ঢাকা : এই মুহূর্তে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭.৫ বিলিয়ন। এর মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন একজনকে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি হলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান শি জিন পিং। ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১৮ সালে যে ১০ জন ক্ষমতাবান ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে তাদের মধ্যে শি জিন পিংই প্রথম। তিনি পিছনে ফেলে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। পুতিন রয়েছেন দুই নম্বরে। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আছেন তিন নম্বরে। সেরা দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি আছেন ৮ নম্বরে।
অর্থনীতি রাজনীতিতে সারাবিশ্বে কে কেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন, কার জনপ্রিয়তা কেমন, ব্যক্তিত্ব হিসেবে কে কেমন আকর্ষণীয় ইত্যাদি বিবেচনা করে ফোর্বস ম্যাগাজিন জনগণের রায়ের ভিত্তিতে প্রতিবছর ১০ জন ক্ষমতাবান ব্যক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচিত তালিকার সেরা ১০ ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আয়োজনটি সাজিয়েছেন মিরাজ রহমান। লিখেছেন কামরুল আহসান
শি জিন পিং : বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। যার মোট জনসংখ্যা ১৩৮ কোটি। তার চেয়েও বড় কথা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশটি এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ। তথ্য-প্রযুক্তি ও বিশ্ববাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বিপুল দাপটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন প্রধান মাথাব্যথা চীনের উত্থান।
চীনই তার প্রধান শত্রু এবং বন্ধুও। কারণ চীনের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে আর নাক গলাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। আর চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড খ্যাত সিল্ক রোড এগিয়ে যাচ্ছে চীনের পশ্চিম সীমান্ত থেকে পাকিস্তান হয়ে মধ্যপ্রাচ্য ভেদ করে একেবারে আফ্রিকা পর্যন্ত। প্রায় অর্ধেকটা পৃথিবী তারা নিয়ে নিচ্ছে নিজেদের বিশাল ব্যবসায়িক আওতায়। তার সঙ্গে করছে বিপুল বিনিয়োগ।
আর এ সব প্রযুক্তি যার একার সিদ্ধান্তে এগিয়ে যাচ্ছে, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট বা নিজ দল কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান শি জিন পিং। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এবং দুই মেয়েদি প্রেসিডেন্ট থাকার সংবিধান সংশোধন করে তিনি প্রায় আজীবন চীনের প্রেসিডেন্ট থাকার পথ পরিষ্কার করেছেন। অর্থাৎ মৃত্যু ছাড়া বা শারীরিক অক্ষমতা ছাড়া আর কোনো কারণে তাকে তার পদ থেকে কেউ নামাতে পারবে বলে মনে হয় না। শি জিন পিং ১৫ জুন ১৯৫৩ সালে বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি উত্তর চীনের শানসি প্রদেশে কমিউনিস্ট গেরিলা আন্দোলনের অন্যতম নেতা, পরবর্তীতে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী শি জোং শুনের দ্বিতীয় সন্তান।লিয়ন ডলার রেখে বাকি অর্থই বিলিয়ে দেবেন মানবকল্যাণে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প : ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্ভবত এ যাবৎকালের সবচেয়ে বিতর্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন। রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে। নারী কেলেঙ্কারি, অশ্লীল কথাবার্তা বলে আগে থেকেই তিনি বিতর্কিত।
রাজনীতির মাঠ থেকে নয়, তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ব্যবসায়িক জগৎ থেকে। পৈতৃক সূত্রেই তিনি বিরাট ধনকুবের, নিজে সেই সম্পদ আরো বাড়িয়েছেন। তিনি পুরো নির্বাচন করেছেন নিজের টাকায়। রিপাবলিক দলের বিরাট অনুদানকারী ছিলেন। প্রথমে রিপাবলিক দলের অনেক সিনিয়র নেতাই তার বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু অদ্ভুত সব কথায় হঠাৎ করেই খুব দ্রুত তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার কথা। মুসলিম বিদ্বেষী, অভিবাসনীতির বিরোধী, আমেরিকার শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, আমেরিকাই প্রথম ইত্যাদি কথা বলে তিনি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। অবশেষে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে দিয়ে ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে বিতর্ক অব্যাহত থাকে।
বিশেষ করে তার জয়ের পেছনে রুশ গোয়েন্দাদের হাত ছিল, এমন বিতর্ক আজো শেষ হয়নি। সে যাই হোক, এখন পর্যন্ত তিনি বিতর্ক নিয়েই টিকে আছেন। তার পারিবারিক জীবন নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। তার বর্তমান স্ত্রী তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট, তিনি একজন জনপ্রিয় মডেল ছিলেন। মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে তিনি বর্ণবাদের পরিচয় দিয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিস : ক্যাথলিক গির্জার ২৬৬তম পাদরি মানে বর্তমানে যিনি ভ্যাটিকান সিটির পোপ, সেই পোপ ফ্রান্সিস হলেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ ষষ্ঠতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। রোমের বিশপ হিসেবে, তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটি উভয়েরই প্রধান। তিনি জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ারসে।
