও বাসায় যাতায়ত অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ হেলাল নামের এক যুবকের কাছ থেকে রিফাত শরীফের মুঠোফোন কেড়ে নেয়া নিয়ে নয়নের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং সবমিলিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে রিফাত শরীফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগে মিন্নির বিরুদ্ধে ১২০-বি(১) ধারায় অপরাধ সংগঠিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভূবন চন্দ্র হাওলাদার দণ্ডবিধি আইনের ১২০-বি (১) ধারা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধারায় কেউ অপরাধ সংগঠিত করলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাবাস বা দুই বছর বা  ততোধিক মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আদালত অপরাধ বিবেচনায় এর যে কোনো একটি শাস্তি দিতে পারেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির অভিযোগপত্রের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে রাজী হননি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!