• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সংস্কার হবে ২০১৭ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক

২ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা দেবে এডিবি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০১:০০ পিএম
২ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা দেবে এডিবি

ঢাকা : সংস্কারের আওতায় আসছে গত ২০১৭ সালের বন্যায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া ২১ জেলার পল্লী এলাকার সড়কগুলো। সংস্কার করা হবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ জেলার সড়ক।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের অর্ধেক জেলার পল্লী সড়ক সংস্কারে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রকল্প। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অবশিষ্ট ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এ বিষয়ে আজ সরকারের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করবে সংস্থাটি। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার সহজ শর্তে ও অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার তুলনামূলক কঠিন শর্তে ছাড় করবে সংস্থাটি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ ও এডিবির পক্ষে সংস্থার ঢাকা আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুক্তিতে সই করবেন।

এডিবি সূত্র জানায়, দেশের পাঁচ বিভাগের ৩৪ জেলার মোট ১৮০ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ হবে। এর ২ হাজার ২১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক সংস্কার করা হবে। সংস্কারের আওতায় আসবে ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক। বৃক্ষরোপণ করা হবে ২৫০ কিলোমিটার সড়কে।

২০২৩ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়।

উৎপাদনশীল কৃষি এলাকায় উচ্চ আয় সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক কেন্দ্রে যাতায়াত সুগম করতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সংযোগ উন্নয়ন, সড়ক অবকাঠামোগুলোকে জলবায়ু সহিষ্ণু এবং নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্যসংবলিত সব ধরনের আবহাওয়া উপযোগী করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর কাজ শেষ হলে ৫ কোটি ১৫ লাখ কৃষিনির্ভর মানুষ সুফল পাবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।

এ বিষয়ে এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বছর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ। পল্লীর মাত্র ২৮ শতাংশ সড়ক বর্ষায় ব্যবহারের উপযুক্ত থাকে। ইউনিয়ন পর্যায়ের ৮৪ শতাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। আর উপজেলা পর্যায়ে কাঁচা সড়কের হার ৩৩ শতাংশ। যাতায়াত অবকাঠামোর ত্রুটিতে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ। ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামের ৮০ শতাংশ সড়ক সারা বছর ব্যবহারের যোগ্য করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে সংস্থাটি।

এডিবি সূত্র জানায়, সংস্থার নমনীয় ঋণদান তহবিল অর্ডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর-কনসেশনাল) থেকে ১০ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। এ ঋণের সুদের হার ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। তুলনামূলক কঠিন শর্তের ওসিআর রেগুলার থেকে আসবে ১০ কোটি ডলার। লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে এ ঋণে আরো দশমিক ৬ শতাংশ সুদ ধার্য করা হয়েছে।

এডিবি সূত্র জানায়, কৃষি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশে পল্লী সড়ক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি খাতের হাত ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ শতাংশ এলেও এ খাতে মোট শ্রমশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। এডিবির অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতাভুক্ত পল্লী সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। এর ফলে পল্লী অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে কৃষির অবদান বাড়াতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে।

সংস্থাটি আরো জানায়, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ এখনো পল্লীতে বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশই কৃষিতে নির্ভরশীল। পল্লীর নাজুক পরিবহন ব্যবস্থা, বাজারে অংশ নেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কয়েকটি দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশর কৃষি খাত পিছিয়ে আছে।

প্রকল্পের আওতায় ৩৪ জেলা নির্বাচনে ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি। জনসংখ্যার পরিমাণ, কৃষির সম্ভাবনা, কৃষি খামারের সংখ্যা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্বাচন করা হয়েছে। এসব সড়কে বিভিন্ন ট্রাফিক চিহ্ন, পাহারা চৌকি, স্পিড ব্রেকারের মতো নিরাপত্তামূলক উদ্যোগও থাকবে। কাজ শেষে পাঁচ বছর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের শর্তে এ সব সড়ক নির্মাণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!