১৯৬৯ সালে ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তিনি অভিষিক্ত হন। পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯১৩ সালের ১৩ মার্চ। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন ক্যাথলিক যাজকদের প্রশিক্ষণ কলেজে। কিছুদিন কাজ করেছেন রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ হিসেবে। তার জন্মনাম জর্জ মারিও বেরগোগলিও।
বিশ্বজুড়ে তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ তিনি অত্যন্ত উদারমনা, গণতান্ত্রিক এবং মানবপ্রেমিক। পশ্চিমা শক্তি যখন একচেটিয়াভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসী বানিয়ে ফেলছে, তখন এর বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও সারা বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরির জন্য ইসলামের সঙ্গে আন্তঃধর্ম আলোচনা জোরদার করতে পশ্চিমা শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুধু ইসলাম নিয়েই নয়, খেলাধুলা, বিবর্তনবাদ, প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতা নিয়ে মানবকল্যাণমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি আধুনিক মনের পরিচয় দিয়েছেন। এ কথা ভাবলে অবাক লাগে যে, পোপরা একসময় ধর্মবিরোধী কোনো কথা বললেই ফাঁসির আদেশ দিয়ে দিতেন; তেমন ধর্মযাজক হয়েও পোপ ফ্রান্সিস উদার মনের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ধর্মবিরোধী পাপ যদি কেউ করে থাকে তার বিচার করবেন ঈশ্বর, মানুষ হয়ে সেই বিচারের ভার তুমি নিজের হাতে নিতে পার না।
ভ্লাদিমির পুতিন : ২০১৭ সালে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এবার তিনি দ্বিতীয় হলেন। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এবং চতুর্থবারের মতো তা ধরে রেখেছেন। সম্ভবত মৃত্যুর আগ পর্যন্তই ধরে রাখবেন। এমনই ক্ষমতা বিস্তার করেছেন চারদিকে। তার দাপটে রাশিয়ায় কেউ একটা বাড়তি কথা বলতে পারেন না।
প্রচলিত আছে সব প্রশাসন চলে তার অঙ্গুলি হেলনে। সিরিয়ার যুদ্ধে আচমকা হস্তক্ষেপ করে তিনি পৃথিবীর বহু হিসাব উল্টেপাল্টে দিয়েছেন। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর পৃথিবী চলে গিয়েছিল একচেটিয়া মার্কিন দখলদারিত্বে। সেখান থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য আবার রাশিয়ার দিকে ফিরিয়ে আনছেন তিনি। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভক্ত। আর তা হবেই-বা না কেন? পুতিনের আমলে রাশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে কয়েক গুণ। পুতিনের আগে রাশিয়ার জিডিপি ছিল ৯ হাজার ৮৮৯ ডলার।
২০১৭ সালের মধ্যে তা তিনগুণ বেড়েছে। এখন তা ২৭ হাজার ৯০০ ডলার। সহযোগী ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার মাথাপিছু জিডিপিই সবচেয়ে বেশি। ভ্লাদিমির পুতিনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর। প্রথম জীবনে ছিলেন কেজিবির অফিসার। সেখান থেকে নানা চড়াই-উতরাই ও নাটকীয় ঘটনা পাড়ি দিয়ে ২০০০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হন। ২০০৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
এ মেয়াদ শেষ হয় ৭ মে, ২০০৮ সালে। তৃতীয় মেয়াদে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না বলে নানা ছলাকলা খেলা দেখিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদ পাকাপোক্ত করে ফেলেন।
অ্যাঙ্গেলা মেরকেল : গত বছর চতুর্থবারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হলেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ২০০৫ সাল থেকেই তিনি দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আছেন। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী। জার্মানিতে তার বিকল্পও আর কাউকে ভাবা যায় না। প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। ট্রাম্প যেখানে মুসলিমবিদ্বেষী, সেখানে তিনি মুসলমানদের বন্ধু। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন নিজের দেশে। তিনি ট্রাম্পেরও ঘোর বিরোধী। ট্রাম্পও অবশ্য তাকে দেখতে পারেন না।
বলেন, তিনি একাই নাকি ন্যাটো নিয়ন্ত্রণ করছেন। ট্রাম্প দেখতে না পারলে কী হবে। ফ্রান্সের প্রেডিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আবার তার এক নম্বর ভক্ত। পুতিনও খুব পছন্দ করেন তাকে। পুরুষদের মধ্যেও তিনি উজ্জ্বল আসন নিয়ে বসে থাকেন। অনেকেই শুনলে অবাক হবেন রাজনীতি তার জীবনের উদ্দেশ্য ছিল না, জীবনের লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেছিলেন ১৯৮৬ সালে।
