• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ বছর ধরে শিক্ষককতা করা আবুল কালাম এখন অটোরিকশা চালক


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জুন ১৬, ২০২০, ০৬:৫৩ পিএম
২৯ বছর ধরে শিক্ষককতা করা আবুল কালাম এখন অটোরিকশা চালক

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ: মো. আবুল কালাম আজাদ ৬৫ বছর বয়সী একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি আয়েশি জীবন কাটানোর প্রত্যাশা করেননি কখনও। শুধু জীবনের শেষ কটা দিন দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, করোনাভাইরাসের মহামারি তার সেই চাওয়া পূরণ হতে দেয়নি।

এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৯৮১ সালে ইংরেজির সহকারী শিক্ষক হিসেবে আমি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার জুলিকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেই। সেখানে ২৯ বছর শিক্ষকতা করে ২০১০ সালে অবসর নিয়েছি।’

জানা গেছে, তিনি অবসর নেওয়ার পরে এমপিও এর জন্য তার স্কুলটি তালিকাভুক্ত হয়। যদি আগে হতো তাহলে তিনি কিছুটা ভালো বেতন পেতেন এবং আরও ভালো পরিমাণে ভাতা নিয়ে অবসরে যেতে পারতেন। তিনি যখন অবসর নেন তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে এককালীন ২ লাখ ৮৭ হাজার দেয়।

তিনি বলেন, পুরো টাকাটা পরিবারের পেছনে খরচ হয়ে গেছে। আমার কাছে জমানো আর কিছুই নেই।

অবসর নেওয়ার পর তিনি তার পাঁচ ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার সুবিধার কথা ভেবে সরিষাবাড়ি ছেড়ে ময়মনসিংহ শহরে চলে আসেন। শহরের বাগমারা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে উঠেন তিনি। তার দুই মেয়ে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করে এখন পরিবারের সঙ্গেই থাকেন। তিন ছেলের মধ্যে একজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অন্য দুজন সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

পরিবার চালাতে আবুল কালাম আজাদ গৃহশিক্ষকতা করতেন। এভাবে মাসে আয় হতো প্রায় ১০ হাজার টাকা। তার ছেলেরা নিজেদের পড়াশুনার খরচ চালাতে গৃহশিক্ষকতা করতেন। ফলে সামান্য আয় দিয়েই সংসার খরচ চলে যেত। কিন্তু মহামারির আঘাতে সব ওলট-পালট হয়ে গেছে তার। তাদের সবার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন কেউই ছিল না যে তাদের সাহায্য করতে পারে। ঈদের পরে তিনি তিন ছেলেসহ ঢাকায় আসেন ভাগ্য বদলের চেষ্টায়। কিন্তু সফল হননি।

তাদের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বাধ্য হন ৬৫ বছর বয়সেও শহরের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে। ভাড়া বাসা ছেড়ে শহরের কেওয়াটখালীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যেতে হয় তার পুরো পরিবারকে। গত শুক্রবার দুপুরে তার সঙ্গে যখন যোগাযোগ হয় তখন তিনি অটোরিকশা নিয়ে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, জমার টাকা দেওয়ার পর প্রতিদিন আমার ২০০ টাকার মতো থাকে। খারাপ না, তবে বয়সের কারণে প্রতিদিন চালাতে পারি না।

এদিকে, পরিবারটির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে সম্প্রতি তাদের বাড়িতে যান ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা করেন। পরিবারটি যাতে নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করতে পারে সেজন্য ইউএনও তাদের একটি সেলাই মেশিন দেন। এছাড়াও, তার মেয়েদের অন্তত একজনের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

অপরদিকে, ইউএনওর নেওয়া এমন দ্রুত উদ্যোগের প্রশংসা করে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলন ময়মনসিংহ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এমন কর্মকাণ্ড অবশ্যই অন্যদের করোনাভাইরাস মহামারিতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আবুল কালাম আজাদের মতো মানুষদের সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

সবার কাছে দোয়া চেয়ে আজাদ বলেন, তিনি তার ছেলেদের পড়াশুনা শেষ করানোর চেষ্টা করছেন। যাতে তারা সুন্দর জীবন গড়তে পারে। তাদের যেন দারিদ্র্যের কবলে পড়তে না হয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!