১৯৮৯ সালে পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন এবং যে নতুন গণতান্ত্রিক উত্থান শুরু হলো তারই স্রোতে ভেসে গিয়ে রাজনীতির জগতে তার প্রবেশ। ১৯৯১ সালেই তিনি পরিবেশবিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে হলেন সেক্রেটারি জেনারেল। তারপর ২০০৫ সালের নির্বাচনেই জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর।
জীবন যেন তার রূপকথার মতো। অত্যন্ত ক্ষমতাবান এ নারী খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন। থাকেন নিজ বাড়িতে, বাজারে যান একা। বিয়ে করেছেন দুবার। আগের স্বামী পদার্থবিদ ছিলেন, বর্তমান স্বামী কেমিস্ট। অ্যাঙ্গেলা মেরকেল জন্মেছিলেন ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই।
জেফ বেজোস : ফোর্বস নির্বাচিত এ বছরের শ্রেষ্ঠ ৫ম প্রভাবশালী ব্যক্তিটি কোনো রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন প্রযুক্তিবিদ। তার নাম জেফরি প্রেস্টন জেফ বেজোস। প্রযুক্তির সঙ্গে যার ন্যূনতম পরিচয় আছে তার জেফ বেজোসের নাম না শোনার কথা নয়।
তিনি বিশ্ববিখ্যাত অন লাইন বইয়ের দোকান আমাজন.কমের প্রতিষ্ঠাতা। বই ছাড়াও আমাজন বিক্রি করে সিডি, গান, ভিডিও গেমস, সফটওয়্যার এবং এখন নানা ইলেকট্রনিক্স পণ্য, খেলনা থেকে শুরু করে গয়নাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছু। সারা পৃথিবীতেই রয়েছে তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য।
শুধু প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারী হিসেবেই নয়, পরিবেশবিদ, বিশ্বপ্রেমিক মানবতাবাদী হিসেবেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রযুক্তি যেন মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, বরং তা যেন কাজে লাগে এবং মানুষের উপকারে আসে, সে বিষয়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার। তিনি জন্মেছিলেন নিউ ম্যাক্সিকোর টেক্সারে, ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৮৬ সালে। কম্পিউটার সায়েন্স আর ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর দুটো ডিগ্রি নেন একই সঙ্গে। ওয়াল স্ট্রিটসহ বিভিন্ন ফার্মে কাজ করেন ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। তারপর ১৯৯৪ সালেই গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান আমাজন.কম।
ইন্টারনেট তখনো সহজলভ্য ছিল না সব দেশে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম যে-ক’জন মানুষ সফলতার চূড়ায় ওঠেন তাদের মধ্যে জেফ বেজোস একজন। এবার তিনি দেখালেন আরো এক দারুণ চমক। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটসকে পেছনে ফেলে ২০১৮ সালে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী হয়ে গেলেন!
মোহাম্মদ বিন সালমান : গত বছর থেকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান হঠাৎ করেই আলোচনায় চলে আসেন। সে বছরই ২১ জুন চাচাত ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ পদ থেকে সরিয়ে তাকে যুবরাজ হিসেবে মনোনীত করা হয়। যুবরাজ মানে তিনি পরবর্তী সৌদি বাদশা। এর আগে তিনি ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
কিন্তু আলোচনায় আসার মূল কারণ এই নয়। ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর পরই তিনি একের পর এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন। দুর্নীতিবাজদের ধরতে আটক করেন অনেক প্রিন্সকে। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেন এবং সবচেয়ে আসল কথা যা, পুরনো সৌদ-রাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে তিনি একটি আধুনিক সৌদি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান।
সৌদি রাষ্ট্রকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে তিনি ভিশন-২০৩০ নামে এক বিরাট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে তিনি একজন আধুনিক মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলেছেন। সারাবিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। গত মে মাসে হঠাৎ করে তার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক দিন তাকে লোকসম্মুখে দেখা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছিল, শত্রুরা তাকে হত্যা করে গুম করে ফেলেছে। দীর্ঘদিন পর জনসম্মুখে এসে তিনি জানান দিয়েছেন তিনি বেঁচে আছেন। ১৯৮৫ সালে জন্ম নেওয়া এই তরুণ ক্রাউন প্রিন্স এরই মধ্যে সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তার যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্তের জন্য।
নরেন্দ্র মোদি : নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ পরিবারের একজন মানুষ, ভারতীয় হিন্দুধর্মের শ্রেণি অনুযায়ী নিম্নবর্গের। তার চেয়েও বড় কথা একসময় বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে রেলস্টেশনে চা বিক্রি করেছেন। সেখান থেকে পৃথিবীর বৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাওয়া নাটকীয় উত্থানই বটে। এর আগে তিনি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী।
সাধারণ পরিবারের একজন মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে তার প্রতি মানুষের সহানুভূতি যেমন আছে আবার হিন্দু জাতীয়তাবাদী, কখনো কখনো উগ্রবাদী পরিচয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে নানা সমালোচনাও আছে।
বিশেষ করে ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলমানরা যখন অমানবিক দাঙ্গার শিকার হয়, তখন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এর জন্য তিনি প্রচুর সমালোচিত হয়েছিলেন। গুজরাটকে তিনি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ করেছিলেন। তারই মডেল বাস্তবায়ন করতে তাকে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রার্থী করা হয় এবং নিজের কিছু জাদুবলের কারণেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। অবশ্য তার বিরোধী দল কংগ্রেসের অবস্থা তখন নানা কারণেই খুব ভালো ছিল না।
মোদী ক্ষমতায় এসে সারা পৃথিবীর ক্ষমতাবান নেতাদের সঙ্গেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে নিজ দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় বেশ উন্নতিও করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গেও তার সম্পর্কটি ভালো। ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনেকটা যোগী সন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। স্ত্রী থেকেও নেই। তার যে একজন স্ত্রী আছেন, এটা তিনি স্বীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর।
বিল গেটস : বিল গেটস এবার বিশ্বের ৭ম প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন। বিল গেটসের কথা আর নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। ১৩ বছর ধরে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ছিলেন। এ বছর তিনি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের কাছে হেরে গেলেন। বিল গেটস মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং সফটওয়্যার নির্মাতা। বর্তমানে তার অর্থের পরিমাণ ৯৭.৬ বিলিয়ন ডলার।
তিনি জন্মেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরে, ২৮ অক্টোবর ১৯৫৫ সালে। স্কুলজীবন থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তখনই কিছু প্রোগ্রাম বানিয়ে ফেলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বন্ধু পল অ্যালনের সঙ্গে মাইক্রোসফটের অফিস খোলেন।
১৯৮৫ সালে বিল গেটস উইনডোস ১.০ বাজারে ছাড়েন। তারপর বছর বছর উইনডোসের একেকটি ভার্সন বাজারে ছাড়েন আর সারা পৃথিবী থেকেই কামিয়ে নিতে থাকেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সারা বিশ্বে যে-ই কম্পিউটার ব্যবহার করেছে বিল গেটস তার কাছ থেকেই টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। যেমন টাকা কামিয়েছেন তেমন দু’হাতে দানও করেছেন সারাবিশ্বে। স্ত্রী মেলিন্ডাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। শিক্ষা-চিকিৎসায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
বিশ্বের যেখানেই মানবতার বিপর্যয় এসেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন সেখানেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের। তাদের দুই মেয়ে এবং একটি ছেলে। বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার করে রেখে আর নিজেদের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার রেখে বাকি অর্থই বিলিয়ে দেবেন মানবকল্যাণে।
ল্যারি পেইজ : ল্যারি পেইজের নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত লাগতে পারে। কারণ তিনি নিজেই থাকেন আড়ালে। অন্তর্মুখী এ মানুষটি ব্যক্তিগত ক্যারিবিয়ান দ্বীপে নিজের মতো সময় কাটাতে ভালোবাসেন। এ বছরই সেপ্টেম্বর মাসে খবর ছড়িয়েছিল ল্যারি পেইজের রহস্যময় অন্তর্ধান। তারপরও ফোর্বস কেন তাকে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় ১০ নম্বরে রাখল?
কারণ তিনি গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান আলফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী অফিসার। মজার ব্যাপার, নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বেতন নেন মাত্র ১ ডলার। ১ ডলার বেতন নেওয়া অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের একটা সামাজিক নীতি, সরকার ও জনসাধারণকে সহযোগিতা করতে এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর।
এ রকম আরো অনেকেই নেন। ১ ডলার বেতন নিলেও তার বর্তমান সম্পদ প্রায় ৫৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ল্যারি পেইজের জন্ম মিশিগানে ১৯৭৩ সালের ২৬ মে মার্চ। পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। তিনি বর্তমান পৃথিবীর অত্যন্ত স্বনামধন্য একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তা। নিজের সব শ্রম-অর্থ-মেধা এখন ব্যয় করছেন মানবসেবায়।
১৯৯৮ সালে পেইজ বন্ধু সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে গড়ে তোলেন সার্চ ইঞ্জিন গুগল। যা বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। ইন্টারনেটে আপনি কোনো কিছু খুঁজবেন মানেই ল্যারি পেইজের জগতে প্রবেশ করবেন।
২০০৭ সালে তিনি বিয়ে করেন বান্ধবী লুসিন্ডা সাউথওয়ার্থকে। এক সন্তানের জনক ল্যারি পেইজ নিজেকে একজন সুখী ও সফল মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :